ঢাকা, সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১৯ মিনিট আগে
শিরোনাম

সংসদে মতিয়া চৌধুরীর তোপে অর্থমন্ত্রী

  নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ : ২০ জুন ২০১৯, ১৮:২৪

সংসদে মতিয়া চৌধুরীর তোপে অর্থমন্ত্রী

প্রস্তাবিত বাজেটে পারিবারিক সঞ্চয়পত্রে উৎসে কর বাড়ানোর বিষয়টি সামনে এনে অর্থমন্ত্রীর কঠোর কঠোর সমালোচনা করেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি মন্ডলীর সদস্য ও সাবেক কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী। এটিকে প্রধানমন্ত্রীর স্কিম হিসেবে উল্লেখ করে ব্যবসায়ীদের বিশেষ সুবিধা দিতে কার্পণ্য না করা অর্থমন্ত্রীর বিধবা ও গ্রামীণ হতদরিদ্র নারীদের টাকার উপর চোখ পড়ার তীব্র সমালোচনা করেন তিনি।

জাতীয় সংসদেও অধিবেশনে বৃহস্পতিবার প্রস্তাবিত ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে অর্থমন্ত্রীর সমালোচনা করে মতিয়া চৌধুরী বলেন, স্পর্শকাতর কথা বলব। এতগুলো ভালো কাজ করার পর অর্থমন্ত্রী এমন একটি ব্যবস্থা নিলেন, যেটা আমি অন্তত সমর্থন করতে পারছি না। ক্ষম হে মম দীনতা। গত ৫-৬ বছর বলে বলে পারিবারিক সঞ্চায়পত্র ৯ শতাংশ করেছি। তিনি ৯ শতাংশ রাখলেন কিন্তু উৎসে কর ৫ শতাংশের জায়গায় ১০ শতাংশ করলেন। এই জিনিসটা সমর্থন করতে পারি না। এই পারিবারিক সঞ্চয়পত্র তো প্রধানমন্ত্রীর স্ক্রিম। এর ওপর নির্ভর করে গ্রামের বিধবা থেকে শুরু করে অসহায়, অস্বচ্ছল নারীরা। তিনি (অর্থমন্ত্রী) ওইখানে হাত দিলেন। ব্যবসায়ীদের সুবিধা দিচ্ছেন, শিক্ষকদের বেতন দিচ্ছেন, সরকারি-কর্মচারীদের বেতন বাড়িয়ে দিচ্ছেন, সরকারি কর্মকর্তাদের গাড়ি কেনার সুযোগ দিচ্ছেন, অনেক সেক্টরে সুবিধা বাড়ালেন। পারিবারিক সঞ্চপত্রের মালিকরাও তো বাজারের কাস্টমার; কেন সেখানে হাত দিতে গেলেন? এটা আমি বুঝতে অক্ষম।

মতিয়া বলেন, নানাভাবে ব্যবসায়ীদের সুবিধা দিচ্ছেন। কালোটাকা সাদা করা, এটা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বাস্তবতা হল কালো টাকা আছে, এটা কোনরকমে খোয়াড়ে ঢুকানোর জন্য কিছু ব্যবস্থা সরকার নিয়েছে। এটা অস্বীকার করব না। তিনি বলেন, সঞ্চয়পত্রের লোকরা তো কারো কাছে হাত পাততে পারে না। তারা কার কাছে হাত পাতবে। এই সংসদে বক্তব্য দেয়ার পর কেউ একজন আমাকে বলেছিলেন- ‘উনার তো সাইড ইনকাম নেই। ঝাড়ু মারি সাইড ইনকামের, অসৎ পথে উপার্জনের। আমার বৈধ টাকা, সেখানে গিয়ে আপনি উৎসে কর কাটবেন, এটা ঠিক না। এদিকে বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার ক্ষোভ ঝাড়লেন বিএনপি নেতাদের ওপর। বক্তব্যের শুরুতেই সরকারের সমালোচনাকারী বিএনপি নেতাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘মানুষ বুঝে গেছে, আপনারা চোর ছিলেন। যার কারণে আপনারা দৌড়ে পালিয়েছেন। আজ আন্দোলন করতে পারেন না, মাঠে নামতে পারেন না। মাঠে নামার শক্তি নেই।’

খাদ্যমন্ত্রী বলেন, যারা কৃষককে বীজ দেননি, তেল দেননি, তারাই আবার বলেন, এই সরকার অবৈধ। স্পিকারের কাছে শপথ নিয়ে, এই সংসদে এসে যে বক্তব্য দেন, তাদের স্মরণ করিয়ে দিতে চাই। এসময় একটি গল্প শোনাতে গিয়ে তিনি বলেন, একদিন এক চোর সারারাত চুরি করে নদীর ঘাটে স্নান করতে গেছেন, আর এক দরবেশ সারারাত ইবাদত করে নদীর ঘাটে স্নান করতে গেছেন। ওই সময় দরবেশ মনে করছেন, তিনি তার মতই হয়তো সারারাত ইবাদত করেছেন, আর চোর মনে করছেন, তার মতই মনে হয় সারারাত চুরি করেছেন। এমন সময় পুলিশ ওইখান দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে। পুলিশ দেখে চোর দিয়েছে দৌড়, তখন মানুষ বলে, দৌঁড়াচ্ছে কেন? তখন দরবেশ চিনলেন যে ওই লোক চোর, আর মানুষ চিনল যে তিনি দরবেশ।

বিএনপির এমপিদের উদ্দেশ্যে খাদ্যমন্ত্রী বলেন, আপনারা এই সরকারকে অবৈধ বলেন, এই সংসদে বক্তব্য দেন, নিজের জন্য প্লট চান, নিজের এলাকার উন্নয়ন চান, আবার এই সংসদকে অবৈধ বলেন, বাজে কথা বলেন। মানুষ বুঝে গেছে আপনার চোর ছিলেন, যার জন্য দৌড়ে পালিয়েছেন, যার জন্য আন্দোলন করতে পারেন না, মাঠে নামতে পারেন না। মাঠে নামার শক্তি নেই।

সম্প্রতি ধানের দাম নিয়ে কৃষকের প্রতিবাদের ব্যাখা দিয়ে খাদ্যমন্ত্রী বলেন, দেশে মোট চাল উৎপাদন হয় ৩ কোটি ৫৬ লাখ মেট্রিক টন। আর আমাদের ধারণ ক্ষমতা ২ কোটি ৭৮ লাখ মেট্রিক টন। মানুষ মনে করে, সকাল থেকে ঘুমানো পর্যন্ত যা খায় সবই খাদ্য মন্ত্রণালয়ের আওতায়, খাদ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব। আসলে তা নয়। আমরা শুধুমাত্র রেশনিংয়ের জন্য বিশেষ করে, পুলিশ, সেনাবাহিনী, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশসহ (বিজিবি) বিভিন্ন সেক্টরে যে রেশন দেওয়া হয় সে পরিমাণ খাদ্য কিনতে পারি। এছাড়া আপদকালীন দুর্যোগের জন্য ১০ লাখ মেট্রিক টন খাদ্য কেনার বিধান রয়েছে।

তিনি বলেন, এক সময় এই দেশে কৃষক খাদ্য শস্য উৎপাদনের জন্য হাহাকার করত। জমিতে ১০ মণ ১২ মণের বেশি ধান হতো না। ধানের বিড়ম্বনায় পড়েছিল। ২০১৭ সালে হাওরে যখন ধান ডুবে যায় তখন ২৯টি জেলায় ধান পোকায় খেয়ে ফেলে। ২০১৭ সালে হঠাৎ করে খাদ্য শস্য কমে যায়। তখন তড়িঘড়ি করে ট্যাক্স তুলে দিয়ে খাদ্য আমদানি করা হয়। তারপরের বছরই অর্থাৎ ইরিতে বাম্পার ফলন, আমনে বাম্পার ফলন। এবার অতিরিক্ত বাম্পার ফলন। এসব বাম্পার ফলনের কারণে এবং শ্রমিকের পারিশ্রমিক বেড়ে যাওয়ায় ধান কাটার লোক পাওয়া যায় না। আগে যেখানে ৩০০ টাকায় শ্রমিক পাওয়া যেত, এখন ৭০০, ৮০০ টাকায় শ্রমিক নিতে হয়। ফলে উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় কৃষকদের কষ্ট হয়েছে। আমরা উদ্বিগ্ন ছিলাম। পরে বিশেষ ব্যবস্থা নিয়েছি। তাৎক্ষণিকভাবে আগে থেকে দেড় লাখ মেট্রিক টন ধান, ১০ লাখ মেট্রিক টন সিদ্ধ চাল এবং দেড় লাখ মেট্রিক টন আতপ চাল কেনার সিদ্ধান্ত হয়। এজন্য কৃষি নির্বাহী কর্মকর্তাদের দিয়ে প্রান্তিক চাষিদের তালিকা করে ধান সংগ্রহ শুরু করি এবং ধান কেনা অব্যাহত রেখেছি। আরও চাঙ্গা করার জন্য আড়াই লাখ মেট্রিক টন ধান প্রতি কেজি ২৬ টাকা দরে কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এই কাজগুলো অবাহত থাকলে কৃষক ন্যায্যমূল্য পাবে। তবে এটা স্থায়ী সমাধন নয়। স্থায়ী সমাধান করতে হলে উৎপাদন ব্যয় কমাতে হবে, ধান কাটার জন্য যান্ত্রিক পদ্ধতিতে যেতে হবে।

  • সর্বশেষ
  • পঠিত