ঢাকা, সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৬ মিনিট আগে
শিরোনাম

রোহিঙ্গা

বাড়ছে সংকট, জন্মহার, অপরাধ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ : ২০ জুন ২০১৯, ০৯:২৮

বাড়ছে সংকট, জন্মহার, অপরাধ

আজ বিশ্ব শরণার্থী দিবস। বিশ্বজুড়ে শরণার্থীদের অমানবিক অবস্থানের প্রতি আন্তর্জাতিক নেতৃবৃন্দের সচেতনতা সৃষ্টির জন্য পালন করা হয়। যুদ্ধ, জাতিগত সন্ত্রাসের কারণে বর্তমানে বিশ্বে প্রায় ছয় কোটি মানুষ শরণার্থী। এটি এযাবৎ কালের শরণার্থী সংখ্যার সর্বোচ্চ রেকর্ড।

বাংলাদেশেও জাতিগত সন্ত্রাসের শিকার হয়ে মিয়ানমার থেকে আশ্রয় নিয়েছে বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গা শরণার্থী। রাখাইন থেকে বাংলাদেশে নতুন রোহিঙ্গা শরণার্থীর স্রোত শুরু হয় ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট। এরপর থেকে সাত লাখ ২০ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা ঠাঁই নেয় বাংলাদেশে।

আগে থেকেই এ দেশে ছিল বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গা। লাখ লাখ রোহিঙ্গা এখন বাংলাদেশের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) জানিয়েছে যে কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, বান্দরবান, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি, পটুয়াখালীসহ ৫০ জেলায় এখন রোহিঙ্গাদের অবস্থান রয়েছে।

এদিকে রোহিঙ্গাদের ভরণপোষণ, নিরাপত্তা ও উগ্রপন্থি তৎপরতায় জড়িয়ে পড়া ঠেকানো নিয়ে বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় উদ্বিগ্ন হয়ে পড়লেও নিজ দেশে তাদের প্রত্যাবাসন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। বিভিন্ন দেশের আর্থিক সহায়তাও কমে আসছে। ফলে রোহিঙ্গাদের নিয়ে সংকট আরো গভীরতর হচ্ছে।

রোহিঙ্গাদের নিয়ে কাজ করা আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সমন্বয় গ্রুপ আইএসসিজির কর্মকর্তা সৈকত বিশ্বাস বলেন, রোহিঙ্গাদের কারণে চরম ক্ষতির শিকার হয়েছে স্থানীয় লোকজন। তাদের পুনর্বাসনে ব্যাপক কর্মসূচি নিতে হবে। এ ছাড়া রোহিঙ্গাদের দ্বারা পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি হয়েছে। টাকার অঙ্কে এই ক্ষতি নিরূপণ করা যাবে না।

রোহিঙ্গাদের নিয়ে এরকম নানা উদ্বেগের মধ্যেই আজ পালিত হচ্ছে বিশ্ব শরণার্থী দিবস। দিবস উপলক্ষে উখিয়া ও টেকনাফের কয়েকটি রোহিঙ্গা শিবিরে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে। চলতি বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য ‘স্টেপস উইথ রিফিউজিস’ বা ‘শরণার্থীদের সঙ্গে পথচলা’।

শরণার্থী দিবসে উখিয়ার কুতুপালং ক্যাম্পের ২ নম্বর ব্লক থেকে একটি র‌্যালি বের করার প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। দিবসটি উদযাপন উপলক্ষে ওই ক্যাম্পে আলোচনা সভা, খেলাধুলাসহ রয়েছে নানা কর্মসূচি। রোহিঙ্গাদের জন্য অন্যতম বড় দাতা যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত রবার্ট মিলারের এসব কর্মসূচিতে অংশ নেওয়ার কথা রয়েছে।

তবে এসব কর্মসূচিতে রোহিঙ্গাদের তেমন উৎসাহ নেই। নিজ দেশের বাইরে এভাবে অনিশ্চিত জীবনযাত্রায় রোহিঙ্গারাও হতাশ। রোহিঙ্গার জন্য তহবিল সংকটে এখানে কর্মরত আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোও উদ্বিগ্ন। তহবিল বরাদ্দের জন্য বিভিন্ন দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর কাছে অব্যাহতভাবে ধরনা দিয়ে যাচ্ছে তারা।

কক্সবাজারে ইউএনএইচসিআরের কর্মকর্তা মারিন ডিন জানিয়েছেন, বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া ১১ লাখ রোহিঙ্গার জন্য যে বরাদ্দ রয়েছে, তা দিয়ে আগামী তিন মাস পর্যন্ত খাবার ও অন্যান্য মানবিক সহায়তা দেওয়া সম্ভব হবে। এ সময়ের মধ্যে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় অর্থ সহায়তা পাওয়া না গেলে ভয়াবহ বিপর্যয় নেমে আসবে। চলতি বছর রোহিঙ্গাদের জন্য ৯২ কোটি ডলার সাহায্য চেয়েছে জাতিসংঘ।

বিশ্বের সবচেয়ে বড় শরণার্থী শিবির এখন কক্সবাজারে। এ জেলায় চার দফায় ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছে। তবে এখন এখানে ঠিক কত রোহিঙ্গা অবস্থান করছে, তার সঠিক হিসাব পাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। বিভিন্ন সংস্থা ভিন্ন ভিন্ন তথ্য দিচ্ছে।

জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআরের মুখপাত্র জোসেফ ত্রিপুরা বলেন, বাংলাদেশে রোহিঙ্গা শরণার্থীর সংখ্যা এখন ৯ লাখ ১০ হাজার।

তবে বুধবার জেনেভা থেকে প্রকাশিত ইউএনএইচসিআরের প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশে এখন অবস্থান করছে ৯ লাখ ছয় হাজার ৬০০ রোহিঙ্গা।

শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ আবুল কালাম বলেন, বর্তমানে নতুন ও পুরনো মিলিয়ে উখিয়া ও টেকনাফ উপজেলায় ১০ লাখের মতো রোহিঙ্গা রয়েছে।

এদিকে, বহিরাগমন বিভাগ ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, নতুন ও পুরনো মিলিয়ে উখিয়া ও টেকনাফ উপজেলায় ১১ লাখ ১৮ হাজার ৫৫৪ রোহিঙ্গার বায়োমেট্রিক নিবন্ধন করা হয়েছে। তবে বর্তমানে সে কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।

সর্বশেষ রোহিঙ্গা সংকটের দীর্ঘ তিন বছর হতে চলছে। মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে দেড় বছর আগে। কিন্তু রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন নিয়ে অনিশ্চয়তা ক্রমে বাড়ছে। দিন যতই গড়াচ্ছে বিশ্বের বিশাল এই রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বাড়ছে অস্থিরতা। বাড়ছে খুনখারাবি থেকে শুরু করে নানা অপরাধ। স্থানীয় লোকজনও ধৈর্য হারাচ্ছে।

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে একাধিক অপরাধী গ্রুপও সক্রিয় হয়েছে। কক্সবাজার জেলা পুলিশের এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, গত ১০ মাসে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ২৭টি খুনের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় উদ্ধার হয়েছে ১৬টি অস্ত্র। উদ্ধার হয়েছে বিপুল পরিমাণ মাদক।

কক্সবাজারের পুলিশ সুপার এ বি এম মাসুদ হোসেন জানান, বিশাল রোহিঙ্গা ক্যাম্পের আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে রাখা পুলিশের পক্ষে কঠিন হয়ে পড়েছে। আইন প্রয়োগকারী সংস্থার দেড় হাজার সদস্য রাত-দিন ব্যস্ত রয়েছেন রোহিঙ্গাদের সালিশ বিচার করতে। এখানে পুলিশ সদস্যদের কষ্টের সীমা নেই।

এদিকে উখিয়া-টেকনাফের রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে রোহিঙ্গা ছেলেমেয়েদের অল্প বয়সে বিয়ে দেওয়া হচ্ছে। ব্যাপক হারে বাল্যবিয়ে ঠেকাতে কোনো সংস্থার পক্ষ থেকে কার্যকর কোনো উদ্যোগ নেই। এ অবস্থায় এখানে শিশু জন্মহারও অস্বাভাবিক বেশি। রোহিঙ্গা ক্যাম্পের জন্মহার কত- এ নিয়ে কোনো সংস্থার পক্ষ থেকে জরিপ নেই। তবে বেসরকারি একটি সংস্থার মতে, এখানে প্রতিবছর অর্ধলক্ষ শিশু জন্ম হচ্ছে।

প্রসঙ্গত, ২০০০ সালের ৪ ডিসেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে ৫৫/৭৬ ভোটে অনুমোদিত হয় যে, ২০০১ সালে থেকে জুন মাসের ২০ তারিখ আন্তর্জাতিক শরণার্থী দিবস হিসেবে পালন করা হবে। এ কারণে এ দিনটি বাছাই করা হয় যে, ১৯৫১ সালে অনুষ্ঠিত শরণার্থীদের অবস্থান নির্ণয় বিষয়ক একটি কনভেনশনের ৫০ বছর পূর্তি হয় ২০০১ সালে।

২০০০ সাল পর্যন্ত আফ্রিকান শরণার্থী দিবস নামে একটি দিবস বিভিন্ন দেশে পালিত হয়ে আসছিলো। জাতিসংঘ পরবর্তীকালে নিশ্চিত করে যে, অর্গানাইজেশন অফ আফ্রিকান ইউনিটি বা ওএইউ পরবর্তীকালে ২০ জুনকে আফ্রিকান শরণার্থী দিবস-এর পরিবর্তে আন্তর্জাতিকভাবে শরণার্থী দিবস হিসেবে পালন করতে সম্মত হয়েছে।

বাংলাদেশ জার্নাল/জেডআই

  • সর্বশেষ
  • পঠিত