ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১৩ মিনিট আগে
শিরোনাম

শেষবারের মতো মা-বোনের মুখটা দেখতে চান এজাজ

  ধামরাই (ঢাকা) প্রতিনিধি

প্রকাশ : ৩১ আগস্ট ২০২০, ১৫:২৭

শেষবারের মতো মা-বোনের মুখটা দেখতে চান এজাজ

জীবিকার তাগিদে ২৫ বছর আগে কুয়েত গিয়েছিলেন ঢাকার ধামরাই উপজেলার মমতা বেগম। দুই বছর আগে মেয়ে স্বর্ণলতাকেও নিয়ে যান তার কাছে। কুয়েতে তাদের হত্যার খবর গত শুক্রবার রাতে জানতে পারেন বাংলাদেশে অবস্থানরত মমতা বেগমের ছেলে এজাজ আহমেদ। এ হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু বিচার দাবি করেছেন তিনি।

সোমবার ধামরাই পৌর এলাকার তালতলা মহল্লার প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মান্নান শিকদারের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, মা-বোনকে হারিয়ে বাকরুদ্ধ পরিবারের একমাত্র জীবিত সদস্য এজাজ। শেষবারের মতো প্রয়াত প্রিয়জনের মুখ দেখার অপেক্ষায় প্রহর গুনছেন তিনি।

নিহত মমতা বেগমের একমাত্র ছেলে এজাজ জানান, পরিবারে স্বচ্ছলতা ফেরাতে ২৫ বছর আগে তার মা পাড়ি জমিয়েছিলেন বিদেশে। পরে নিজ যোগ্যতায় কুয়েতের একটি কোম্পানিতে চাকরি পেয়েছিলেন তিনি। দুই বছর আগে একমাত্র বোন স্বর্ণলতার স্নাতক শেষ হওয়ার পর কুয়েতে নিয়ে যান তার মা।

স্বর্ণলতাও সেখানে মায়ের সাথে একই প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতেন। গত মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর থেকে মা-বোনের মোবাইল ফোন বন্ধ পান এজাজ। শুক্রবার রাতে খবর আসে কুয়েতে তার মা ও বোন যে বাসায় থাকতেন, সেই বাসা থেকে তাদের রক্তাক্ত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ।

তিনি আরো জানান, দেশে পাঠানোর জন্য তার মা ১০ লাখ টাকা কুয়েতের বাসায় রেখেছিলেন বলে তাকে জানিয়েছিলেন। গত মঙ্গলবার সেই টাকা পাঠানোর কথা থাকলেও তা আর পাঠাননি। এছাড়া গত শুক্রবার পারিবারিকভাবে কুয়েত প্রবাসী কুমিল্লার ছেলে রফিকুল ইসলামের সঙ্গে সেখানেই তার বোনের বিয়ে হওয়ার কথা ছিল। তার মা কুয়েতের একটি ব্যাংক থেকে মঙ্গলবার ১০ লক্ষ টাকা উঠান। তখন শেষবারের মতো মায়ের সাথে কথা হয় এজাজ শিকদারের। তারপর থেকে তার মা ও বোনের ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। পরে তাদের ঘর থেকে চারদিন পর কুয়েত পুলিশ রক্তাক্ত মৃতদেহ উদ্ধার করে।

কুয়েতে নিযুক্ত বাংলাদেশে রাষ্ট্রদূতের মাধ্যমে এজাজ আহমেদ জানতে পেরেছেন, ওই বাসায় দুর্বৃত্তরা লুটপাট করেছে। তার ধারণা, টাকা ও মূল্যবান জিনিসপত্রের লোভে পরিচিতজনরাই তার মা-বোনকে হত্যা করেছে।

ধামরাই থানার পরিদর্শক দীপক চন্দ্র সাহা বলেন, ‘মমতা বেগম ও স্বর্ণলতা হত্যার ঘটনায় কুয়েতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে আমার মুঠোফোনে কথা হয়েছে। তাদের মরদেহ দ্রুত দেশে আনার চেষ্টা করা হচ্ছে। আমরা সার্বক্ষণিক নিহতের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি।’

প্রসঙ্গত, গত শুক্রবার আরব টাইমস পত্রিকার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, কুয়েতের আল সুখা এলাকায় নিজ বাসা থেকে দুই প্রবাসী নারীর রক্তাক্ত মৃতদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় পুলিশ একটি হত্যা মামলা রেকর্ড করেছে।

এলাকাবাসী বলেন, প্রয়াত বীরমুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মান্নান সিকদার প্রায় ১৫ বছর আগে মানিকগঞ্জ জেলার হরিরামপুর থানার সুলতানপুর এলাকা থেকে ধামরাই পৌরসভার তালতলা এলাকায় বসতি স্থাপন করেছিলেন। বাবা অনেক আগেই মারা গেছেন। দেশে একমাত্র ভাই ব্যবসায়ী এজাজ স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে তালতলার বাসায় থাকেন।

সরকারের কাছে এজাজ দাবি জানান, প্রিয়জনদের মুখ শেষবারের জন্য হলেও যেন দেখতে পারেন এবং তার মা ও বোনের খুনিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হয়।

বাংলাদেশ জার্নাল/এসকে

  • সর্বশেষ
  • পঠিত