ঢাকা, সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১৬ মিনিট আগে
শিরোনাম

বেকার নারীরা ‘হেয়ার ক্যাপ’ তৈরি করে স্বাবলম্বী

  সুলতান মাহমুদ, দিনাজপুর প্রতিনিধি

প্রকাশ : ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ১১:৩৭  
আপডেট :
 ১০ আগস্ট ২০২১, ১৯:০৪

বেকার নারীরা ‘হেয়ার ক্যাপ’ তৈরি করে স্বাবলম্বী
ছবি: প্রতিনিধি

পুরুষ মানুষের চুল বড় হলে সেলুন বা নাপিতের দোকানে গিয়ে সেই চুল কেটে ছোট করি। সেই ছেঁটে ফেলা চুলের যে এখন এত চাহিদা বলে বুঝানো যাবে না। দিনাজপুরে সেই ছেঁটে ফেলার চুল দিয়ে বেকার নারীরা পরচুল বা ‘হেয়ার ক্যাপ’ তৈরি করে দিনদিন নিজেরা স্বাবলম্বী হয়ে উঠছেন।

দিনাজপুর জেলার নবাবগঞ্জ, বিরামপুর ও ঘোড়াঘাটের কয়েকটি গ্রামের বাণিজ্যিকভাবে গড়ে উঠেছে পরচুল বা ‘হেয়ার ক্যাপ’ তৈরি কারখানা। সেখানে কয়েক শত নারীরা প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে প্রতি মাসে ৫ থেকে ৭ হাজার আয় করছে। আর তাদের হাতের কারিশমায় তৈরি হওয়ায় ‘হেয়ার ক্যাপ’ চীনসহ মধ্য প্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হচ্ছে।

জেলার ৩ উপজেলায় বেকার নারীরা টাক মাথার জন্য ব্যবহার করা এসব পরচুল তৈরি করে গ্রামের শতাধিক হতদরিদ্র নারী ও স্কুল পড়ুয়া শিক্ষার্থী প্রতি মাসে ৫ থেকে ৭ হাজার টাকা আয় করছেন।

প্রায় ৬ মাস আগে নবাবগঞ্জ উপজেলার পুটিমারা ইউনিয়নের মতিহারা, ভাদুরিয়া, বিরামপুর সহ ঘোড়াঘাটের রানীগঞ্জ এলাকায় মো. তারেক হোসেন তার দুই বন্ধু মেসার্স সায়মা হেয়ার এন্টারপ্রাইজ উইকড এর উদ্যোগে। পরচুল ‘হেয়ার ক্যাপ’ তৈরির কারখানা স্থাপন করেন। সেখানেই এলাকার শত শত বেকার শিক্ষিত নারীরা খুঁজে পায় বাড়তি আয়সহ নতুন কর্মসংস্থানের।

করোনা পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে এখন হেয়ার ক্যাপ তৈরির প্রশিক্ষণ চলছে। তাদের তৈরি করা হেয়ার ক্যাপ যাচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে।

পরচুল ’হেয়ার ক্যাপ’ তৈরি কারখানায় কাজ করেন শাহিনা বেগম, তিনি জানান, দেশের করোনা পরিস্থিতি মধ্যে আমরা স্বামী-স্ত্রীসহ ঢাকায় একটি গামের্ন্টসে কাজ করতাম। আমি ও আমার স্বামীর গত মে মাসে আমাদের চাকরি চলে যায়। অনেক ঋণের বোঝা মাথায় গ্রামের বাড়িতে চলে আসি কি কবর কিছুই ভেবে পাচ্ছি না। এক সময় আমাদের গ্রামেরই এই হেয়ারক্যাপ কারখানায় প্রশিক্ষণ গ্রহণ শেষে এখন এখানেই কাজ করছি। প্রতিমাসে ৭ হাজার টাকা আয় হচ্ছে। নিজের বাড়িতে থেকেই কাজ করছি।

একই কথা বলেন আনোয়ারা বেগম, তিনি বলেন আমার দুই মেয়ে আর স্বামী নিয়ে আমাদের সংসার। আমার স্বামী ঝালমুড়ির ব্যবসা করেন আর আমি হেয়ার ক্যাপ কারখানায় কাজ করছি। প্রতিমাসে ৭ হাজার আয় হচ্ছে। এখন আমার দুই মেয়ে লেখাপড়া করাতে পারছি। অনেক ভালো আছি।

উপজেলার ভাদুরিয়া ইউনিয়নের (প্রাক্তন ইউপি সদস্য) মো. রাজু আহম্মেদ জানান, এ শিল্প এলাকায় আসার করণে শিক্ষিত বেকার নারীরা বাড়তি আয় করে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হচ্ছে। ঢাকা ওই কারখানার মালিকেরা চুক্তি ভিত্তিক প্রথম পর্যায় সামান্য কিছু চুল, সুই-সুতাসহ হেয়ার ক্যাপ তৈরির যাবতীয় সরঞ্জাম নিয়ে এসে গ্রামের হতদরিদ্র ২০ জন নারীকে ট্রেনিং দিয়ে পরচুল তৈরির কাজে লাগিয়ে দেন। এরপর মো. তারেক হোসেনকে আর পিছন ফিরতে হয়নি। বিশেষ ধরনের টেবিল তৈরি করে তিনি বাড়িতেই একটি মিনি কারখানা গড়ে তুলেন। এখন তার কারখানায় ৭৫ জন নারী কাজ করছেন।

এছাড়া নিজেদের সুবিধার জন্য অনেক নারী তাদের বাড়িতেই পরচুল তৈরি করে তালেবের কাছে পৌঁছে দেন। কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী প্রতিমাসে তিনি ৭টি সাইজের তৈরি করা প্রায় ২’শ থেকে আড়াই’শ পরচুল সরবরাহ করেন। যার বাজার মূল্য দুই লাখ থেকে আড়াই লাখ টাকা। একজন দক্ষ নারী শ্রমিক দুইদিনে একটি করে পরচুল তৈরি করতে পারেন। প্রতিটি পরচুলের মজুরি সাইজ অনুযায়ী ৪'শ থেকে ৬'শ টাকা।

মতিহারা গ্রামের হেয়ার ক্যাপ প্রশিক্ষণ কর্মশালার ম্যানেজার আজমত আলী জানান, প্রথমে নিজের সংসারের কথা চিন্তা করে হেয়ার ক্যাপ বা পরচুল তৈরির কাজ নিয়ে আসলেও বর্তমানে গ্রামের অনেক শিক্ষিত ও বেকার নারী আগ্রহী হয়ে উঠেছে পরচুল তৈরির কাজ করতে।

তিনি আরো জানান, বর্তমানে আমার কারখানায় ৭৫ জন নারী এবং গ্রামের বিভিন্ন বাসা-বাড়িতে আরো প্রায় ৫০ জন নারী নিজেদের সংসারের কাজের ফাঁকে পরচুল তৈরি করে আমার কাছে সরবরাহ করছে। এসব পরচুল তৈরির জন্য চুল ও বিভিন্ন সরঞ্জামাদি আমাকে ঢাকা থেকেই সরবরাহ করা হয়। মাস শেষে ঢাকায় গিয়ে মজুরির টাকা ব্যাংক একাউন্টের মাধ্যমে নিয়ে এসে সকলকে নগদে পরিশোধ করি। এ কাজের জন্য সরকারি কোনো সহযোগিতা পেলে আমার কারখানা আরো বড় করা সম্ভব হতো। এতে গ্রামের আরো অনেক হত দরিদ্র নারীর কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হতো। বর্তমানে দিনাজপুরের ৩ উপজেলায় ৫ হাজার বেকার নারী এ কর্মসংস্থানে যোগ দিয়ে ঘুচিয়েছে পরিবারের আর্থিক দৈন্যদশা।

এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে ৫নং পুটিমারা ইউপি চেয়ারম্যান মো. সরোয়ার হোসেন জানান, এ শিল্প বড় আকারে কাজ করতে পারলে গড়ে উঠতে পারে দিনাজপুরের ৩ উপজেলায় শিল্প কারখানা।

দিনাজপুর জেলা প্রশাসক মাহমুদুল আলম জানান, দিনাজপুর জেলার কয়েকটি উপজেলায় হেয়ার ক্যাপ তৈরি হচ্ছে। এই হেয়ার ক্যাপের বিদেশে চাহিদা রয়েছে। এটা যদি বেসিক এর মাধ্যমে আরো অধিক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে বেকার নারীদের উদ্ধৃত করা যায়। তাহলে জেলায় অনেক নারীরা আর বেকার থাকবে না।

বাংলাদেশ জার্নাল/এনকে

  • সর্বশেষ
  • পঠিত