ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ২৩ মিনিট আগে
শিরোনাম

বুড়িগঙ্গার পর, উচ্ছেদ তুরাগ নদীর দুই তীরে

  নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ : ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ১৮:৩৪

বুড়িগঙ্গার পর, উচ্ছেদ তুরাগ নদীর দুই তীরে

বুড়িগঙ্গার পর এবার উচ্ছেদ শুরু হয়েছে তুরাগ নদীর অংশে। নদী দখল করে অবৈধভাবে গড়ে তোলা স্থাপনা উচ্ছেদ করেছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-চলাচল কর্তৃপক্ষ (বিআইডাব্লিউটিএ)। অব্যাহত উচ্ছেদ অভিযানের চতুর্থ পর্যায়ের প্রথম দিনে উচ্ছেদ অভিযান চালানো হয় নদীর দুই তীরে। ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে উচ্ছেদ শিথিল থাকলেও ছাড় দেয়া হচ্ছে না অন্য কাউকে।

অভিযানের দশম দিনে উচ্ছেদ করা করা হয়েছে ১২০ অবৈধ স্থাপনা।

এদিকে টাস্কফোর্সের সুপারিশ থাকা সত্ত্বেও প্রভাবশালী দখলদারদের বিরুদ্ধে অভিযান না চালানোয় দীর্ঘদিন ধরে পরিবেশবাদীসহ বিভিন্ন সংগঠন ও রাজধানীবাসীর মনে ক্ষোভ বিরাজ করছিল।

তারা বলছেন, কোনো উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনার পর কিছুদিন যেতে না যেতেই আবারও তা দখল হয়ে যায়। আশার কথা হল, উচ্ছেদের পর ফের দখল ঠেকাতে এবার নদীর তীরে ওয়াকওয়ে ও বনায়নসহ বিভিন্ন প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার।

সোমবার সকাল থেকে বিআইডাব্লিউটিএ পরিচালিত উচ্ছেদ অভিযান শুরু হয় বুড়িগঙ্গা ও তুরাগ নদীর অংশে। নদী দখল করে গড়ে ওঠা বসিলার দক্ষিনমুড়া ও ওয়াসপুরের নদীর দুই তীরে উচ্ছেদ অভিযান চালায় সংস্থাটি। এসময় ১টি চারতলা ভবন, ৮টি তিনতলা, ১১টি দোতলা, ৪২টি একতলা ভবন উচ্ছেদ করা হয়।

বিআইডাব্লিউটিএ জানায়, সোমবার উচ্ছেদ অভিযানে ৬২টি পাকা স্থাপনা, ৩৩টি আধাপাকা স্থাপনা ও ২৫টি টিনের ঘর ও টংঘর উচ্ছেদ করা হয়েছে। ১০ দিনের অভিযানে মোট উচ্ছেদকৃত স্থাপনার সংখ্যা ১ হাজার ৬২০টি।

সরজমিনে বুড়িগঙ্গার তীরে অবস্থিত আদি এলাকা হিসেবে পরিচিত বসিলার দক্ষিণমুড়া এলাকায় দেখা গেছে, নদীর পাড়ে গড়ে তোলা পাকা ভবন ও বহুতল ভবনের ক্ষেত্রে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) এর অনুমোদন নেয়া হয়নি। আবার নিয়ম অনুযায়ী নদীর তীর থেকে দেড়শো ফুট দূরত্বের মধ্যে কোনো পাকা স্থাপনা নির্মানের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডাব্লিউটিএ) অনুমোদনের প্রয়োজন পরবে। কথিত ভূমি মালিকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, তাদের সবাই অনুমোদন ছাড়াই স্থাপনা নির্মাণ করেছেন।

কথিত বাড়ি মালিক আব্দুল কালাম বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, ‘বাপ দাদার জমি। আমার বাপেও এইহানে থাকছে। এহন আইয়া ভাইঙ্গা দিতাছে।’ অনুমোদনের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি দোতালা করছি, কির অনুমোদন নিমু।’

উচ্ছেদের কারণে কিছুটা বিপাকে পরেছেন দখলদারদের বাড়িতে ভাড়া থাকা ভাড়াটিয়ারা। তবে অধিকাংশ ভাড়াটিয়া উচ্ছেদের আঁচ পেয়ে আগেই বাসা ছেড়েছেন বলেও জানা গেছে।

গত তিন পর্যায়ের উচ্ছেদ অভিযানে ছাড় দেয়া হয়নি কোনো দখলদারদের। চতুর্থ পর্যায়ের অভিযানও সে অনুযায়ী চলবে বলে জানিয়েছেন বিআইডাব্লিটিএ কর্তৃপক্ষ। অভিযানের বিষয়ে সংস্থাটির নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোস্তাফিজুর রহমান বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, এক মাত্র ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ছাড়া আর কাউকেই উচ্ছেদের ক্ষেত্রে কোনো ছাড় দেয়া হচ্ছে না। নিয়ম অনুযায়ী নদীর জায়গায় মসজিদও থাকবেনা। তবে মসজিদ কবে, কোথায় সরিয়ে নেয়া হবে সেবিষয়ে মন্ত্রণালয় থেকে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে জানান তিনি। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট বলেন, ‘আমরা যে সকল স্থানে অভিযান পরিচালনা করছি সেখানে প্রায় ৪৩টি মসজিদ আছে। ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে আমরা উচ্ছেদ চালাচ্ছি না। তবে জেলা প্রশাসক ও মন্ত্রণালয় থেকে মসজিদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।’

এর আগে প্রথম দুই পর্যায়ের উচ্ছেদ অভিযানে ১১৯৯টি স্থাপনা উচ্ছেদ করে বিআইডাব্লিউটিএ। তৃতীয় পর্যায়ে অভিযান পরিচালনা করা হয় বুড়িগঙ্গার আদি চ্যানেল কামরাঙ্গীরচর খালে। সেখানে উচ্ছেদ অভিযানে সম্পৃক্ত হয় ঢাকা জেলা প্রশাসক। এরপর পুনরায় অভিযান চালানো হচ্ছে মূল নদীতে। প্রথম দিন পর্যায়ে নয়দিনের অভিযানে উচ্ছেদ করা হয়েছে দেড় হাজার অবৈধ স্থাপনা।

মঙ্গলবার চতুর্থ পর্যায়ের দ্বিতীয় দিনের অভিযান বসিলা ব্রিজ সংলগ্ন এলাকায় পরিচালিত হবে বলে জানিয়েছেন বিআইডাব্লিউটিএ’র যুগ্ম পরিচালক এ কে এম আরিফ উদ্দিন।

  • সর্বশেষ
  • পঠিত