ঢাকা, শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১ ঘন্টা আগে
শিরোনাম

করোনার সঙ্গে ডেঙ্গু শঙ্কা, অভিযানে নামছে চসিক

  চট্টগ্রাম প্রতিনিধি

প্রকাশ : ০২ আগস্ট ২০২১, ১৬:৩৬

করোনার সঙ্গে ডেঙ্গু শঙ্কা, অভিযানে নামছে চসিক
ছবি সংগৃহীত

চট্টগ্রাম শহরে করোনা মহামারির সঙ্গে এবার নতুন করে তৈরি হয়েছে ডেঙ্গুর শঙ্কা। নগরের ১৫ স্পটে মিলেছে এডিস মশার লার্ভা। এসব লার্ভায় ইতোমধ্যে তৈরি হয়েছে মশা। আর ডেঙ্গু প্রতিরোধে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) মঙ্গলবার থেকে শুরু করছে ৩০ দিনের ক্রাশ প্রোগ্রাম। ওয়ার্ড পর্যায়ে চলমান মশক নিধন কার্যক্রমের পাশাপাশি ১০০ জনের একটি বিশেষ দল এই কর্মসূচি বাস্তবায়ন করবে।

জানা গেছে, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের আহ্বানে মশক নিধনে নগরে প্রয়োগ করা ওষুধের কার্যকারিতা যাচাই করতে গত ৫ জুলাই থেকে গবেষণা চালায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) ছয় সদস্যের একদল গবেষক। এরপর টানা ২৫ দিন চট্টগ্রাম নগরের ১০০টি স্পট পরিদর্শন করে ৫১টি স্পটের মশার লার্ভা সংগ্রহ করা হয়। তাছাড়া পরীক্ষার সুবিধার্থে চবি ও এর পাশের ছয়টি স্পটের লার্ভাও সংগ্রহ করা হয়। পরে পরীক্ষাগারে নগরের এসব স্পটের নমুনা পরীক্ষা করে ১৫টি স্পটে এডিস মশার লার্ভা পাওয়া যায়। বাড়ির ফুলের টব, পরিত্যক্ত প্লাস্টিকের পাত্র, দোকানের ব্যাটারির সেল ও টায়ার এবং রাস্তার পাশের পাইপে জমে থাকা বৃষ্টির পানিতে মিলেছে এডিস মশার লার্ভা। এসব এলাকা থেকে সংগৃহীত লার্ভার শতভাগই ছিল এডিসের।

গবেষকদলের আহ্বায়ক চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর ও প্রাণ রসায়ন এবং অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. রবিউল হাসান ভূঁইয়া বলেন, নগরে মশকনিধনে প্রয়োগ করা ওষুধের কার্যকারিতা যাচাই করতে চবি কর্তৃপক্ষের সহযোগিতা কামনা করেন চসিক মেয়র মো. রেজাউল করিম। এরপর তা পরীক্ষা করে দেখার জন্য ৬ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেন উপাচার্য। ৫ জুলাই থেকে ওই কমিটি চট্টগ্রাম নগরীর ৫১টি স্থান থেকে মশার লার্ভা সংগ্রহ করে। এর মধ্যে ১৫টি স্পটে এডিস মশার লার্ভা পাওয়া গেছে।

তিনি আরো বলেন, সাধারণত লার্ভা থেকে দুই-তিন দিনের মধ্যে মশার জন্ম হয়ে যায়। এসব লার্ভায় ইতোমধ্যে মশা তৈরি হয়েছে। আমাদের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। কয়েক দিনের মধ্যেই বিস্তারিত প্রতিবেদন চসিকে হস্তান্তর করা হবে। কোন ওষুধ মশা মারার জন্য কার্যকর তা আমাদের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হবে। এছাড়া, কোন ওষুধ কি পরিমাণে দিতে হবে, কীভাবে ওষুধ প্রয়োগ করলে মশা নিধন সহজ হবে তা উল্লেখ করা হবে প্রতিবেদনে।

এডিস মশার লার্ভা নগরের কোন কোন স্থানে পাওয়া গেছে জানতে চাইলে ড. রবিউল হাসান বলেন, আপাতত আমরা স্থান প্রকাশ করতে চাই না। এটি প্রকাশ করলে ভীতি ছড়াতে পারে। তবে বিস্তারিত প্রতিবেদনে স্থান উল্লেখ থাকবে।

জানা গেছে, এর আগে গতবছর ওষুধ ছিটানোর পরও মশার উৎপাত না কমায় পরীক্ষার জন্য ডিসেম্বরে বিসিএসআইআর (বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ) গবেষণাগারে লার্ভিসাইড (মশার ডিম ধ্বংসকারী ওষুধ) এবং এডালটিসাইড (পূর্ণাঙ্গ মশা ধ্বংসকারী) পাঠায় চসিক কর্তৃপক্ষ। তবে সে সময় সংস্থাটি চসিককে জানায়, মশার ওষুধের গুণগত মান তাদের ল্যাবে পরীক্ষা করা হয় না।

চসিকের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা স্ট্যান্ডিং কমিটির সভাপতি কাউন্সিলর মোবারক আলী বলেন, গত তিনদিন ধরে নগরের প্রতিটি ওয়ার্ডে ব্যাপকহারে মশক নিধন কার্যক্রম চলছে। এই কার্যক্রমের বাইরে ১০০ জনকে বিশেষভাবে নিয়োজিত করা হচ্ছে। তারা একেকদিন একেক ওয়ার্ডে স্প্রে করবে। ৩০ দিনের মধ্যে প্রতিটি ওয়ার্ডকে তিনবার করে স্প্রে করা হবে। ওয়ার্ডের কোন এলাকা যাতে বাদ না পড়ে সেজন্য মনিটরিং কমিটি রয়েছে। ফগার মেশিনের পাশাপাশি ২০টি মোটরচালিত হাইপাওয়ার স্প্রে মেশিন কেনা হচ্ছে। কোরিয়ার তৈরি এই স্প্রে মেশিন দিয়ে হ্যান্ড মেশিনের চেয়ে অন্তত ১০ গুণ বেশি স্প্রে করা যায়। প্রয়োজনে পরবর্তীতে আরো হাইপাওয়ার স্প্রে মেশিন কেনা হবে।

তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিবেদন না পাওয়ার কারণে এডাল্টিসাইড ওষুধ কেনা যায়নি। তবে পর্যাপ্ত পরিমাণে লার্ভিসাইড এবং (লাইট ডিজেল অয়েল(এলডিও) রয়েছে। প্রতিবেদন পাওয়ার পর দ্রুততম সময়ে এডাল্টিসাইড সংগ্রহ করা হবে।

এদিকে চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন অফিস সূত্র জানায়, করোনার পাশাপাশি নগরীতে ইতোমধ্যে ৬ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে। এরমধ্যে দুজন মারাও গেছেন।

চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বী বলেন, মশার ওপর আমাদের যে সার্ভে হয়েছে তাতেও এডিস মিলেছে। এটা আমরা সিটি করপোরেশনকে চিঠির মাধ্যমে জানিয়েছি। তাদের পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম ও ওষুধ ছিটানো জোরালো করতে বলেছি। এছাড়া নগরবাসীকে সচেতন করার জন্য মাইকিং করতে বলেছি, আমরাও মাইকিং করছি। তাছাড়া উপজেলা পর্যায়ে স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোতে ডেঙ্গু পরীক্ষার কিট পাঠিয়েছি।

প্রসঙ্গত, এর আগে নগরীতে মশক নিধনে ব্যবহৃত ওষুধের কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠার পর গুণগত মান পরীক্ষার উদ্যোগ নেয় চসিক। গত ১৪ মার্চ ব্যবহৃত ওষুধ পরীক্ষা করতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীন আখতারকে অনুরোধ করে চসিক। এরপর ২৪ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. রবিউল হাসান ভূঁইয়াকে আহ্বায়ক এবং উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. ওমর ফারুককে সদস্য সচিব করা হয়।

কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন- রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. তাপসী ঘোষ রায়, ভূগোল ও পরিবেশবিদ্যা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. শহীদুল ইসলাম, মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. এইচ এম আবদুল্লাহ আল মাসুদ এবং প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. আবদুল ওয়াহেদ চৌধুরী।

বাংলাদেশ জার্নাল/ওয়াইএ

  • সর্বশেষ
  • পঠিত