বরেণ্য কথা সাহিত্যিক অধ্যক্ষ শফীউদ্দীন সরদার আর নেই
নাটোর প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ১৪:৪৪
প্রথিতযশা শিক্ষাবিদ, কথা সাহিত্যিক ও শেকড় সন্ধানী লেখক সাবেক অধ্যক্ষ শফীউদ্দীন সরদার আর নেই। বৃহস্পতিবার সকালে নাটোর শহরের শুকুলপট্টি এলাকার নিজ বাসভবনে তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।
মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল প্রায় ৮৫ বছর। বৃহস্পতিবার বাদ মাগরিব শহরের গাড়িখানা মসজিদে নামাজে জানাযা শেষে কেন্দ্রীয় গোরস্থানে তার দাফন সম্পন্ন হবে। মৃত্যুকালে তিনি ৪ ছেলে ৫ মেয়ে ও নাতি নাতনিসহ অসংখ্য গুনগ্রাহী রেখে গেছেন।
কথা সাহিত্যিক শফীউদ্দীন সরদারের মৃত্যুর খবর পেয়ে জেলা প্রশাসক, স্থানীয় রাজনীতিবিদসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেষার মানুষ ছুটে যান তার বাস ভবনে। তার মৃত্যুতে বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ গভীর শোক ও শোকাহত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন।
এর আগে জানুয়ারি মাসের শেষ দিকে তিনি ফুসফুস ও কিডনীর জটিলতায় আক্রান্ত হলে তাকে রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে প্রায় ১০ দিন তিনি আইসিইউতে থাকার পর গত সোমবার ভোরে তার নিজ বাড়ি নাটোর শহরের শুকুলপট্টির ‘সরদার মঞ্জিল’ এ নিয়ে আসা হয়।
গুনী এই লেখক ১৯৩৫ সালের ১মে নাটোর সদর উপজেলার হাটবিলা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ঐতিহাসিক ও সামাজিক উপন্যাস, শিশু সাহিত্য, নাটক, রম্য রচনা, কল্প কাহিনী সহ শতাধিক গ্রন্থ রচনা করেন। পেশায় শিক্ষক ও পরে ম্যাজিস্ট্রেট হলেও এক সময় যাত্রাসহ মঞ্চ নাটকে দাপুটে অভিনেতাও ছিলেন তিনি।
তিনি ১৯৫০ সালে মেট্রিকুলেশন পাশ করার পর রংপুর কারমাইকেল কলেজ থেকে আইএ, বিএ অনার্স এবং এমএ ডিগ্রী লাভ করেন। পরে তিনি লন্ডন থেকে ডিপ্লোমা-ইন-এডুকেশন ডিগ্রী লাভ করেন। নিজ গ্রামের স্কুলে প্রধান শিক্ষক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করে তিনি একে একে রাজশাহী সরকারী কলেজ ও সারদাহ ক্যাডেট কলেজে অধ্যাপনা এবং বানেশ্বর কলেজ ও নাটোর রাণী ভবাণী সরকারী মহিলা কলেজে অধ্যক্ষ হিসেবে শিক্ষকতা করেন। ১৯৮২ থেকে ১৯৮৮ সাল পর্যন্ত তিনি প্রথম শ্রেণির ম্যাজিষ্ট্রেট হিসেবেও সফলতার সাথে দায়িত্ব পালন করেন।
তার রচিত প্রথম সামাজিক উপন্যাস চলনবিলের পদাবলি দেশের কোনো প্রকাশনা সংস্থা প্রকাশ না করায় তিনি আজীবন ঐতিহাসিক ও সামাজিক উপন্যাস রচনার সিদ্ধান্ত নেন।
সেই থেকে তিনি একে একে রচনা করেন রুপনগরের বন্দী, বখতিয়ারের তালোয়ার, গৌড় থেকে সোনারগাঁ, যায় বেলা অবেলায়, বিদ্রোহী জাতক, বারো পাইকার দূর্গ, রাজ বিহঙ্গ, শেষ প্রহরী, বারো ভূঁইয়া উপাখ্যান, প্রেম ও পূর্ণিমা, বিপন্ন প্রহর, সূর্যাস্ত, পথহারা পাখি, বৈরী বসতী, অন্তরে প্রান্তরে, দাবানল, ঠিকানা, ঝড়মুখো ঘর, অবৈধ অরণ্য, দখল, রোহিণী নদীর তীরে ও ঈমানদার এর মতো জনপ্রিয় ঐতিহাসিক উপন্যাস।
এছাড়াও অপূর্ব অপেরা, শীত বসন্তের গীত, পাষানী, দুপুড়ের পর, রাজ্য ও রাজকন্যারা, থার্ড পণ্ডিত, মুসাফির ও গুনাগার নামে বেশ কয়েকটি সামাজিক উপন্যাস বরই উপভোগ্য।
তার রচিত ভ্রমণ কাহিনীর মধ্যে ‘সুদূর মক্কা মদীনার পথে’ উল্লেখযোগ্য। কল্প কাহিনী সুলতানার দেহরক্ষী, রম্য রচনা রাম ছাগলের আব্বাজান, চার চাঁন্দের কেচ্ছা ও অমরত্বের সন্ধানে উল্লেখযোগ্য। শিশু সাহিত্য উল্লেখ করার মতো ভূতের মেয়ে লীলাবতী, পরীরাজ্যের রাজকন্যা ও রাজার মেয়ে কবিরাজ। ৮৫ বছর বয়সী এই লেখকের বখতিয়ারের তিন ইয়ার, রাজ নন্দিনী, লা-ওয়ারিশ, রূপনগরের বন্দী ও দ্বিপান্তরের বৃত্তান্তসহ তার মোট লেখা বইয়ের সংখ্যা শতাধিক।
বাংলাদেশ জার্নাল/এসকে