ঢাকা, সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৬ মিনিট আগে
শিরোনাম

মৃত্যুও আলাদা করতে পারেনি দুই ভাইকে

  জার্নাল ডেস্ক

প্রকাশ : ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ১৪:৩৮  
আপডেট :
 ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ১৪:৪৩

মৃত্যুও আলাদা করতে পারেনি দুই ভাইকে

সারাদিন কাজের শেষে রাতে দোকান বন্ধ করে বাড়ি ফেরার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন ঢাকার চকবাজারে কর্মরত তিন ভাই অপু, আলী ও ইদ্রিস। ঐসময়ে এক বন্ধুর ফোন পেয়ে ছোট ভাই ইদ্রিস দোকানের চাবি বড় ভাইদের বুঝিয়ে দিয়ে বেরিয়ে যায়। পাশেই খেলা করছিল বড় ভাই অপুর তিন বছরের ছেলে ছোট্ট আরাফাত। তখনো হয়তো তারা বুঝতে পারেনি কিছুক্ষন পর কী হতে যাচ্ছে তাদের সাথে।

হঠাৎ বিকট শব্দে বিস্ফোরণ। চার পাশে আগুনের ভয়াবহতা। মুহুর্তেই ছড়িয়ে পড়ে আগুন। আগুনের লেলিহান শিখায় প্রাণ যায় দুই ভাই ও ছোট্ট শিশুটির।

আগুন লাগার কিছুক্ষন পরই ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা তাদের কাজ শুরু করেন। সময় তখন রাত তিনটা। ধ্বংসস্তূপ থেকে লাশ উদ্ধার করতে গিয়ে নিহত দুই ভাই অপু ও আলীর মরদেহ আলাদা করতে পারেননি ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের উদ্ধারকারী সদস্যরা। তারা দুজন একে অপরকে জড়িয়ে ছিলেন। এ অবস্থায়ই একটি বডি ব্যাগে (মরদেহ যে সাদা ব্যাগে করে বহন করা হয়) করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। হাসপাতালে পাঠানোর পর দেখা যায়, দুই ভাইয়ের মরদেহের মাঝে রয়েছে শিশু আরাফাতের মরদেহ।

আগুনের হাত থেকে বাঁচানোর জন্যই হয়তো দুই ভাই আরাফাতকে মাঝে রেখে একে অপরকে জড়িয়ে রেখেছিলেন বলে ধারণা করছেন ঢাকা মেডিকেলের চিকিৎসক ও উদ্ধারকারী ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা। একই পরিবারের এই তিন সদস্যের মরদেহ শনাক্ত করেছেন ছোট ভাই ইদ্রিস।

ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে এসে মরদেহগুলো শনাক্ত করেন তিনি। স্বজন হারানোর শোকে ঢামেক মর্গে ঢুকরে কাঁদছিলেন ইদ্রিস।

ইদ্রিস জানান, ওয়াহিদ মঞ্জিলে তাদের কেমিক্যালের দোকান ছিল। সেখানেই পুড়ে মারা গেছেন তার বড় ও মেঝ ভাই। সঙ্গে মারা গেছে তার বড় ভাইয়ের ছেলে আরাফাত।

গত বুধবার রাত ১০টা ৩৮ মিনিটে রাজধানীর পুরান ঢাকার চকবাজার থানার চুড়িহাট্টা শাহী মসজিদের সামনের কয়েকটি ভবনে আগুন লাগে। মুহুর্তেই ছড়িয়ে পরে সেই আগুন। আগুন লাগার পরপরই চার তলা একটি ভবনের সামনে থাকা বিদ্যুতের ট্রান্সফর্মার বিস্ফোরণ ঘটে। ওই সময় রাস্তায় থাকা কয়েকটি গাড়িতেও আগুন ধরে যায়। তখন রাজমনি হোটেলের সামনের রাস্তায় কয়েকটি গ্যাস সিলিন্ডার ছিল। ট্রান্সফর্মার বিস্ফোরণের পর ওই গ্যাস সিলিন্ডারেও আগুন লেগে ভবনে ও রাস্তায় ছড়িয়ে পড়ে।

আগুন লাগার দীর্ঘ ১৫ ঘণ্টা পর আগুন নিভিয়ে উদ্ধার অভিযানের সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার দুপুর ১টায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন উদ্ধার অভিযান আনুষ্ঠানিকভাবে সমাপ্ত ঘোষণা করেন।

এদিকে সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) ও ঢামেক হাসপাতালের মর্গে জমা হয়েছে ৮১টি মরদেহ। মরদেহের সংখ্যা বাড়তে থাকায় ঢামেকে সেগুলোর স্থান সংকুলান সম্ভব হচ্ছে না বলে জানা গেছে ।

বাংলাদেশ জার্নাল/ এএ

  • সর্বশেষ
  • পঠিত