ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৮ মিনিট আগে
শিরোনাম

রূপগঞ্জে করোনার উপসর্গ নিয়ে ৮ জনের মৃত্যু, জনমনে আতঙ্ক

  রূপগঞ্জ প্রতিনিধি

প্রকাশ : ১২ এপ্রিল ২০২০, ২২:৪৩

রূপগঞ্জে করোনার উপসর্গ নিয়ে ৮ জনের মৃত্যু, জনমনে আতঙ্ক
প্রতীকী ছবি

দেশে মহামারি করোনাভাইরাস শনাক্তের পর গত ২৮ মার্চ থেকে ১২ এপ্রিল (রোববার) অবধি নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলায় করোনার উপসর্গ নিয়ে মোট ৮ নারী-পুরুষ মারা গেছেন। মৃত পরিবারগুলোতে নেই বাড়তি সতর্কতা। দায়িত্বশীল মহল অনেকটা আড়ালে থাকছেন উপসর্গকে কেন্দ্র করে মৃত্যুর ঘটনায়। এ কারণে রূপগঞ্জে করোনাভাইসারে মহামারির আশঙ্কা তৈরি হচ্ছে বলে অনেকেই জানান।

তথ্যানুসারে, গত ২৮ মার্চ করোনাভাইরাসের উপসর্গ নিয়ে রূপগঞ্জ উপজেলার কাঞ্চন পৌরসভার চরপাড়া এলাকার সাহাজউদ্দিন দেওয়ানের ছেলে ইতালিফেরত প্রবাসী মোতালেব দেওয়ান (৪৮) মারা যান। তিনি শ্বাসকষ্ট ও জ্বর ঠাণ্ডায় আক্রান্ত ছিলেন। পরিবারের সদস্যরা তাকে কিডনি রোগে আক্রান্ত দাবি করে সেদিনই দাফন সম্পন্ন করে ফেলে।

৩০ মার্চ রাজধানীর কুর্মিটোলা হাসপাতালে মারা যান উপজেলার কায়েতপাড়া ইউনিয়নের চনপাড়া প‚র্নবাসন কেন্দ্রের ৮ নং ওয়ার্ডের মৃত মজিবর রহমান পেদার ছেলে হাবিবুর রহমান পেদা (৫৫)। তাকে আঞ্জুমানের লোকজন আক্রান্ত নিয়মে সাধারণজনদের অনুপস্থিতিতে দাফন করেন।

৭ এপ্রিল দাউদপুর ইউনিয়নের পুটিনা দক্ষিপাড়া এলাকার সালমান (৪০) একই উপসর্গ নিয়ে মারা যান। তিনি নবমুসলিম ছিলেন বলে পারিবারিক সূত্রে জানা যায়।

তিনি চাঁদপুর পুরানবাজার এলাকার চিত্তরঞ্জনের ছেলে। তার সাবেক নাম দিপক চন্দ্র দাস। সে ১৫ বছর যাবত দাউদপুরে বসবাস করতেন। তাকেও স্বাভাবিক নিয়মে দাফন করা হয়।

৮ মার্চ কাঞ্চন পৌরসভার আফরের টেক এলাকার আব্দুল্লাহর স্ত্রী আছমা (২২) প্রচণ্ড জ্বর ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে হাসপাতালে যাবার পথে মারা যান। পরে পরিবারের লোকজন মৃতদেহ ফিরিয়ে এনে স্বাভাবিক নিয়মেই দাফন করেন। একই দিন কাঞ্চন মায়ারবাদি বাইপাস সড়কের পাশে শ্বাস-প্রশ্বাস বেড়ে মারা যায় ভোলাব ইউনিয়নের আলাপুর এলাকার মোহাম্মদ আলীর মাসনিক প্রতিবন্ধী মেয়ে গোলনাহারের।

৯ মার্চ করোনার উপসর্গ নিয়ে মারা যান রূপগঞ্জ সদর ইউনিয়নের আলমপুরা গ্রামের আমীর আলীর স্ত্রী আলাতুন নেছা (৪৯)। শ্বাসকষ্ট ও ঠাণ্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত ছিলেন তিনি। তবে নিহতের ছেলে আল-আমিনের দাবি, তার মা অতিরিক্ত ধুমপান করতো বলে শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত হয়।

গতকাল ১০ এপ্রিল বিকেলে কাঞ্চন পৌরসভার কালাদী বড়বাড়ি গ্রামের আব্দুল মজিদের ছেলে ওসমান মিয়া (৪৬) জ্বর ও শ্বাসকষ্ট ও ঠাণ্ডাজনিত রোগে মৃত্যুবরণ করেন। তাকেও পরিবারের লোকজন স্বাভাবিক নিয়মে দাফন করেছে।

সর্বশেষ ১১ এপ্রিল ভোররাতে প্রচণ্ড শ্বাসকষ্ট, জ্বর ও ঠাণ্ডা-কাশিতে আক্রান্ত হয়ে মারা যান আব্দুল জলিল প্রধান (৫৫)। তিনি তারাবো পৌরসভার রূপসী প্রধানবাড়ি এলাকার মৃত কুদরত আলী প্রধানের ছেলে। পরিবারের লোকজন মৃত্যুর ৪ ঘণ্টার মধ্যে লাশ দাফন করে ফেলে।

৮ জন নারী পুরুষের করোনার মৃত্যুর সংবাদ স্থানীয় গণমাধ্যেমকর্মী বা অন্য মাধ্যেমে দায়িত্বপ্রাপ্ত লোকজন জানতে পারলেও তারা গ্রহণ করেনি কোন পদক্ষেপ। পরিবারের সদস্যদের নেয়া হয়নি আইসোলেশনের অধীনে। কিংবা মৃতজনের নমুনা সংগ্রহ করে পাঠানো হয়নি আইইসিডিআরএ। এ কারণে জানাও যাচ্ছে না মৃত ব্যক্তি করোনা আক্রান্ত ছিলেন কি-না।

অপরদিকে পরিবারগুলোর খোলামেলা চলাফেরার কারণে বাড়ছে আক্রান্তের ঝুঁকি। এসব মৃত্যুকে কেন্দ্র করে রূপগঞ্জ উপজেলা জুড়ে মহামারীর আশংকাও করছেন অনেকে।

এ ব্যাপারে রূপগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সাঈদ আল মামুন জানান, সবগুলো মৃত্যুর সংবাদ আমরা জানি। তবে করোনার উপসর্গ সবার ছিল না। কেউ কেউ সাধারণ ফ্লুতে বা অন্য রোগেও আক্রান্ত ছিলেন। আর নমুনা সংগ্রহের ব্যাপারে আমরা আইডিসিআরের সাথে কথা বলে সাড়া পাইনি বিধায় লোকাল অথরিটির অনুমতিতে তাদের দাফনের ব্যবস্থা করেছি।

তিনি বলেন, মৃত পরিবারগুলোর সদস্যদের স্যাম্পল কালেকশন করা হচ্ছে। তাদের রিপোর্ট এখনো হাতে আসেনি। রিপোর্ট আসলে বোঝা যাবে মৃত ব্যক্তিগণ অথবা তাদের পরিবারের কোন সদস্য করোনাভাইরাসে আক্রান্ত কি-না।

বাংলাদেশ জার্নাল/এসকে

  • সর্বশেষ
  • পঠিত