ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৩৮ মিনিট আগে
শিরোনাম

এবার হুঁশ ফিরলো চসিকের

  মনির ফয়সাল, চট্টগ্রাম প্রতিনিধি

প্রকাশ : ২৮ আগস্ট ২০২১, ২১:৫২  
আপডেট :
 ২৮ আগস্ট ২০২১, ২২:২৯

এবার হুঁশ ফিরলো চসিকের
পা পিছলে ড্রেনে পড়ে যাওয়া সবজী ব্যবসায়ীকে উদ্ধারে তৃতীয় দিনের মতো তল্লাশি চালাচ্ছে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল।

গত দুই মাসে চট্টগ্রাম নগরীতে খাল ও নালায় পড়ে দুইজনের মৃত্যু ও একজনের নিখোঁজের পর টনক নড়েছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক)। নগরীর উন্মুক্ত নালাগুলোয় এখন স্ল্যাব বসানোর তোরজোড় শুরু করেছে চসিক। একইসঙ্গে খালের পাড়ে বেড়া দেয়ার পরিকল্পনাও হাতে নিয়েছে চসিক কর্তৃপক্ষ।

গত বুধবার সকাল ১১টার দিকে পাঁচলাইশ থানাধীন মুরাদপুর পুলিশ বক্স এলাকায় পা পিছলে নালায় পড়ে নিখোঁজ হন সালেহ আহম্মেদ নামের এক সবজি ব্যবসায়ীর। দুর্ঘটনাস্থল ওই নালায় কোনো স্ল্যাব ছিল না। বুধবার এ ঘটনার একটি ভিডিওচিত্র ছড়িয়ে পড়েছে নেট দুনিয়ায়। এতে দেখা গেছে, ওই ব্যবসায়ী একটি বাস থেকে নেমে নালার পাড় ধরে হেঁটে আসছিলেন। হঠাৎ ভারসাম্য হারিয়ে পা পিছলে নালায় পড়ে যান তিনি। এসময় এক লোক তাকে টেনে ধরতে হাত বাড়িয়েছিলেন কিন্তু সালেহ আর উঠতে পারেননি।

যে অংশে এই ঘটনাটি ঘটেছে সেটি হচ্ছে মূলত হাটহাজারী সড়কের বাম পাশে। হাটহাজারী রোড থেকে বামপাশে আয়োজন রেস্তোরাঁর দিকে যাওয়ার পথে পা ফসকে খালের পানিতে তলিয়ে যান তিনি।

স্থানীয়রা জানায়, মুরাদপুরের ওই জায়গাটি এক সময় স্ল্যাব দিয়ে ঢাকা থাকলেও জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের কাজের জন্য বছরখানেক আগে সেসব স্ল্যাব সরিয়ে নেয়া হয়। এরপর সেখানে নতুন করে আর কোনো নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। যার ফলে ঘটে এই দুর্ঘটনা।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, মূল মোড়ের সাথে লাগোয়া ওই খালের দুই পাশেই প্রায় ৫০ ফুট করে অংশ একেবারেই উন্মুক্ত। ঘটনার দিন সেখানে কোনো রেলিং বা নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিলো না। এমনকি সতর্কতামূলক কোনো সাইনবোর্ডও ছিলো না। সামান্য বৃষ্টিতেই যেখানে মুরাদপুরের ওই অংশে পানিতে রাস্তাঘাট ডুবে যায়, সেখানে চলাচলের পথে পথচারী তো বটেই যানবাহনগুলোও পানির ভেতরেও তলিয়ে যাওয়ার ঝুঁকিতে ছিল।

নগর পরিকল্পনাবিদ প্রকৌশলী সুভাষ চন্দ্র বড়ুয়া বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, ‘শুধু মুরাদপুরের এ ঘটনা নয়, এর আগে রাস্তার পাশে খালে পড়ে সিএনজিতে যাওয়া দুইজন মানুষও মারা গিয়েছিলেন। এছাড়াও খালে পথচারীদের পড়ে যাওয়া প্রায় প্রতিদিনকার ঘটনা। এটাকে কিভাবে দুর্ঘটনা বলা যায়? রাস্তার পাশে এভাবে খালের মুখ খোলা কেন থাকবে? এছাড়া এখানে যেহেতু একটা বড় প্রকল্পের কাজ চলছে, সেহেতু সেইফটি মেজার নেয়া তো বাধ্যতামূলক ছিল। এখানে রেলিং করে দেয়া যেত। সেটা না পারলে অন্ততপক্ষে সতর্কতা নির্দেশনা সম্বলিত সাইনবোর্ড দেয়া যেত। কিন্তু সেই সবের কিছুই করা হয়নি।’

জানা যায়, নগরীর ৪১টি ওয়ার্ডের বিভিন্ন এলাকায় ছোট-বড় অন্তত দেড় শতাধিক ড্রেন রয়েছে। যার পুরোটাই অরক্ষিত। এছাড়া রয়েছে ছোট বড় অসংখ্য খাল। এসব খালের পাশেও নেই কোন সীমানা দেয়াল। ফলে সামান্য বৃষ্টি হলেই পানিতে তলিয়ে যায় রাস্তাঘাট। ফলে অসাবধানতাবশত ড্রেন কিংবা খালে পড়ে মারা যাচ্ছে কেউ না কেউ। আহত হয়ে পঙ্গুত্ব বরণও করছেন অনেকে। চলতি বছরের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত অরক্ষিত ড্রেন ও খালে পড়ে দুর্ঘটনার ঘটনা ঘটেছে তিনটি। গত বছর ঘটেছে দুটি। চলতি বছরের তিনটি ঘটনায় মারা গেছেন দুইজন। আর নিখোঁজ রয়েছেন একজন। আহত হয়ে পঙ্গু হয়েছেন একজন। বাকিরা চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরলেও আজো সেসব দুঃসহ স্মৃতি বয়ে বেড়াচ্ছেন।

চলতি বছরে ড্রেনে প্রথম দুর্ঘটনা ঘটে ১৯ জুন। এদিন নগরীর চান্দগাঁওয়ে বৃষ্টির পানিতে সড়ক ডুবে গেলে সিএনজি অটোরিকশা চালক রাস্তার নিশানা বুঝতে না পেরে তিন যাত্রীসহ নালায় পড়ে যান। এ ঘটনায় শফিক নামে এক যাত্রীর পা ভেঙ্গে যায়। বাকিরা আহত হন। এ দুর্ঘটনার মাত্র ১১ দিনের মাথায় ৩০ জুন সকালে নগরীর ষোলশহর চশমা হিলে সড়ক ঘেঁষা অরক্ষিত খালে পড়ে সিএনজি অটোরিকশা তলিয়ে যায়। এ ঘটনায় সিএনজির চালকসহ এক বৃদ্ধা মারা যান। আহত হন আরও দুজন।

সবশেষ বুধবার (২৫ আগস্ট) নগরীর মুরাদপুরে আয়োজন রেস্তোরাঁর সামনের নালায় অসর্তকতাবশত পড়ে গিয়ে সালেহ আহমদ নামে এক ব্যক্তি নিখোঁজ হন। এই চারদিন পার হতে চললো কিন্তু এখন পর্যন্ত তাকে জীবিত কিংবা মৃত উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।

নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক মুরাদপুর এলাকার স্থানীয় এক বাসিন্দা বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, ‘আমি যেখানে থাকি তার পাশেই রয়েছে মির্জা খাল এবং লাগোয়া রয়েছে নালা। এই নালার উপরে কোন স্ল্যাব বা সীমানা বেষ্টনি নেই। সম্পূর্ণ অরক্ষিত অবস্থায় পড়ে আছে নালাটি। এখানে যেকোন সময় শিশু কিংবা বয়োবৃদ্ধরা পড়ে যেতে পারেন। বিষয়টি স্থানীয় মহিলা কাউন্সিলরকে জানানো হয়েছিলো। তিনি দেখবেন বলে আশ্বস্ত করেছিলেন। কিন্তু কবে যে এই দেখা শেষ হবে জানি না।’

এ বিষয়ে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, ‘চট্টগ্রাম নগরীর যেসব স্থানে খাল এবং নালা অরক্ষিত রয়েছে সেগুলোতে যেন আর কোনো অঘটন না ঘটে সেজন্য বিশেষ উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। নালাগুলোতে স্ল্যাব এবং খালে বেষ্টনি দেয়া হবে।’

তিনি আরও বলেন, নালাগুলোর উপরে স্ল্যাব না থাকলে গৃহস্থালি বর্জ্য, পলিথিনসহ বিভিন্ন ময়লা আবর্জনা নালায় পড়ে পানি চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। দেখা যায় পরিষ্কার করার কিছুদিন পরে নালা আবার আগের অবস্থায় ফিরে গেছে। তাই চট্টগ্রাম নগরীর যেসব নালার পাশে দোকান-বাড়িঘর আছে সেগুলোয় স্ল্যাব বসিয়ে দেয়া হবে। এছাড়া জনসমাগম হয় এমন স্থানগুলোতেও দ্রুত স্ল্যাব বসানো হবে। এতে করে আর কোনো দুর্ঘটনা ঘটবে না।’

মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, ‘চট্টগ্রাম নগরীতে খালগুলোর পাশে নিরাপত্তা বেষ্টনি বা ফেন্সিং করা হবে। জনসমাগম হয় এমন স্থানগুলোর খালের পাড়েও বেড়া দেয়া হবে। সবগুলো খালে তো আর বেড়া দেয়া সম্ভব নয়, যেগুলোতে দরকার হবে সেগুলোতে দেয়া হবে।’

প্রসঙ্গত, গত বুধবার (২৫ আগস্ট) চট্টগ্রাম নগরীর মুরাদপুর মোড়ের পাশের খালে পড়ে এক পথচারী পানিতে তলিয়ে যান। এখনও তার সন্ধান পাওয়া যায়নি। এর আগে ৩০ জুন চট্টগ্রাম নগরীর ষোলশহর এলাকার চশমা খালে সিএনজিচালিত অটোরিকশা উল্টে দুইজনের মৃত্যু হয়েছিল। দুইটি ঘটনার দিনই চট্টগ্রামে বৃষ্টি হয়ে জলাবদ্ধতায় খাল-নালা ছিল পানিতে একাকার।

আরও পড়ুন

টানা বৃষ্টিতে ভাসছে চট্টগ্রাম

বৃষ্টিতে তলিয়ে গেছে চট্টগ্রামের নিচু এলাকা

ড্রেনে পড়েই তলিয়ে গেলেন সবজি ব্যবসায়ী (ভিডিও)

তিনদিনেও খোঁজ মেলেনি ড্রেনে পড়া সেই ব্যবসায়ীর

বাংলাদেশ জার্নাল/ওয়াইএ

  • সর্বশেষ
  • পঠিত