ঢাকা, সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১ মিনিট আগে
শিরোনাম

‘কারও মান-অভিমান ভাঙানোর ইচ্ছে নেই’

  নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ : ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ২০:১৮

‘কারও মান-অভিমান ভাঙানোর ইচ্ছে নেই’

প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে ‘রাজনৈতিক মান-অভিমান’ ভাঙাতে কোন উদ্যোগ গ্রহণের সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়ে বলেছেন, এখানে মান-অভিমানের কিছু নেই, এটা হচ্ছে নীতির প্রশ্ন। রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত ও আইনের প্রশ্ন। দেশের মানুষকে গ্রাম পর্যায় পর্যন্ত উন্নয়নের ছোঁয়া দিতে পেরেছি সেটাই আমাদের সবচেয়ে বড় পাওয়া। এখানে কে মান-অভিমান করলো, কার মান ভাঙাতে যাব- সেটা আমি জানি না। তবে সহানুভূতি দেখাতে যেয়ে যদি অপমানিত হয়ে ফিরে আসতে হয়, সেখানে আর যাবার কোন ইচ্ছা আমার নেই।

জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাস ও মাদকের বিরুদ্ধে সরকারের জিরো টলারেন্স নীতির কথা পুনরুল্লেখ করে তিনি বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুজব, বিভ্রান্তিমূলক বা উস্কানিমূলক পোস্ট, ভিডিও প্রচারকারীকে সনাক্ত করার মাধ্যমে আইনের আওতায় আনতে সাইবার ক্রাইম মনিটরিং সেল গঠনসহ প্রয়োজনী কার্যক্রম গ্রহণ করা হচ্ছে। কোন ব্যক্তি, গোষ্ঠী, দল যাতে গুজব বা বিভ্রান্তিমূলক তথ্য প্রচার করে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও সামাজিক স্থিতিশীলতা বিঘ্নিত করতে না পারে সে বিষয়েও ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।

বুধবার জাতীয় সংসদ অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রীর জন্য নির্ধারিত ত্রিশ মিনিটের প্রশ্নোত্তর পর্বে জাতীয় পার্টির সদস্য ফখরুল ইমাম এবং সরকার দলীয় সদস্য মামুনুর রশীদ কিরনের পৃথক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।

আওয়ামী লীগ দলীয় সদস্য বজলুল হক হারুনের প্রশ্নের জবাবে সংসদ নেতা জানান, আওয়ামী লীগ সরকার সন্ত্রাস এবং জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি ঘোষণা করে চলছে। সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও দুর্নীতি মুক্ত করার উদ্দেশ্যে সন্ত্রাস, জঙ্গীবাদ এবং দুর্নীতির সঙ্গে জড়িতদের আইনের আওতায় আনতে ও তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পুলিশ ও অন্যান্য আইন শৃঙ্খলা বাহিনী নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। সন্ত্রাসী, জঙ্গি, দুর্নীতিবাজ ওয়ারেন্টভুক্ত ও সাজাপ্রাপ্ত আসামিসহ নিয়মিত মামলার আসামি গ্রেপ্তার এবং অবৈধ অস্ত্র, বিস্ফোরক, মাদকদ্রব্যসহ সকল ধরনের অবৈধ মালামাল উদ্ধারের জন্য পুলিশের নিয়মিত বিশেষ অভিযান পরিচালনা এবং আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ অব্যাহত আছে।

শেখ হাসিনা বলেন, অপরাধ নিয়ন্ত্রণে স্পর্শকাতর স্থানসমূহে চেকপোস্ট স্থাপন করে সন্দেহজনক মোটর সাইকেল, প্রাইভেটকার, অটোরিক্সা তল্লাশীসহ উক্ত যানবাহনের যাত্রীদের তল্লাশী করা হচ্ছে। এছাড়া দেশের অভ্যন্তরে মাদকদ্রব্য অনুপ্রবেশ রোধে নৌ, সড়ক ও রেলপথে চোরাচালানের সম্ভাব্য রুটসমূহে গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধিসহ বিশেষ অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। আমরা আশা করব দেশের সকল শ্রেণী পেশার মানুষ আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম ও যুব সমাজকে রক্ষায় সরকারের সঙ্গে একযোগে সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার হবেন এবং মাদক নির্মূল করতে সহযোগিতা করবেন।

রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে বাধ্য হবে মিয়ানমার- এ্যাডভোকেট ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভুর সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিন দফা চুক্তি এবং আশ্বাস দিলেও মিয়ানমার সরকার তাদের নাগরিক রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে তেমন উদ্যোগী হচ্ছে না। কিন্তু বর্তমান সরকারের কূটনৈতিক প্রধান সাফল্যই হচ্ছে আমরা রোহিঙ্গা ইস্যুতে বিশ্বজনমত সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছি। সারাবিশ্বের নেতারাই একমত পোষণ করে বলেছেন, রোহিঙ্গাদের ওপর অন্যায় করা হয়েছে এবং মিয়ানমার সরকারকে তাদের ফেরত নিতেই হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, চীন, রাশিয়া ও ভারতও রোহিঙ্গা ইস্যুতে বলেছে মিয়ানমারের উচিত রোহিঙ্গাদের ফেরত নেয়া। চীন ও ভারত রোহিঙ্গাদের জন্য ঘর-বাড়ি নির্মাণেও সাহায্য দিচ্ছে। আন্তর্জাতিক আদালতও মিয়ানমারে রোহিঙ্গা নির্যাতনের সঙ্গে জড়িতদের বিচারের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। বিমসটেক সম্মেলনের সময় মিয়ানমারের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে আলোচনার সময়ও তিনি রোহিঙ্গাদের ফেরত নেবেন বলে জানিয়েছেন। তবে আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, আন্তর্জাতিক চাপের মুখেই মিয়ানমার তাদের নাগরিক রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে বাধ্য হবে।

জাতীয় পার্টির নুরুল ইসলাম মিলনের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত বিপুল রোহিঙ্গা জনস্রোতের নজিরবিহীন এক মানবিক সঙ্কটে বাংলাদেশ সক্রিয়ভাবে সাড়া দিয়ে সীমান্ত উন্মুক্ত রেখে তাদের প্রবেশ করতে দিয়েছে। রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে দীর্ঘমেয়াদে অবস্থানের কোনও সুযোগ নেই। আমরা দ্রুততম সময়ের মধ্যে তাদের নিজ নিজ দেশে ফেরত পাঠাতে চাই। আওয়ামী লীগ সরকারের গৃহীত কূটনৈতিক প্রচেষ্টার ফলে, রোহিঙ্গাদের নিজ মাতৃভূমিতে নিরাপদ, সম্মানজনক ও টেকসই প্রত্যাবাসন সম্ভব হবে বলে আশা করা যায়।

ঢাকার চতুর্দিকে এলিভেটেড রিংরোড হবে সরকার দলীয় সদস্য এম এ মালেকের প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমানে আমরা সব মহাসড়কই ৪-লেনে উন্নীত করার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি। রাজধানী ঢাকার যানজট নিরসনে চারপাশ্বে এলিভেটেড রিং রোড করা হবে। এছাড়া পাতাল রেল নির্মাণের জন্য সমীক্ষা চলছে। পাতাল রেল নির্মাণেরও আমাদের পরিকল্পনা রয়েছে।

তিনি বলেন, এক সময় রেল ছিল মৃতপ্রায়। সেই রেলকে আমরা পুনরুজ্জীবিত করেছি। আলাদা মন্ত্রণালয় করে অর্থ বরাদ্দ দিয়ে রেলের উন্নয়নের জন্য পদক্ষেপ নিয়েছি। সারাদেশেই রেলের নেটওয়ার্ক গড়ে আমরা সেগুলো পুনরায় চালু করেছি। আকাশ পথেও উন্নয়নে নতুন নতুন বিমান কিনছি। ৬টি নতুন বিমান কিনেছি। আরও একটা আসবে। অভ্যন্তরীন ও আঞ্চলিক রূপে চলাচলের জন্য আরও কয়েকটি ছোট বিমান ক্রয় করা হবে।

তিনি বলেন, মাত্র সাড়ে ৯ বছরে আমরা দেশের যত উন্নয়ন করেছি, তা বলতে গিয়ে টানা কয়েকদিন সময় লাগবে। একদিনে বলে শেষ করা যাবে না।

জেডআই

  • সর্বশেষ
  • পঠিত