ঢাকা, মঙ্গলবার, ০৭ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৩ ঘন্টা আগে
শিরোনাম

সেই নারীকে বাবার বাড়ি পাঠিয়ে দিলো পুলিশ

  কুষ্টিয়া প্রতিনিধি

প্রকাশ : ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, ২২:৩৮  
আপডেট :
 ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, ২২:৫৬

সেই নারীকে বাবার বাড়ি পাঠিয়ে দিলো পুলিশ

স্ত্রীর মর্যাদার দাবিতে ছাত্রলীগ নেতার বাড়িতে অবস্থান নেয়া যুবলীগ নেতার সাবেক স্ত্রী জুয়েনা হোসেন লিমাকে শেষ পর্যন্ত পুলিশ প্রহরায় তার বাবার বাড়ি রাজধানীর কেরানীগঞ্জ পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। শুক্রবার দুপুরে কুষ্টিয়ার খোকসা থানা পুলিশ তাকে পিকআপভ্যানে করে রাজবাড়ী পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে আসে। এদিকে খোকসা থানায় অভিযোগ দিতে গেলেও তাকে কোনো সহযোগিতা করা হয়নি বলে অভিযোগ লিমার। এদিকে ঘটনার পর থেকে অভিযুক্ত ওই ছাত্রলীগ নেতা ও তার পরিবারের লোকজন এখনও আত্মগোপনে রয়েছে।

ভুক্তভোগী ও এলাকাবাসীর কাছ থেকে জানা গেছে, কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সায়েম হোসেন সুজনের চুনিয়া পাড়ার বাড়িতে স্ত্রীর মর্যাদার দাবিতে জুয়েনা হোসেন লিমা নামে এক নারী বুধবার রাত থেকে অবস্থান নেয়। এ সময় কৌশলে ছাত্রলীগ নেতা সুজনসহ তার পরিবারের লোকেরা বাড়িতে তালা লাগিয়ে আত্মগোপনে চলে যায়। খবর পেয়ে বুধবার রাত থেকেই খোকসা থানা পুলিশ বাড়িটিতে পাহারা বসায়। এ সময় বহিরাগতদের সহায়তায় লিমা প্রথমে বাড়ির গেটের তালা ভেঙে ওই বাড়িতে অবস্থান নেয়।

পরে বৃহস্পতিবার দুপুরে একটি কক্ষের তালা ভেঙে সেই কক্ষে অবস্থান নেন। কিন্তু হঠাৎ করেই বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে পুলিশ প্রহরা তুলে নেয়া হয়। এরপর রাত ১২টার দিকে খোকসা থানার এসআই সিরাজ খোকসার স্থানীয় সাংবাদিকদের ডেকে ওই বাড়িতে নিয়ে যান এবং বলেন, মেয়েটি ওই বাড়িতে অন্য একজনের সঙ্গে অসামাজিক কর্মকাণ্ড চলাকালীন স্থানীয়রা তাকে হাতেনাতে আটক করেছে।

ওই সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত স্থানীয় একজন সাংবাদিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, সুজনের অনুসারীরা ওই মেয়েটিকে খাবার দিতে যাওয়া নাবালক এক ছেলেকে জড়িয়ে মেয়েটির নামে মিথ্যা অপবাদ দেয়ার চেষ্টা করে। ছাত্রলীগ সভাপতির প্রেমিকা দাবিদার লিমা উপজেলা যুবলীগের একাংশের আহ্বায়ক আবু উবায়দা শাফির তালাকপ্রাপ্তা স্ত্রী। তার বাবার বাড়ি রাজধানীর কেরানীগঞ্জ। প্রায় এক যুগ আগে তাদের বিয়ে হয়। তাদের ১০ বছর বয়সী একটি ছেলে সন্তান আছে। তার নাম লাবিব মাহমুদ লিপু। প্রায় দেড় বছর আগে আবু উবাইদা শাফি জেলে থাকাবস্থায় লিমার সঙ্গে সায়েম হোসেন সুজনের বন্ধুত্ব হয়। কিছু দিন পর সেটি পরিণত হয় পরকীয়ায়। সম্প্রতি তাদের দুজনের অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ছবি মোবাইল ফোনে ছড়িয়ে পড়ে। এ ঘটনা জানাজানি হলে চলতি মাসের ৭ তারিখে যুবলীগ নেতা তার স্ত্রী লিমাকে তালাক দেন। এরপর লিমা ঢাকার কেরানীগঞ্জে তার বাবার বাড়িতে চলে যান।

স্থানীয় সূত্র জানায়, সংসার ভাঙার পর সুজনকে বিয়ের জন্য চাপ দিতে থাকেন লিমা। কিন্তু সুজন বিয়ে না করে নানা টালবাহানা করেন। গত সপ্তাহে সুজন বিয়ে করতে পারবেন না বলে লিমাকে জানিয়ে দেন। এরপর বুধবার সন্ধ্যায় লিমা চুনিয়াপাড়ায় সুজনের বাড়িতে চলে আসেন। তখন সুজনের পরিবারের সদস্যরা বাড়িতে তালা দিয়ে পালিয়ে যায়। পরে তালা ভেঙে ঘরের ভেতরে অবস্থান শুরু করেন লিমা।

আরো পড়ুন : সেই যুবলীগ নেতার স্ত্রীর পাহারায় পুলিশ

জুয়েনা হোসেন লিমা বলেন, ‘সুজনের সঙ্গে দুই বছর ধরে সম্পর্ক। এই কারণেই আগের সংসার ভেঙেছে। এখন সুজন বিয়ে করতে রাজি হচ্ছে না। তাই বাধ্য হয়েই সুজনের বাড়িতে এই অবস্থায় আসতে হয়েছে। আমার সামাজিক অবস্থানের কথা চিন্তা করেই আমি এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমাকে যদি সুজন বিয়ে না করে তাহলে আমি এখানেই আত্মহত্যা করবো।’

লিমা আরো বলেন, ‘বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে সুজন অনেকবার আমাকে ধর্ষণ করেছে। সুজনের বাড়িতে থাকার সময় আমি খোকসা থানার এসআই সিরাজুল ইসলাম ও আবুল বাশারের কাছে অভিযোগ দিয়েছি। সেসময় ওই পুলিশ কর্মকর্তারা আমার সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন।’

পরে খোকসা থানায় অভিযোগ দিতে গেলেও কোনো সহযোগিতা করা হয়নি বলে অভিযোগ লিমার।

অভিযোগের ব্যাপারে খোকসা থানার ওসি নাজমুল হুদা দাবি করেন, এ ব্যাপারে থানায় কেউ অভিযোগ দিতে আসেনি। আমরা তার জন্য ওই বাড়িতে পুলিশ প্রহরার ব্যবস্থা করেছিলাম। বৃহস্পতিবার রাতে মেয়েটি বাড়ি ফিরে যেতে চায়। যে কারণে শুক্রবার দুপুরে পুলিশ প্রহরায় তাকে রাজবাড়ী পর্যন্ত এগিয়ে দেয়া হয়।

ওসি বলেন, ‘আসলে একজনের স্ত্রী অন্যজনের বাড়িতে কেন অনশন করবেন?’ আগের স্বামীর সঙ্গে বিচ্ছেদ হওয়ার কথা জানালে ওসি এর কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি।

আরো পড়ুন : বিয়ের দাবিতে ছাত্রলীগ নেতার বাড়িতে যুবলীগ নেতার স্ত্রী

এদিকে সায়েম হোসেন সুজনের মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।

যুবলীগ নেতা শাফি জানান, ‘সন্তানের কথা ভেবে আমি ওদের দুজনের কাছে অনুরোধ করলেও ওরা শোনেনি। বাধ্য হয়ে আমি ডিভোর্স দিয়েছি। ওরা যা খুশি করুক, এখন আমি আমার ছেলেকে ফেরত চাই। সুজন তার চাচাতো ভাই শিল্পপতি মহিউদ্দিন রুবেলের প্রশ্রয় পেয়ে কাউকে কিছু মনেই করে না।’

/এসকে/

  • সর্বশেষ
  • পঠিত