ঢাকা, সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : কিছুক্ষণ আগে
শিরোনাম

যে বাজারে প্রতিদিন বেচাকেনা হয় কোটি টাকার মাছ

  কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি

প্রকাশ : ১৮ জানুয়ারি ২০২১, ২০:৩৮

যে বাজারে প্রতিদিন বেচাকেনা হয় কোটি টাকার মাছ
মিঠাপানির তরতাজা মাছ নিয়ে বিক্রি হয় এই বাজারে

কিশোরগঞ্জের হাওরের মিঠাপানির মাছের সুখ্যাতি রয়েছে দেশজুড়ে। প্রায় দেড়শ বছর ধরে জেলার করিমগঞ্জ উপজেলার বালিখোলা মাছ বাজারে কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোনা ও সুনামগঞ্জ হাওরের কিছু অংশের মাছ বেচাকেনা হয়। প্রতিদিন ক্রেতা-বিক্রেতাদের হাঁকডাকে সরগরম থাকে বালিখোলা মাছ বাজার। সকাল ৬টা থেকে ১০টা পর্যন্ত চলে পুরোদমে কেনাবেচা। এরপর আড়তদাররা মাছ ট্রাকযোগে ঢাকা, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন স্থানে পাঠান।

করিমগঞ্জ উপজেলার ধনু নদীর তীরে অবস্থিত এই পাইকারি মাছ বাজারে নেত্রকোনা ও সুনামগঞ্জ হাওরের মাছ বিক্রি হয়। দূর-দূরান্ত থেকে ক্রেতারা আসেন মাছ কিনতে। প্রতিদিন এখানে কোটি টাকার মাছ বেচাকেনা হয়। ভোরের আলো ফোটার আগেই ধনু নদীর তীরে নৌকা বোঝাই করে মিঠাপানির তরতাজা মাছ নিয়ে বিক্রেতারা আসেন বালিখোলা বাজারে। পাইকারি এ মাছের বাজারে পাওয়া যায় রুই, কাতল, বোয়াল, চিংড়িসহ নানা জাতের মাছ। তবে এখন হাওরে পানি বেশি থাকায় মাছের সরবরাহ কিছুটা কম। দামও অনেকটা চড়া। প্রতিযোগিতামূলক দরদামে জেলে থেকে শুরু করে ফিশারির মালিকদের কাছ থেকে মাছ কিনেন পাইকাররা। এরপর সেগুলো চলে যায় ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে।

মাছ বিক্রেতা ও জেলেরা জানান, হাওরের মিঠা পানির নানান জাতের মাছ জালে ধরা পড়ছে এবার। ছোট মাছের মধ্যে রয়েছে টেংরা, বাইন, মেনি, টাকি, কাইক্কা, পুঁটি, চিংড়ি ও চাপিলা মাছ। বড় মাছের মধ্যে ধরা পড়ছে বোয়াল, কার্প, মৃগেল, বাউশ ও শোল মাছ। এছাড়া শিং মাছ ও বিলুপ্তপ্রায় রাণী মাছও মাঝে মধ্যে ধরা পড়ে জালে। তবে ছোট মাছের দাম ও চাহিদা অন্য মাছের চেয়ে একটু বেশি।

বাজারে আইড় ৫০০ টাকা, বোয়াল ৪০০ টাকা, গুলশা ৩৫০ টাকা, টেংরা ৩৫০ টাকা, চিংড়ি ৬০০ টাকা, চিতল মাছ ৫৫০ টাকা, রুই ৩৫০ টাকা, কাতলা ৫০০ টাকা, বাইন ৫০০ টাকা, পাবদা ৬৫০ টাকা, কই ৩৫০ টাকা, মাগুড় ৪৫০ টাকা, শিং ৫০০ টাকা, শোল ৪৫০ টাকা, চাপিলা ২০০ টাকা, চাঁদা ১০০ টাকা, টাকি ২০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

মিঠামইন হাওর থেকে বালিখোলা বাজারে মাছ নিয়ে আসা ব্যবসায়ী হাসান আলী বলেন, মিঠামইনের ঘাগড়া নদীর মাছ এ বাজারে বিক্রি করতে এসেছি। ভালো দেখে এই বাজারে মাছ বিক্রি করি। চার বছর ধরে এখানে মাছ বিক্রি করতে আসি।

আরেক মাছ ব্যবসায়ী কামাল হোসেন বলেন, বিলের মাছ আমরা বালিখোলা বাজারে নিয়ে এসে আড়তে দিই। এই বালিখোলা আড়তে অনেক পাইকার আসে। আড়তদাররা পাইকারিতে মাছ বিক্রি করে। এই বালিখোলা বাজারে ন্যায্যমূল্যে আমরা মাছ বিক্রি করতে পারি।

জানা গেছে, কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জ উপজেলার বালিখলা এলাকায় অবস্থিত বালিখলা মাছ বাজারটিতে টিনের ঘর ছাড়া উন্নত কোনো অবকাঠামো গড়ে ওঠেনি। তারপরও হাওরের মিঠাপানির দেশি নানা জাতের মাছের কারণেই বাজারের সুনাম চারদিকে ছড়িয়ে পড়েছে।

বালিখোলা বাজার মৎস্য আড়ত মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. সালাহ উদ্দীন জানান, কিশোরগঞ্জসহ তিন জেলার বিভিন্ন হাওর থেকে প্রতিদিন প্রচুর মাছ এ বাজারে আসে। বাজারের ৫০টি আড়তে প্রতিদিন অন্তত কোটি টাকার মাছ কেনাবেচা হয়। এলাকার চাহিদা মিটিয়ে প্রচুর মাছ ঢাকা ও চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন জায়গায় তারা পাঠাচ্ছেন।

জেলেসহ ব্যবসায়ীরাও মাছের ন্যায্য মূল্য পাচ্ছেন। আগে ৬ মাস বেচাকেনা হলেও এখন সারা বছর এখানে বেচাকেনা হয়। বালিখলা এ মাছের বাজার থেকে অসংখ্য মানুষের আয় রোজগারের ব্যবস্থা হচ্ছে। তাই ঐতিহ্যবাহী এ মাছ বাজারটি টিকিয়ে রাখতে নদীর পাশ দিয়ে বাজার লাগোয়া সীমানা প্রাচীরসহ সরকারের সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।

কিশোরগঞ্জ জেলা মৎস্য কর্মকর্তা রিপন কুমার পাল জানান, কিশোরগঞ্জ জেলায় প্রতি বছর মাছের চাহিদা রয়েছে ৭০ হাজার মেট্রিক টন। আর উৎপাদন হয় ৮২ হাজার মেট্রিক টন। জেলায় মাছের চাহিদা মিটিয়ে প্রতি বছর প্রায় ২৮ থেকে ৩০ কোটি টাকার মাছ বিক্রি করা যায়।

তিনি আরো জানান, জেলে ও মৎস্যচাষিদের আধুনিক পদ্ধিতিতে মাছ সংরক্ষণের প্রশিক্ষণ দেয়ার প্রকল্প হাতে নেয়া হবে। যাতে করে তারা মাছ ফ্রিজিং করে রক্ষণাবেক্ষণ করতে পারেন। কিশোরগঞ্জের ভৈরবে একটি আধুনিক মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে হচ্ছে যা আগামী মাসে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী উদ্বোধন করবেন।

বাংলাদেশ জার্নাল/এনএইচ

  • সর্বশেষ
  • পঠিত