বুড়িগঙ্গায় নৌ দুর্ঘটনা: মন্ত্রণালয়ের ২০ দফা সুপারিশ
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৭ জুলাই ২০২০, ১৩:১৩ আপডেট : ০৭ জুলাই ২০২০, ১৫:৪৬
সম্প্রতি বুড়িগঙ্গায় লঞ্চডুবির ঘটনায় ২০ দফা সুপারিশমালা প্রণয়ন করেছে নৌ মন্ত্রণালয়। মঙ্গলবার দুপুরে সচিবালয়ের সভাকক্ষে এই সুপারিশমালা তুলে ধরেন নৌ সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী। এ সময় উপস্থিত ছিলেন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী।
সুপারিশমালা সমুহ হলো:
১) সদরঘাট হতে ভাটিতে ৭/৮ কিলোমিটার এবং উজানে ৩/৪ কিলোমিটার অংশে অলস বার্দিং উঠিয়ে দিতে হবে।
২) সদরঘাট টার্মিনালের আসে পাশে কোন খেয়া ঘাট রাখা যাবে না। ওয়াইজঘাটের উজানে খেয়াঘাট স্থানান্তর করা হবে।
৩) লঞ্চের সামনে, পেছনে মাস্টার ব্রীজ, ইঞ্জিন রুম এবং ডেকে সিসি টিভি ক্যামেরা বসাতে হবে। মাস্টারের দেখার সুবিধার্তে ব্যাক ক্যামেরা ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। এছাড়া লঞ্চেও পর্যায়ক্রমে ওয়াকি টকি সিস্টেম চালু করা হবে।
৪) লঞ্চ বা জাহাজ ঘাট ত্যাগ করার আগে ঘাটে ভয়েস ডিক্লিয়ারেশন দাখিল বাধ্যতামুলক করা হবে। লঞ্চে কতজন যাত্রী বহন করা হচ্ছে, ডেক সাইটে এবং ইঞ্জিনে কারা কারা কর্মরত আছে তা ভয়েস ডিক্লিয়ারেশনে উল্লেখ করতে হবে।
৫) ফিটনেসবিহীন লঞ্চ চলাচল বন্ধ করতে হবে। প্রত্যেক লঞ্চে জীবন রক্ষাকারী লাইফ জ্যাকেট এবং বয়া রাখতে হবে।
৬) সকল নদী পথে নৌযানের স্পিড লিমিট নির্ধারণ করে দিতে হবে। সদরঘাটে স্পিড কন্ট্রোলের জন্য টাওয়ার স্থাপন এবং সিসি টিভি ক্যামেরা স্থাপন করতে হবে।
৭) লঞ্চে মেকানিক্যাল স্টিয়ারিংয়ের পরিবর্তে ইলেট্রো হাইড্রোলিক স্টিয়ারিং প্রবর্তন করার উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।
৮) যাত্রীবাহী লঞ্চে মেইন ইঞ্জিনস লোকাল সিস্টেমের পরিবর্তে ব্রিজ কন্ট্রোল সিস্টেম পর্যায়ক্রমে চালুর কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
৯) সানকিন ডেক লঞ্চ পর্যায়ক্রমে উঠিয়ে দিতে হবে। প্রশস্ত ও ব্যস্ত নদীতে এগুলো চলাচল কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। প্রশস্ত ও ব্যস্ত নদীতে যথাযথ সনদধারী মাস্টার ও ড্রাইভার ছাড়া নৌযান পরিচালনা করা যাবে না। এক্ষেত্রে ডিসপেনসেশন সনদ গ্রহণের প্রথা বাতিল করতে হবে।
১০) যাত্রীদের নিরাপত্তার জন্যে বিশেষ করে শিশু নারী ও বয়স্কদের ওঠা নামার সুবিধার্তে গ্যাংওয়ে বা ব্রিজ স্থাপন করতে হবে।
১১) সদরঘাটে পল্টুনের সংখ্যা বৃদ্ধি করতে হবে।
১২) সার্ভের মধ্যবর্তী সময়ে নৌ যানের নিরাপত্তা সরঞ্জাম ও অনান্য বিষয় পরিদর্শন করার নিমিত্ত পরিদর্শকদের পরিদর্শন কার্যক্রম আরও জোরদার এবং নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও মোবাইল কোর্টের কার্যক্রম বৃদ্ধি করতে হবে।
১৩) উৎসবসহ সকল সময়ের জন্য প্রত্যেক লঞ্চে ধারণ ক্ষমতার অতিরিক্ত টিকিট বিক্রি বন্ধ করতে হবে। টিকিট প্রদর্শন ব্যতিরেকে কোন যাত্রীকে লঞ্চে উঠতে দেয়া যাবে না। অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহণের সুযোগ বন্ধ করার কেবিন সংখ্যা ডেক যাত্রীর সংখ্যা নির্ধারণ করে দিয়ে এ সকল টিকিট অনলাইনে বিক্রির ব্যবস্থা করা যেতে পারে।
১৪) নৌ আইন অমান্যকারীদের শাস্তির মেয়াদ ও জরিমানার পরিমাণ যুগোপযোগী করে আইন সংশোধনের উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।
১৫) নৌ কর্মীদের প্রশিক্ষণ ফলপ্রসু করার জন্য বিআইডাব্লিউটিএকে আরও কার্যকর ভূমিকা পালন করতে হবে। নৌযানের ফিটনেস ও নৌ কর্মীদের যোগ্যতা সনদ ইস্যুতে নৌ পরিবহন অধিদপ্তরকে আরো কঠোর ভূমিকা পালন করতে হবে। সার্ভে সনদ প্রদানকারী সংস্থা নৌ পরিবহন অধিদপ্তরের সার্ভেয়ারের সংখ্যা ও লজিস্টিক সাপোর্ট বৃদ্ধি করতে হবে।
১৬) ডেক এন্ড ইঞ্জিন প্রোফেশনাল ট্রেনিং সেন্টারের সংখ্যা বৃদ্ধি করতে হবে। দেশে বর্তমান প্রায় ১৪ হাজার রেজিস্ট্রিকৃত জাহাজ ছাড়াও আরও অরেজিস্ট্রিকৃত অসংখ্য জাহাজ রয়েছে। এসকল জাহাজে গড়ে কমপক্ষে ২ জন মাস্টার এবং ২ জন ইঞ্জিনচালক নিয়োগ করতে হলে প্রায় ৫৬ হাজার প্রশিক্ষিত জনবল দরকার। দেশে অসংখ্য শিক্ষিত বেকার ছেলে মেয়ে রয়েছে। তাদের প্রশিক্ষণ দিয়ে জাহজে নিয়োগ করতে পারলে দুর্ঘটনা কিছুটা লাঘব হতে পারে। এসকল প্রতিষ্ঠানসমুহকে আরো ভিজিবল করতে হবে এবং প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা আরো বৃদ্ধি করতে হবে।
১৭) নৌ দুর্ঘটনার কারণ উদঘাটনের লক্ষ্যে দায়ী মাস্টার, ইঞ্জিন ড্রইভারদের সাথে সাথে গ্রেপ্তারের ব্যবস্থা করতে হবে। নৌ দুর্ঘটনা এবং নৌযান সংক্রান্ত অপরাধের নিয়ন্ত্রণ, প্রতিরোধ এবং আসামি গ্রেপ্তারের জন্য সদরঘাটে কর্মরত নৌ পুলিশের সংখ্যা ৯ জন থেকে বৃদ্ধি করে কমপক্ষে ২৫ জন করতে হবে।
১৮) নৌযান এবং নৌ কর্মীদের চলাচল জানার জন্য এবং অবস্থান নিশ্চিতের নৌযান ও কর্মীদের ডাটাবেজ তৈরি এবং ট্রাকিং সিস্টেম চালুর উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।
১৯) নৌ ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা আধুনিকায়ন করতে হবে। দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কর্মচারীকে যথাযথ লজিস্টিক সুবিধা প্রদান করতে হবে। সার্চ এন্ড রিসার্চ প্লান প্রণয়ন করতে হবে।
২০) নৌ দুর্ঘটনা গবেষণার বিষয়ে একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করা যেতে পারে।
বাংলাদেশ জার্নাল/কেআই