ঢাকা, সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১ মিনিট আগে
শিরোনাম

বিএনপি নেতা জামাল উদ্দিন খুন: ২০ বছর পর কাসেম চেয়ারম্যানের আত্মসমর্পণ

  চট্টগ্রাম প্রতিনিধি

প্রকাশ : ০৩ জানুয়ারি ২০২৩, ১৯:৫৭

বিএনপি নেতা জামাল উদ্দিন খুন: ২০ বছর পর কাসেম চেয়ারম্যানের আত্মসমর্পণ
ছবি: প্রতিনিধি

চট্টগ্রামের ধনাঢ্য ব্যবসায়ী ও বিএনপির নেতা জামাল উদ্দীন চৌধুরীকে অপহরণের পর হত্যার মামলার আসামি কাসেম চেয়ারম্যান আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন করেছেন। আদালত তা নাকচ করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

জামাল উদ্দীন চৌধুরী হত্যার ২০ বছর পর হাতে হাতকড়া পরে কারাগারে যেতে হলো ফটিকছড়ির কাঞ্চননগরের সাবেক এই চেয়ারম্যানকে।

মঙ্গলবার চট্টগ্রামের পঞ্চম অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ নারগিস আক্তারের আদালত এ আদেশ দেন। ওই আদালতে জামাল উদ্দিন অপহরণ মামলার বিচার কার্যক্রম চলছে।

কাশেম চেয়ারম্যান চট্টগ্রামের ফটিকছড়ির উপজেলার কাঞ্চননগর উখিলবাড়ি গ্রামের মৃত বদিউল আলমের ছেলে। তিনি কাঞ্চননগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ছিলেন। তিনি ঘটনার পর থেকে প্রায় ২০ বছর বিদেশে পলাতক ছিলেন।

বিষয়টি নিশ্চিত করেন আদালতের বেঞ্চ সহকারী ফরিদ আহমেদ। তিনি জানান, হাইকোর্টে আগাম জামিনের জন্য গিয়েছিলেন কাশেম চেয়ারম্যান। সেখানে মামলা বিচারাধীন থাকায় আদালত জামিন না দিয়ে তাকে বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেন। পরে আজ (মঙ্গলবার) দুপুরে পঞ্চম অতিরিক্ত চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ আদালতে তিনি আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন করেন। শুনানি শেষে আদালত জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

জানা গেছে, ঘটনার পরই কাশেম চেয়ারম্যান পালিয়ে বিদেশে চলে যান। মাসখানেক আগে দেশে ফিরে আসেন। ২০১৪ সালে গ্রেপ্তার হওয়া সুলতান ড্রাইভার নামে এক আসামি জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশকে জানায়, জামাল উদ্দিনকে কাঞ্চননগরের গহীন পাহাড়ে নিয়ে যান তিনি। গুলি করে হত্যার আগ পর্যন্ত তিনি, কালা মাহবুব, লম্বা মাহবুব ও টেংরা ওসমান জামালউদ্দিনের সঙ্গে ছিলেন। কাশেম চেয়ারম্যানের নির্দেশে জামালউদ্দিনকে হত্যা করা হয়।

২০০৩ সালের ১৩ জুলাই চট্টগ্রাম নগরের চকবাজারের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান থেকে নগরের চান্দগাঁও এলাকার বাসায় ফেরার পথে অপহৃত হন চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির নেতা ও ব্যবসায়ী জামাল উদ্দিন। অপহরণকারীরা মুক্তিপণ হিসেবে তার পরিবারের কাছে এক কোটি টাকা দাবি করে। প্রশাসনের পরামর্শ অনুযায়ী অপহরণকারী চক্রকে মুক্তিপণের ২৫ লাখ টাকাও দেয় পরিবার। কিন্তু মুক্তি দেয়া হয়নি। পরের সংসদ নির্বাচনে আনোয়ারা থেকে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন জামাল উদ্দিন। তার পরিবার অভিযোগ করেছিল— মনোনয়ন ঠেকাতে প্রতিদ্বন্দ্বীর নির্দেশে তাকে হত্যা করে লাশ গুম করা হয়।

অপহরণের দুই বছর পর ২০০৫ সালের ২৪ আগস্ট র‌্যাবের হাতে গ্রেপ্তার কালা মাহবুব নামে এক আসামি ফটিকছড়ির কাঞ্চননগর এলাকায় গহীন পাহাড়ে জামাল উদ্দিনের কঙ্কাল দেখিয়ে দেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে। সেই কঙ্কাল উদ্ধারের পর পরিবারের সদস্যরা শনাক্ত করতে পারছিলেন না। পরে সিঙ্গাপুরে ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত করা হয়। এ ঘটনায় জামালউদ্দিনের ছেলে চৌধুরী ফরমান রেজা লিটন বাদী হয়ে নগরের চান্দগাঁও থানায় মামলা দায়ের করেছিলেন। সাড়ে তিন বছর ধরে ৯ জন পুলিশ কর্মকর্তা পর্যায়ক্রমে মামলাটি তদন্ত করেন। এ অবস্থায় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) মামলার তদন্তভার নেয়।

২০০৬ সালের ২০ জুলাই সিআইডি আনোয়ারার তৎকালীন সংসদ সদস্য সরওয়ার জামাল নিজাম, তার ছোট ভাই মারুফ নিজামসহ ২৪ জনকে অব্যাহতি দিয়ে এবং ১৬ জনকে আসামি করে অভিযোগপত্র জমা দেয়। কিন্তু ঘটনার মূল হোতাদের বাদ দেয়ার অভিযোগের বিরুদ্ধে নারাজি দেন বাদী। আদালত মামলা পুনঃতদন্তের নির্দেশ দিলে ২০০৬ সালের ১৬ আগস্ট আগের ১৬ জনকেই আসামি করে ফের অভিযোগপত্র দেয় সিআইডি। বাদী এই অভিযোগপত্রের বিরুদ্ধেও নারাজি দেন।

এদিকে মামলার আসামি কালা মাহবুবকে রাজসাক্ষী করায় আপত্তি জানিয়ে মারুফ নিজাম উচ্চ আদালত থেকে স্থগিতাদেশ নেন ২০০৭ সালে। ২০১১ সালে স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার হলে লিভ টু আপিল করেন আসামিরা। এটি খারিজের আদেশ চট্টগ্রাম আদালতে এসে পৌঁছায় ২০১৬ সালে।

২০১৬ সালের ১১ ডিসেম্বর বিভাগীয় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে মামলাটি স্থানান্তর করা হয়। ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে আদালত বাদীর নারাজি আবেদন নাকচ করে ২০০৬ সালে সিআইডির দেওয়া অভিযোগপত্র গ্রহণ করেন। দু’জন আসামি মারা যাওয়ায় তাদের বাদ দিয়ে ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে ১৪ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনালের তৎকালীন বিচারক মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী। ১৩৫ কার্যদিবস শেষ হয়ে যাওয়ায় মামলাটি ট্রাইব্যুনাল থেকে নিয়মিত আদালতে ফেরত যায়।

বাংলাদেশ জার্নাল/আরকে

  • সর্বশেষ
  • পঠিত