ঢাকা, সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : কিছুক্ষণ আগে
শিরোনাম

আকাশে ওড়ে সালাউদ্দিনের বৈমানিক হওয়ার স্বপ্ন

  ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি

প্রকাশ : ০৫ জানুয়ারি ২০২১, ১৫:১৮  
আপডেট :
 ০৫ জানুয়ারি ২০২১, ১৫:৩৪

আকাশে ওড়ে সালাউদ্দিনের বৈমানিক হওয়ার স্বপ্ন
আকাশে উড়ে সালাহউদ্দিনের স্বপ্ন

স্বপ্নহীন কেউ না। সবাই স্বপ্ন দেখে ছোট বা বড়। ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, উকিল, মহাকাশ গবেষক, শিক্ষক বা বৈমানিক হওয়ার মতো স্বপ্ন দেখে থাকে মানুষ। কিন্তু স্বপ্ন বাস্তবায়ন করাটাই কঠিন। কঠিন এক স্বপ্ন সীমিত আকারে বাস্তবায়ন করেছেন বশেমুরবিপ্রবি শিক্ষার্থী সালাউদ্দিন জনি।

স্বপ্ন ছিলো তার বৈমানিক হওয়া। বৈমানিক হতে না পারলেও বানিয়েছেন একটি ছোট বিমান। এক সাক্ষাৎকারে তিনি জানান তার স্বপ্নের কথা ও বিমান তৈরির গল্প।

সালাউদ্দীন মাধ্যমিকে পড়ার সময় মাঝে মাঝে দূর আকাশে চেয়ে থাকতো বিমান দেখার অপেক্ষায়। ছোট থেকে ভাবতো কীভাবে বিমানের পাইলট হতে পারবে। ঠাকুরগাঁও জেলার রানীশংকৈল উপজেলার বলিদ্বাড়া গ্রামের দরিদ্র কৃষক পরিবারে বেড়ে ওঠা সালাউদ্দিন জনির স্বপ্ন থেমে থাকেনি।

কলেজের গণ্ডি পার করে ভর্তি হয় গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি বিভাগে। কৃষি বিভাগের ছাত্র হয়ে বিজ্ঞান বিষয়ে বেশি আগ্রহ থাকায় বন্ধু-বান্ধবীরা তাকে নিয়ে হাসি ঠাট্টা করতো।

আকাশে উড়ে সালাহউদ্দিনের স্বপ্ন

বিশ্ববিদ্যালয়ে কৃষি বিভাগে অধ্যয়ন করলেও কৃষি বিষয়ের চেয়ে তাকে মনুষ্য বিহীন বিমানের বিভিন্ন বিষয়গুলো প্রচুরভাবে টানত। কয়েকজন বিজ্ঞানমনস্ক বন্ধুদের নিয়ে প্রতিষ্ঠাতা করেন বশেমুরবিপ্রবি বিজ্ঞান ক্লাব। শুরু করেন ড্রোন বানানোর কাজ।

গবেষণার শুরুর দিকে তিনি একটি ড্রোন তৈরি করেন যার ওজন ছিলো পাঁচ কেজি ও লম্বায় ছিলো ৫ ফুট এটি সর্বোচ্চ ৪ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে ১ হাজার ফুট উচ্চতায় পঁয়ত্রিশ মিনিট ধরে উঠতে সক্ষম হয়েছিলো।

এর ধারাবাহিকতায় স্বপ্ন বাস্তবায়নের প্রচেষ্টায় বাঁশ, কাঠ, কর্কশীট, ফোমশীট ব্যবহার করে ছোট আকারের ড্রোন বানানোর চেষ্টা করে এবং দীর্ঘ প্রচেষ্টার পরে আড়াই বছরের মাথাই সফলভাবে একটি ড্রোন বানাতে পারেন। যার ওজন ১ কেজি। পরীক্ষামূলক এই ড্রোনটি পাঁচ কিলোমিটার নিয়ন্ত্রণ রেখার ভিতরে সর্বোচ্চ ৩ হাজার ফুট উচ্চতায় এবং ১০০ কিলোমিটার গতিতে ২০ মিনিট উড্ডয়ন করতে পারে।

ড্রোনটি ভবিষ্যতে যে সকল কার্যক্রম করতে সক্ষম হবে সেগুলো হলো কৃষি কাজে কীটনাশক ছিটানো, সিড বপন, কৃষি রোগ শনাক্তকরণ এবং কৃষি ভূমি পর্যবেক্ষণ, ফটোগ্রাফি এবং ভিডিওগ্রাফি, জরুরি পণ্য পরিবহন (মেডিসিন এবং পার্সেল), পুলিশ ড্রোন।

প্রত্যন্ত গ্রাম অঞ্চলের সালাউদ্দীন বিমান আবিষ্কার করেছে, এমন প্রদর্শন দেখে অভিভূত-বিস্মিত ও আশ্চর্যিত হয়েছে জেলার মানুষ। তার ইনোভেশন এবং আবিষ্কার গর্বের বিষয়। সরকার যদি তাকে তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহারে সাহায্য সহযোগিতা করে তাহলে সে আরো বড় ধরণের কিছু আবিষ্কার করে দেশের জন্য গর্ব বয়ে আনবে বলে মনে করেন অনেকে।

আকাশে উড়ে সালাহউদ্দিনের বৈমানিক হওয়ার স্বপ্ন ও ড্রোন

সালাউদ্দীন জনি বলেন, 'আমি স্বপ্ন দেখি বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের বাংলাদেশের যেখানে এ দেশের ছেলে-মেয়েরাই অত্যাধুনিক প্রজন্মের বিমান তৈরি করবে এবং বৈশ্বিক বিমান শিল্পে নেতৃত্ব দেবে'।

তিনি আর্থিক সমস্যা থাকায় প্রজেক্ট নিয়ে ঠিকভাবে কাজ করতে পারছেন না।সহযোগিতা পেলে ভালো কিছু করবেন। এজন্য, সরকার ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।

ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসককে কৃতজ্ঞতা জানিয়ে, সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা পেলে ও সম্প্রতি চালুকৃত বঙ্গবন্ধু অ্যারোস্পেস এন্ড অ্যারোনোটিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে তরুণদের পড়ার সুযোগ করে দিলে আগামীতে, যে প্রযুক্তির বিমান গুলো তৈরি করা হবে সেগুলো দেশের তরুণরাই তৈরি করতে সক্ষম হবে বলে মনে করেন, বিমান আকৃতির ড্রোন আবিষ্কারক তরুণ সালাউদ্দীন জনি।

ইচ্ছা শক্তি থাকলে একজন মানুষের পক্ষে অনেক কিছুই করা সম্ভব। এটা একটা তারই নজির। প্রথম অবস্থায় কারো কোন সহযোগিতা ছাড়াই দৃঢ় ও বিস্ময়কর কাজটি করতে সক্ষম হয়েছে সালাউদ্দীন। তা জেলা প্রশাসক হিসেবে দেখেছি। ইতিমধ্যে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাকে কিছুটা সহায়তা করা হয়েছে। এ বিষয়ে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ে একটি প্রতিবেদন পাঠানো হবে। সেখান থেকে যদি সালাউদ্দীনকে সার্বিকভাবে সহযোগিতা করা হয় তাহলে দেশ ও জাতি তার কাছ থেকে অনেক ভালো কিছু পেতে পারে বলে জানিয়েছেন ঠাকুরগাঁওয়ের জেলা প্রশাসক ড. কে এম কামরুজ্জামান সেলিম।

আকাশে উড়ে সালাহউদ্দিনের স্বপ্ন

পড়ার বিষয় কোনো কিছু হওয়ার অন্তরায় না। তা প্রমাণ করেছেন জনি। একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে কৃষি বিষয় নিয়ে পড়েও যে স্বপ্ন সীমিত আকারে বাস্তবায়ন করা যায় তা দেখিয়েছেন। বাঁশ, কাঠ, কর্কশীট, ফোমশীট ব্যবহার করে ও যে ড্রোন তৈরি করা যায় তা দেখিয়েছেন জনি।

বিমান অনেকেই বানাতে পারে। কিন্তু উড্ডয়ন করার ক্ষমতা রাখে কয়জন? সালাউদ্দিন জনির মতো স্বপ্ন সকলের বাস্তবায়ন হোক এটাই প্রত্যাশা।

বাংলাদেশ জার্নালে/এনকে

  • সর্বশেষ
  • পঠিত