লেখক মুশতাককে নিয়ে যা বললেন স্ত্রী লিপা
জার্নাল ডেস্ক
প্রকাশ : ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ১৭:০৮ আপডেট : ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ১৭:৪৩
ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনে গত বছর মে মাসে আটক হওয়া লেখক মুশতাক আহমেদ কাশিমপুর কারাগারে থাকা অবস্থাতেই বৃহস্পতিবার রাত আটটার দিকে মারা গেছেন। এরপর শুক্রবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ময়না তদন্ত শেষে তার মরদেহ আজিমপুর কবরস্থানে দাফনের প্রস্তুতি চলছে। এ অবস্থায় লালমাটিয়ায় মুশতাক আহমেদের বাসায় লেখকের স্মৃতিচারণ করেন তার স্ত্রী লিপা আক্তার।
শুক্রবার বাসায় লিপা আক্তার শাশুড়ি জেবুন্নেসা রাজ্জাককে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকেন। সরেজমিনে দেখা যায় তিনি বারবার বলছেন, ‘এটা কী হলো!’ তার পাশাপাশি দাঁড়িয়ে কাঁদছিলেন মুশতাককের বাবা মো. আবদুর রাজ্জাকও।
লিপা আক্তার বলেন, ধরে নিয়ে যাওয়ার পর গত ১০ মাসে একবারের জন্যও তার সঙ্গে মুশতাক আহমেদের দেখা হয়নি। হাইকোর্টে জামিন আবেদনের সময় আদালতে আনা হয় না। সর্বশেষ ২৩ ফেব্রুয়ারি তাকে নিম্ন আদালতে আনা হয়েছিল। কিন্তু তখন লিপা ছিলেন হাসপাতালে। তবে সপ্তাহ দুয়েক আগে মুশতাক আহমেদের সঙ্গে লিপা আক্তারের মুঠোফোনে কয়েক মিনিটের জন্য কথা হয়েছিল। তিনি বলেন, ‘মুশতাক বলল, ও ভালো আছে। কোনো সমস্যা নেই। ওর একটা ছোট ভুঁড়িও হয়েছে, যেটা কখনো ছিল না। আমি তো কাল বিকেল পর্যন্ত জানি ও সুস্থ আছে। এটা কী হলো?’
আরো পড়ুন: মুশতাকের শরীরে আঘাতের চিহ্ন মেলেনি, দাবি পুলিশের
মুশতাক আহমেদকে ধরে নিয়ে যাওয়ার খবর প্রথম জানিয়েছিলেন লিপা। গত বছরের ৪ মে রাতে পরপর দু’বার ফেসবুক স্ট্যাটাস দেন তিনি। প্রথম পোস্টে লিপা লেখেন, ‘আমাদের বাসায় র্যাবের নাম করে লোক এসেছে। ওরা ভেতরে ঢুকতে চায়।’ এর কিছুক্ষণ পর আরেকটি পোস্ট দিয়ে তিনি জানান, র্যাব-৩ মুশতাক আহমেদকে ধরে নিয়ে গেছে। তারা সঙ্গে নিয়ে গেছে মুশতাকের সিপিইউ।
এরপর থেকে নিয়মিত লিপা তাদের দু’জনের ছবি পোস্ট করতেন। একটি পোস্টে লিখেছিলেন, ‘ফেসবুক ভালো সময়ের কথা মনে করায়।’ সেই ৪ মে থেকে একাই লড়াই চালিয়ে গেছেন লিপা।
চতুর্থ দফায় জামিন আবেদন নাকচ হওয়ার পর থেকে লিপা অসুস্থ হতে শুরু করেন। তাদের পারিবারিক বন্ধুরা জানান, লিপার মানসিক অসুস্থতা মুশতাককে পীড়া দিচ্ছিল। উদ্বিগ্ন ছিলেন তিনি।
গাজীপুরে শহীদ তাজউদ্দিন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে লেখক মুশতাক আহমেদের ময়না তদন্তের পর তার মরদেহ ঢাকায় নেওয়ার প্রস্তুতি চলছে। ছবি: সংগৃহীত
প্রসঙ্গত, ২০২০ সালের মে মাসে বাংলাদেশের পুলিশ জনপ্রিয় কার্টুনিস্ট আহমেদ কবির কিশোর এবং লেখক মুশতাক আহমেদকে ঢাকার বাসভবন থেকে গ্রেপ্তার করে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে। তাদের বিরুদ্ধে ‘ফেসবুকে করোনাভাইরাস নিয়ে গুজব ও মিথ্যা তথ্য ছড়ানো’, ‘জাতির জনকের প্রতিকৃতি’, ‘জাতীয় সংগীত’ এবং ‘জাতীয় পতাকাকে’ অবমাননার অভিযোগ আনা হয়।
মুশতাক আহমেদ ‘কুমির চাষের ডায়ের ‘ নামে বইয়ের লেখক, তিনি ‘মাইকেল কুমির ঠাকুর’ নামে একটি ফেসবুক পাতাও পরিচালনা করেন, যাতে সামাজিক ও রাজনৈতিক বিভিন্ন বিষয়ে মন্তব্যও উঠে আসতো। তিনি বাংলাদেশে প্রথম বাণিজ্যিকভাবে কুমির চাষ শুরু করেছিলেন।
মুশতাক আহমেদ ২০২০ সালের ৬ মে ঢাকা জেলে ও পরে ২৪ আগস্ট থেকে তিনি কাশিমপুর হাই-সিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি ছিলেন।
বাংলাদেশ জার্নাল/এইচকে
আরও পড়ুন
> ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন প্রত্যাহারের দাবি
> কারাগারে মারা গেলেন লেখক মুশতাক