ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৬ মিনিট আগে
শিরোনাম

বিমএম ডিপো ট্রাজেডির এক বছর: অনেকে পায়নি ক্ষতিপূরণ

  চট্টগ্রাম প্রতিনিধি

প্রকাশ : ০৪ জুন ২০২৩, ১১:১৪  
আপডেট :
 ০৪ জুন ২০২৩, ১১:৩১

বিমএম ডিপো ট্রাজেডির এক বছর: অনেকে পায়নি ক্ষতিপূরণ
বিমএম ডিপোর ভয়াবহ বিস্ফোরণের এক বছর । ছবি: সংগৃহীত

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে বিএম কন্টেইনার ডিপোতে অগ্নিকাণ্ডে ভয়াবহ বিস্ফোরণের এক বছর পূর্ণ হচ্ছে আজ (রোববার)। গত বছরের ৪ জুন রাতে ডিপোতে বিস্ফোরণে ১২জন ফায়ার সার্ভিস কর্মীসহ ৫১জন মানুষের প্রাণহানি হয়। আহত হন আরও চার শতাধিক মানুষ। আহতদের অনেকে পঙ্গু হয়ে গেছেন। অনেকে এখনও দুর্ঘটনার ক্ষত বয়ে বেড়াচ্ছেন। যারা প্রাণ হারিয়েছেন তাদের পরিবারও পায়নি উপর্যুক্ত ক্ষতিপূরণ। পরিবারের কর্মক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে পথে বসেছে অনেকে পরিবার। যদিও ডিপো কর্তৃপক্ষের দাবি, হতাহতদের পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ দিয়েছে তারা।

শনিবার (৩ জুন) বিকেলে চট্টগ্রাম নগরের চেরাগি পাহাড় মোড়ে বিস্ফোরণের এক বছর পূর্তি উপলক্ষে কর্মসূচির আয়োজন করে চট্টগ্রাম যুব ট্রেড ইউনিয়ন নেটওয়ার্ক।

সমাবেশে বক্তারা বলেন, দুর্ঘটনার পর পর বিএম কনটেইনার ডিপো কর্তৃপক্ষ বিবৃতি ও বিজ্ঞাপন দিয়ে আহত ও নিহতদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণের ঘোষণা দিয়েছিল। কিন্তু এখনো অন্তত ৭-৮ জন শ্রমিকের পরিবার কোনো ক্ষতিপূরণ পায়নি। ডিএনএ পরীক্ষায় শনাক্ত না হওয়ার অজুহাতে এই ক্ষতিপূরণ দেয়া হচ্ছে না।

বক্তারা আরও বলেন, ক্ষতিপূরণ পাচ্ছেন না আহত শ্রমিকেরা। প্রশাসন ও ডিপো কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করলেও কোনো সুনির্দিষ্ট আশ্বাস মিলছে না। আহত শ্রমিকদের অনেকের চোখ নষ্ট হয়ে গেছে। অনেকে কানে শুনতে পান না। তাদের প্রায় সবাইকে পঙ্গুত্ব বরণ করতে হচ্ছে। এক বছর ধরে আয়-রোজগারহীন অবস্থায় জীবনযাপন করছেন। তাদের চিকিৎসার খরচ জোগাড় করা কঠিন হয়ে পড়েছে।

ভয়াবহ এই বিস্ফোরণের নেপথ্যে মালিক-কর্তৃপক্ষের স্পষ্ট দায় বা অবহেলা দেখেন বিশ্লেষকরা। এমনকি হতাহতদের স্বজন ও স্থানীয়রাও শুরু থেকেই কর্তৃপক্ষকে দায়ি করে প্রায় অভিন্ন অভিযোগ করেছিলেন। কিন্তু প্রাথমিক পর্যায়েই কর্তৃপক্ষকে দায়মুক্তি দিয়ে মামলা করে স্থানীয় পুলিশ। যেখানে পেনাল কোডের ৩০২ ধারায় স্পষ্ট মামলা করার সুযোগ দেখেছিলেন আইনজীবীরা, সেখানে পুলিশ বাদী হয়ে দুর্বল কয়েকটি ধারা (অবহেলাজনিত মৃত্যু) দিয়ে মামলা করে। সেখানেও যাদেরকে (আটজন) আসামি করা হয়েছিল তারা বিএম ডিপোর মধ্যম বা নিম্নপর্যায়ের কর্মকর্তা মাত্র। যাদের হাতে ডিপোর কার্যক্রম দেখভালের দায়িত্ব থাকলেও প্রতিষ্ঠানের ‘সেফটি-সিকিউরিটি’ বাস্তবায়নের ক্ষমতা ছিল না বলে জানা যায়।

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে বিমএম ডিপোর ভয়াবহ বিস্ফোরণের এক বছর । ছবি: সংগৃহীত

অতঃপর গত ৫ মে সীতাকুণ্ডের বিএম কন্টেইনার ডিপোর আট কর্মকর্তাকে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দিয়ে ভয়াবহ বিস্ফোরণ ও অগ্নিকাণ্ডের মামলায় চূড়ান্ত প্রতিবেদন (ফাইনাল রিপোর্ট) দাখিল করে চট্টগ্রাম জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। চূড়ান্ত প্রতিবেদনে চট্টগ্রাম জেলা ডিবি পুলিশ বলেছে, ‘অভিযুক্তরা ঘটনার জন্য দায়ী নয় বা বিস্ফোরণটি কোনো নাশকতা নয়। এটি একটি দুর্ঘটনা ছিল।’

আরও পড়ুন: অগ্নি আতঙ্কের নাম সীতাকুণ্ড

নিহত হাশেমের স্ত্রী মুসলিমা আক্তার জানান, ঘটনার দিন হাশেম কথা দিয়ে গিয়েছেন ২ ঘণ্টা পরই ফিরে আসবেন বাড়িতে। কিন্তু সেই অপেক্ষার প্রহর শেষ হয়নি আজও। নিহত হাশেমের মেয়ে সালমা আকতারের অভিযোগ, ঘটনার সময় ডিপোর ভেতরে আটকে পড়া মানুষদের বের করে নেয়ার বদলে সমস্ত গেট আটকে দেয়া হয়। এ কারণে সেখান থেকে চাইলেও বের হতে পারেননি কেউ।

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে বিমএম ডিপোর ভয়াবহ বিস্ফোরণের এক বছর । ছবি: সংগৃহীত

সীতাকুণ্ডের কুমিরা ফায়ার সার্ভিসের সিনিয়র স্টেশন কর্মকর্তা সুলতান মাহমুদ বলেন, সেদিন আমি ভাগ্যক্রমে বেঁচে গেলেও ভেঙে যায় আমার ডান হাত। শরীরে বুকে, পায়েসহ বিভিন্ন স্থানে আঘাত পেয়েছি। এখনও পুরোপুরি সেরে ওঠেনি হাত। চিকিৎসকের পরামর্শে নিয়মিত ওষুধ সেবন করে যাচ্ছি। এরপরও বেঁচে আছি সেটার জন্য আল্লাহর কাছে শুকরিয়া।

সীতাকুণ্ড মডেল থানার ওসি তোফায়েল আহমেদ বলেন, ডিবি পুলিশ বিএম ডিপোর বিস্ফোরণ-অগ্নিকাণ্ডের মামলায় ফাইনাল রিপোর্ট জমা দিয়েছে বলে জানি। সেটি সম্ভবত আদালতে এখনও শুনানি হয়নি।

প্রসঙ্গত, গত বছর ৪ জুন কুমিরার বিএম ডিপোতে বিস্ফোরণে ফায়ার সার্ভিসের ১৩ কর্মীসহ ৫১ জনের প্রাণহানি হয়। এ ঘটনায় দেড় শতাধিক আহত হন। অগ্নিনির্বাপণ করতে সময় লেগেছিল প্রায় চার দিন।

বাংলাদেশ জার্নাল/আরআই

  • সর্বশেষ
  • পঠিত