ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৪ মিনিট আগে
শিরোনাম

শিশুর হাতে মোবাইল সর্বনাশা

  আসিফ কাজল

প্রকাশ : ০৯ জুন ২০২১, ১৯:১৬  
আপডেট :
 ০৯ জুন ২০২১, ১৯:২৪

শিশুর হাতে মোবাইল সর্বনাশা
প্রতীকী ছবি

রাজধানীর খিলগাঁওয়ের একটি ফ্লাটে বাস করেন মুক্তি ও রানা। সঙ্গে থাকে তাদের শিশু সন্তান মনির (ছদ্মনাম)। রানা পেশায় সরকারি কর্মকর্তা আর মুক্তি গৃহিনী।

মুক্তি বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, সকাল হলেই আমার হাজবেন্ড অফিসে চলে যায়। বাসায় আমি ঘরের কাজ করি। সত্যি কথা বলতে ছেলেকে খুব বেশি সময় দিতে পারি না। আমি রান্না আর ঘরের কাজে ব্যস্ত থাকি আর মনির মোবাইলে ইউটিউব দেখে সময় কাটায়। কিন্তু সমস্যা সেটি নয়। আড়াই বছর বয়স হলেও মনির এখনো কথা বলতে পারে না।

কারণ হিসেবে তিনি জানান, মানুষের সংস্পর্শে না আসায় ও শিশুর সঙ্গে কথা না বলায় সে শুধু বুঝতে শিখেছে কিন্তু বলতে শিখেনি। চিকিৎসক বলেছেন, বাচ্চার হাতে আর মোবাইল দেয়া যাবে না। এছাড়া তার সঙ্গে গল্প ও কথা বলতে হবে।

অন্যদিকে ধানমন্ডির এমি ফারজানার দুই ছেলের নাম অর্ণব ও অরিন। অর্ণবের বয়স ৮ ও অরিনের বয়স ১০ বছর। এমি বলেন, দিন দিন আমার দুটো বাচ্চা অনেক মোটা হয়ে যাচ্ছে। স্থূলতার কারণে তাদের মোবাইল ছাড়া আর কোনো কর্মতৎপরতাও নাই। এটি আমাকে চিন্তায় ফেলেছে। সারাদেশেই ডিজিটাল ডিভাইস বিশেষ করে মোবাইল আসক্তিতে রয়েছে শিশুরা। মফস্বলের থেকে নগর এলাকায় আসক্তির সংখ্যা ও হার উদ্বেগজনক। প্রযুক্তিপণ্য অতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে শিশুদের মনোজগতে ব্যাপক পরিবর্তন আনছে।

অভিভাবকরা বলছেন, অনেক শিশু এখন ট্যাব, স্মার্টফোনে গান না শুনে বা ভিডিও না দেখে খেতে চাইছে না। শিশু-কিশোরদের মধ্যে মোবাইল ডিভাইস ও বাস্তব জগতের মধ্যে সীমানা তৈরি করে দেওয়ার বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।

প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এখনকার শিশুরা প্রযুক্তিপণ্যে এতটাই আসক্ত হয়ে যাচ্ছে যে, শিশুর হাত থেকে মোবাইল ফোন বা ট্যাব কেড়ে নিলে তারা রেগে যায় বা নেতিবাচক আচরণ শুরু করে। তারা অন্য কোনো দিকে খেয়াল করে না, কারো সঙ্গে চোখে চোখ রেখে কথা বলে না। মোবাইল, ট্যাবলেটে চোখ রাখে বেশি সময়। এতে পারিবারিক বন্ধনের ধারণায় পরিবর্তন আসছে। ডিজিটাল বিপ্লবের যুগে শিশুর বাস্তব জগতের সঙ্গে ও ভার্চুয়াল জগতের মধ্যে সীমানা নির্ধারণ করতে হবে।

সমাজ বিজ্ঞানী নেহাল করিম বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, শুধু যে বাচ্চারাই মোটা হয়ে যাচ্ছে তা নয়, বাচ্চার বাবা-মা স্থূল হয়ে যাচ্ছেন। কারণ সবার চলাফেরার গণ্ডি সংকুচিত হয়েছে। তবে সব শিশু মোবাইল ব্যবহার করছে না জানিয়ে তিনি বলেন, মফস্বলের শিশুদের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক আছে। তারা দৌড়-ঝাপে ব্যস্ত থাকে। তারা কিন্তু স্থূল হচ্ছে না। স্থূল হচ্ছে মেট্রোপলিটন এলাকার শিশুরা। কারণ তাদের খেলার মাঠ নেই। সামাজিক অংশগ্রহণ নেই। এক কথায় ঘরবন্দি রয়েছে এসব শিশুরা।

তিনি আরো বলেন, একজন শিশুকে মানুষের মতো মানুষ করা এত সহজ নয়। আমাদের সময় বাবারা উপার্জনে ব্যস্ত ছিলো। আর মায়েরা সার্বক্ষণিক সন্তানকে আগলে রেখেছেন। আর এখন বাবা-মা দুজনই অফিস করছেন। বুয়ার কাছে শিশুরা বড় হচ্ছে। বাবা-মা শিশুর খোঁজ রাখছেন আনুষ্ঠানিকতার মাধ্যমে। সন্তান খেয়েছে কী না শরীর ভাল কী না এমন। ফলে সামাজিকভাবেও এর প্রভাব পড়ছে। যে কারণে আজ তরুণ প্রজন্ম এলএসডি খাচ্ছে, নেশা করছে। কারণ তাদের অর্থ কষ্ট কম কিন্তু মনে কষ্ট আছে।

ইউনিসেফের তথ্য অনুসারে বিশ্বে প্রতি তিনজন ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর একজন শিশু। আর প্রতিদিন এক লাখ ৭৫ হাজার শিশু নতুন করে ইন্টারনেটের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে। ফেসবুক ব্যবহারকারীদের ২৫ শতাংশের বয়সই ১০ বছরের কম এবং ফেসবুকসহ সব ধরনের সোশ্যাল মিডিয়ার ৯০ শতাংশ ব্যবহারকারীর বয়সই ১৮ থেকে ২৯-এর মধ্যে। বাংলাদেশেও ইন্টারনেট প্রসারের মধ্য দিয়ে প্রতিনিয়ত বেড়ে চলেছে বিপুল সংখ্যক ব্যবহারকারী, যার মধ্যে শিশুরাও আছে।

এ বিষয়ে জাতীয় মানসিক গবেষণা ইন্সটিটিউটের মনোবিজ্ঞানী ডা. তাজুল ইসলাম বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, বাচ্চাদের মানসিক বিকাশের জন্য শারীরিক তৎপরতা থাকতে হয়। তারা বাসায় থাকুক বা স্কুলে থাকুক দৌড়াদৌড়ির উপরে থাকবে। তবে দীর্ঘদিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকা শিশুদের মোটা হওয়ার একটি বড় কারণ।

তিনি আরো বলেন, স্থূলতা কখন হয়, যখন কোনো কায়িক পরিশ্রম হবে না, শুধু খাবে ও শুয়ে থাকবে। আর পড়াশুনো থাকলে একটি নিয়মের মধ্যে থাকবে। সৃজনশীল কাজ করবে। এতে সে বিনোদন পাবে। তার শারীরিক ও মানুষিক দুটোরই বিকাশ হবে। কিন্তু ডিভাইস নির্ভরতা এখন নেশার মতো হয়ে গেছে। যার কারণে তারা একটা সময় অসহায়ত্ব, নিঃসঙ্গতার মধ্য দিয়ে কাটাবে।

এই সমস্যা সমাধানের বিষয়ে তাজুল ইসলাম বলেন, এজন্য সচেতনতা জরুরি। শিশুদের সঙ্গে বাবা-মা আত্মীয়ের মধ্যে মানসিক সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে। একসঙ্গে সময় কাটাতে হবে। পারিবারিক আনন্দ প্রয়োজন।

বাংলাদেশ জার্নাল/একে/কেআই

  • সর্বশেষ
  • পঠিত