ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ২৩ মিনিট আগে
শিরোনাম

বেনাপোল দিয়ে আমদানি-রপ্তানি বন্ধ

  যশোর প্রতিনিধি

প্রকাশ : ১০ জুলাই ২০২১, ২০:০৯

বেনাপোল দিয়ে আমদানি-রপ্তানি বন্ধ
ফাইল ফটো

আবারো বন্ধ হয়ে গেল বেনাপোল-পেট্রাপোল স্থলবন্দর দিয়ে দুই দেশের মধ্যে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম। করোনা সংক্রমণ রোধে ভারত থেকে আমদানিকৃত পাথরের ট্রাক সীমিত সংখ্যায় গ্রহণ করায় শনিবার সকাল থেকে দুই দেশের মধ্যে আমদানি-রপ্তানি বন্ধ করে দেয় বেনাপোলের বিপরীতে ভারতের পেট্রাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট, ট্রাকশ্রমিক ও ট্রাক মালিক সমিতি।

তবে চেকপোস্ট কার্গো শাখায় অন্যান্য আমদানি-রপ্তানি পণ্যের গেটপাস (আইজিএম) চলছে। নতুন করে কোনো পণ্য আসা-যাওয়া বন্ধ রয়েছে।

ভারতীয় ব্যবসায়ীদের দাবি, বেনাপোলে পাথর আমদানি কমিয়ে দেয়ায় ভারতের পেট্রাপোল বন্দরে পাথরবাহী প্রায় ৮০০ ট্রাক আটকা পড়ে জটের সৃষ্টি হয়েছে। সব ট্রাকের গেটপাস (আইজিএম) এক সাথে করতে হবে।

বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টস স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সাজেদুর রহমান জানান, ভারত থেকে যে পাথর আমদানি হয়, সেগুলো বন্দরের বাইরে আনলোড হতো। পাথর আনলোড করার সময় ভারতীয় ট্রাকচালক ও হেলপাররা স্বাস্থ্যবিধি না মেনে এদিক-ওদিক ঘুরে বেড়ান। ফলে সেদেশের ট্রাক ড্রাইভার-হেলপারদের মাধ্যমে করোনার ডেল্টা (ভারতীয়) ভ্যারিয়েন্ট ছড়াতে পারে। এলাকাবাসীর অভিযোগের কারণে পাথরের গাড়ি বেনাপোল বন্দরে প্রবেশে বাধা সৃষ্টি করা হচ্ছিল কাস্টমস ও বন্দর কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে।

তিনি জানান, কাস্টমস কর্তৃপক্ষ বলছে, করোনার এই মুহূর্তে বন্দরের বাইরে পাথর রাখা যাবে না। বন্দর কর্তৃপক্ষ রাখার জায়গা তৈরি করলে তবেই পাথর আমদানি করতে হবে। তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে সীমিত সংখ্যক ট্রাক গ্রহণ করা হবে।

পাথর আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের স্থানীয় সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট রুপালি এন্টারপ্রাইজের প্রতিনিধি রাজিব জানান, পদ্মা সেতুর কাজে এ পাথর ভারত থেকে আমদানি করা হচ্ছে। বন্দর কর্তৃপক্ষ বন্দরে পাথর খালাস করতে দিচ্ছেন না, আবার কাস্টমস কর্তৃপক্ষ পাথর আমদানি সীমিত করেছে। এর প্রতিবাদে ভারতীয় বন্দর ব্যবহারকারীরা আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য বন্ধ করে দিয়েছেন। তাদের দাবি ভারতের পেট্রাপোল বন্দরের মধ্যে পাথরবোঝাই প্রায় ৮০০ ট্রাক আটকা পড়ে রয়েছে।

বেনাপোল বন্দরের উপ-পরিচালক (ট্রাফিক) মামুন কবির তরফদার জানান, প্রতিদিন দেড়শ’ থেকে দুইশ’ ট্রাক পাথর রাখার জায়গা নেই বন্দরে। এসব পাথর বন্দরে নামালে অন্য মালামাল ওঠা-নামা বিঘ্নিত হবে। জায়গা সঙ্কটের কারণে ভারত থেকে আমদানি করা পাথর বন্দর এলাকার পাশে আমদানিকারকের নিজস্ব জায়গায় আনলোড করা হচ্ছিল। ভারতীয় ড্রাইভার-হেলপারদের মাধ্যমে করোনা ছড়াতে পারে আশঙ্কায় এখন থেকে বন্দর এলাকা থেকে ভারতীয় পাথরবোঝাই ট্রাক বাংলাদেশি ড্রাইভাররা নিয়ে আমদানিকারকের জায়গায় আনলোড করবে- এ শর্তে পাথর আমদানি শুরু হয়েছিল। কিন্তু ভারতীয় ব্যবসায়ীরা তাদের আগের দাবিতে আমদানি-রপ্তানি বন্ধ রেখেছেন।

বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মফিজুর রহমান সজন জানান, বন্দরে জায়গা সঙ্কটের কারণে প্রায়ই আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য বন্ধ হয়ে যায়। প্রতিবছর এ বন্দর থেকে সরকার প্রায় ছয় হাজার কোটি টাকা রাজস্ব পায়। কিন্তু বন্দরে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো উন্নয়ন না হওয়ায় বাণিজ্য ব্যাহত হচ্ছে মারাত্মকভাবে।

তিনি জানান, জায়গার অভাবে কখনো বাণিজ্য বন্ধ থাকছে, আবার কখনো খোলা আকাশের নিচে পণ্য রাখায় রোদ-বৃষ্টিতে ভিজে পণ্যের গুণগতমান নষ্ট হচ্ছে। এতে অনেক ব্যবসায়ী সুবিধাবঞ্চিত হয়ে এ বন্দর ছেড়ে চলে যাচ্ছেন অন্য বন্দরে। ফলে গত চার বছর ধরে এ বন্দরে আমদানিপণ্য থেকে সরকারের লক্ষ্য অনুযায়ী রাজস্ব আসছে না।

বেনাপোল কাস্টম হাউজের অতিরিক্ত কমিশনার ড. মো. নেয়ামুল ইসলাম জানান, সম্প্রতি সীমান্তে করোনা পরিস্থিতি ভয়াবহ। প্রতিদিন আক্রান্তের হারও বাড়ছে। এ অবস্থায় বন্দরের বাইরে গিয়ে স্বাস্থ্যবিধি না মেনে লোকালয়ে ভারতীয় ট্রাকচালকেরা পাথর খালি করায় ঝুঁকি আরও বাড়ছে। ফলে ঊধ্বর্তন কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করে এ বন্দর দিয়ে আপাতত পাথরবাহী ট্রাক সীমিত আকারে আমদানির কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু ভারতীয় ব্যবসায়ীরা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে আমদানি-রপ্তানি বন্ধ করে দিয়েছেন। আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য সচলের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা চলছে।

এর আগে একই দাবিতে ভারতীয় বন্দর ব্যবহারকারীরা ২২ জুন আমদানি-রপ্তানি বন্ধ রাখেন। পরে উভয়পক্ষের সাথে আলোচনা শেষে প্রতিদিন ৩০টি করে পাথরবোঝাই ট্রাক গ্রহণ করা হবে বলে সিদ্ধান্ত হলে আমদানি-রপ্তানি চালু হয়। তারপরও ভারতীয় বন্দর ব্যবহারকারীদের নতুন করে কথায় কথায় আমদানি-রপ্তানি বন্ধের ঘোষণায় বেনাপোলের বন্দর ব্যবহারকারীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

বাংলাদেশ জার্নাল/এসকে

  • সর্বশেষ
  • পঠিত