ঢাকা, মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৩ মিনিট আগে
শিরোনাম

‘টুরিস্ট স্পটগুলোকে পুরোপুরি ধূমপানমুক্ত করা হবে’

  জার্নাল ডেস্ক

প্রকাশ : ০৪ এপ্রিল ২০২১, ২৩:৩৩

‘টুরিস্ট স্পটগুলোকে পুরোপুরি ধূমপানমুক্ত করা হবে’

আমাদের দেশে পাবলিক প্লেসে ধূমপান নিষিদ্ধ থাকলেও অনেক ক্ষেত্রেই তা মানা হয় না। বিশেষ করে রেস্তোরাসহ পর্যটন এলাকাতে ধূমপানের জন্য নির্দিষ্ট স্থান রাখার বিধান বাতিল করা উচিত। এজন্য আইন সংশোধনের মাধ্যমে পাবলিক প্লেসকে শতভাগ ধূমপানমুক্ত করা জরুরী। আর টুরিস্ট স্পটগুলো যাতে পুরোপুরি ধূমপানমুক্ত থাকে সেজন্য বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয় কাজ করবে, এমনটাই বলেছেন বিমান ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী, এমপি।

‘ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন ২০০৫ সংশোধনের প্রয়োজনীয়তা’ র উপর ঢাকা আহছানিয়া মিশনের উদ্যোগে আয়োজিত ভার্চুয়াল এক সেমিনারে ৪ এপ্রিল তিনি এ কথা বলেন।

দেশকে তামাকমুক্ত করার ক্ষেত্রে ঢাকা আহ্ছানিয়ার উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে বেসামরিক বিমান ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী সেমিনারে আরো বলেন, অধিকাংশ ধূমপায়ীই অল্প বয়স থেকে সিগারেটের প্রতি আসক্ত হয়। এজন্য স্কুল পর্যায় থেকে শিক্ষক ও অভিভাবকদের উচিত তাদের সন্তানদের প্রতি খেয়াল রাখা। যাতে তাদের সন্তান অন্যদের সাথে মিশে বিপথে না যায়। যথাযথ সচেতনতাই পারে সকলের মধ্যে ধূমপানের ক্ষতির বিষয়টি তুলে আনতে।

ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশনের স্বাস্থ্য ও ওয়াশ সেক্টরের পরিচালক ইকবাল মাসুদের সভাপতিত্বে সেমিনারে বিশেষ অতিথি ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান আ আ স ম আরেফিন সিদ্দিক, বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রি কর্পোরেশন (বিসিআইসি) এর সাবেক চেয়ারম্যান ও ক্যাম্পেইন ফর টোবাকো ফ্রি কিডস বাংলাদেশের লিড পলিসি এডভাইজার মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান, বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব ও তামাক নিয়ন্ত্রণের ফোকাল পার্সন সাবেরা আক্তার এবং এভিয়েশন এন্ড টুরিজম জার্নালিস্ট ফোরাম (এটিজেএফবি)-এর সভাপতি ও এটিএন বাংলার বার্তা সম্পাদক নাদিরা কিরণ।

সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশনের তামাক নিয়ন্ত্রণ প্রকল্পের সমন্বয়ক মোঃ শরিফুল ইসলাম। ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশনের তামাক নিয়ন্ত্রণ প্রকল্পের প্রোগ্রাম অফিসার শারমীন আক্তার রিনি ও মিডিয়া ম্যানেজার রেজাউর রহমান রিজভীর সঞ্চালনায় সেমিনারে জাতীয় দৈনিক পত্রিকা, অনলাইন নিউজ পোর্টাল ও টেলিভিশন চ্যানেলের ২০ জন সাংবাদিক অংশগ্রহণ করেন।

ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশনের স্বাস্থ্য ও ওয়াশ সেক্টরের পরিচালক ইকবাল মাসুদ বলেন, আমরা রেস্তোরাঁ ওনার্স এসোসিয়েশনের সঙ্গে মিলে দেশের ২৪টি জেলার রেস্তোরাঁগুলোকে ধূমপানমুক্ত করার কার্যক্রম পরিচালনা করেছি। তারকা হোটেলগুলো অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সহযোগিতার মনোভাব দেখিয়ে তাদের হোটেল ও রেস্তোরায় ধূমপান নিষিদ্ধ করেছে। তবে মধ্যম মানের রেস্তোরাঁগুলোকে এখনো ধূমপানমুক্ত করা সম্ভব হয়নি। বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের প্রতি অনুরোধ তারা যাতে টুরিস্ট স্পটগুলোকে পুরোপুরি ধূমপানমুক্ত করার উদ্যোগ গ্রহণ করে। কারণ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত ২০৪০ সালের মধ্যে দেশকে তামাকমুক্ত করার স্বপ্ন পূরণ করতে ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশন সচেষ্ট।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান আ আ স ম আরেফিন সিদ্দিক বলেন, ধূমপানের ক্ষতির শিকার থেকে তরুণ প্রজন্মকে বাঁচাতে সরকারের সঙ্গে সঙ্গে সকলের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করা জরুরী। বিশেষত আধুনিককালে ই-সিগারেট নামক নতুন ধারার ধূমপানের ক্ষতির বিষয়টিতেও সকলকে দৃষ্টি দেয়া জরুরী।

ক্যাম্পেইন ফর টোবাকো ফ্রি কিডস বাংলাদেশের লিড পলিসি এডভাইজার মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, যিনি ধূমপান করেন না তার অধিকার আছে পরোক্ষ ধূমপানের ক্ষতির হাত থেকে নিজেকে রক্ষার জন্য। অথচ পরোক্ষ ধূমপানে ক্ষতিগ্রস্তের সংখ্যাই বেশি। যেহেতু ধূমপানের ধোঁয়া নিয়ন্ত্রণ করা যায় না। সেজন্য সব ধরনের পাবলিক প্লেসে ধূমপানের জন্য নির্ধারিত স্থান নিষিদ্ধ করা উচিত। এক্ষেত্রে গণমাধ্যমই পারে আমাদের এই বার্তা নিয়মিত ভাবে সরকারের কাছে পৌঁছে দিতে।

বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব ও তামাক নিয়ন্ত্রণের ফোকাল পার্সন সাবেরা আক্তার বলেন, প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত ২০৪০ সালের মধ্যে দেশকে তামাকমুক্ত করতে হলে সকলকে মিলিত ভাবে কাজ করতে হবে। কোন মন্ত্রণালয়ের একার পক্ষে এটি সম্ভব নয়। পারস্পরিক সহযোগিতার ভিত্তিতেই সম্ভব দেশকে তামাকমুক্ত করা।

এটিজেএফবি’র সভাপতি ও এটিএন বাংলার বার্তা সম্পাদক নাদিরা কিরণ বলেন, পর্যটন সেক্টরের বিকাশের জন্য পর্যটন বান্ধব পরিবেশ জরুরী। এজন্য গণমাধ্যমকর্মীরাই পারে তাদের ক্ষুরধার লেখনি দিয়ে সরকার সহ সংশ্লিষ্ট সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে।

ক্যাম্পেইন ফর টোবাকো ফ্রি কিডস বাংলাদেশের গ্র্যান্টস ম্যানেজার আবদুস সালাম মিয়া বলেন, বিশ্বজুড়ে প্রতিরোধযোগ্য মৃত্যুর প্রধান আটটি কারণের ছয়টির সাথেই তামাক জড়িত। বাংলাদেশে প্রতি বছর ১ লক্ষ ৬১ হাজারেরও বেশি মানুষ কেবল তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার জনিত রোগে মৃত্যুবরণ করে। অথচ এটি নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন ততটা নই যতটা হওয়া উচিত ছিল। গণমাধ্যমকর্মীরাই পারেন মানুষের মাঝে এ ব্যাপারে সচেতনতা সৃষ্টি করতে। তিনি এজন্য গণমাধ্যমকর্মীদেরকে ভূমিকা রাখতে আহবান করেন। উল্লেখ্য, কানাডা, স্পেন, নেপালসহ বিশ্বের ৬৩টি দেশে পাবলিক প্লেসে ধূমপানের জন্য নির্ধারিত জায়গা নিষিদ্ধ করে আইন রয়েছে। অথচ আমাদের দেশের আইনে পাবলিক প্লেসে ধূমপানের জন্য নির্ধারিত এলাকা, চার দেয়ালে আবদ্ধ এক কক্ষ বিশিষ্ট নয় এমন রেস্টুরেন্ট, একাধিক কক্ষবিশিষ্ট গণপরিবহনে (ট্রেন, লঞ্চ) ও অযান্ত্রিক পাবলিক পরিবহনে ধূমপানের স্থান রাখা যাবে। অথচ হওয়া উচিত, তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের ধারা ৭ সংশোধন করে সব ধরনের পাবলিক প্লেসে ধূমপানের জন্য নির্ধারিত স্থান নিষিদ্ধ করা এবং ধূমপানসহ যেকোন ধরনের তামাক ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা।

বাংলাদেশ জার্নাল/টিআই

  • সর্বশেষ
  • পঠিত