ঢাকা, মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৩ মিনিট আগে
শিরোনাম

কেরোসিন ঢেলে আগুন: বাঁচানো গেল না ফুলনকে

  নরসিংদী প্রতিনিধি

প্রকাশ : ২৬ জুন ২০১৯, ১০:৪৮

কেরোসিন ঢেলে আগুন: বাঁচানো গেল না ফুলনকে

দীর্ঘ ১৩ দিন মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে না ফেরার দেশে চলে গেলেন নরসিংদী বীরপুর এলাকার কলেজছাত্রী ফুলন বর্মণ। বুধবার ভোরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।

জানা যায়, গত ১৩ জুন রাত সাড়ে ৮টার দিকে নরসিংদীর বীরপুরে কলেজ ছাত্রী ফুলন বর্মন কেক নিয়ে বাড়ি ফিরছিল। বাড়ির আঙ্গিনায় পৌছলে পূর্ব থেকে ওৎপেতে থাকা অজ্ঞাতনামা দুইজন দুর্বৃত্ত তার হাত মুখ চেপে ধরে। পরে টেনে হিচড়ে পাশের একটি নির্জন স্থানে নিয়ে যায়। সেখানে তার শরীরে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়।

ওই সময় তাকে উদ্ধার করে প্রথমে নরসিংদী সদর হাসপাতালে ও পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করেন।

এ ঘটনায় তার বাবা যোগেন্দ্র বর্মন বাদি হয়ে আজ্ঞাত নামা দুই জনকে আসামি করে সদর মডেল থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলার তদন্ত ভার পরে জেলা গোয়েন্দা পুলিশের কাছে।

এরই গ্রেক্ষিতে ডিবি উপ-পরিদর্শক নেতৃত্বে অভিযানে নামে পুলিশ। এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের সঞ্জিব সহ ৪ জনকে আটক করে পুলিশ।

পরে তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে ঘটনার সাথে জড়িত সন্দেহে রাজু সুত্রধর নামে একজনকে শহরের শিক্ষা চত্ত্বর এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে।

রাজুর দেয়া তথ্য মতে ফুলনের ফুফাতো ভাই ভবতোষ ও আনন্দকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

এসময় পুলিশের কাছে আগুন দেয়ার কথা স্বীকার করেন নিহত ফুলন বর্মনের ফুপাত ভাই ভবতোষ ও রাজু। পরে তারা আদালতে নিজের সম্পৃক্ততা স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করে।

জবাবন্দিতে রাজু ও ভবতোষ উল্লেখ করেন, ফুলনের ফুপাত ভাই ভবতোষ এর ঘনিষ্ঠ বন্ধু রাজু সূত্রধর ও আনন্দ বর্মণ। ফুলনের পিতা যোগেন্দ্রর সাথে প্রতিবেশী সুখ লাল ও হিরা লালের সাথে বাড়ির জমি সংক্রান্ত বিরোধ চলছিল। এ নিয়ে এলাকায় সালিশ দরবার হয়েছে।

ঘটনার দুই দিন আগে ১১ জুন ভবতোষ ও তার মামী (ফুলনের মা) এর সাথে ঝগড়া হয় প্রতিবেশী সুখ লালের। এসময় ক্ষিপ্ত হয়ে ফুলনের মা বলেন, এখানে থাকবোনা। দরকার হয় জমি বিক্রী করে অন্যত্র চলে যাব।

এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে ফুলনের শরীরে আগুন দিয়ে প্রতিবেশীকে মামলায় ফাঁসানোর পরিকল্পনা করে কলেজ ছাত্রী ফুলনের ভাই ভবতোষ। ঘটনার দিন ভবতোষ তার বন্ধু রাজু সূত্রধর ও আনন্দ বর্মনকে নিয়ে বীরপুর রেল লাইনে বসে কি ভাবে কাজ সম্পন করা হবে সে পরিকল্পনা করেন।

পরিকল্পনা অনুযায়ী মামাত বোন ফুলন কেক নিয়ে বাড়ি ফেরার পথে ফুলনের মাথায় ও শরীরে কেরোসিন ঢেলে গায়ে আগুন লাগিয়ে দেয় ভবতোষ ও তার বন্ধুরা।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের উপ-পরিদর্শক আব্দুল গাফফার বলেন, বর্তমানে অগ্নিদগ্ধের বিষয়টি খুবিই আলোচিত ও সেনসিটিব। তাই অপরাধীরা প্রতিবেশিকে ফাঁসাতে এই পথ বেছে নেয়। এতে করে প্রতিবেশীরাও দমন হবে। আবার সম্পতির ওয়ারিশ পাবে ভবতোষ। সেই লোভ থেকেই তারা এই কাজ করেছে বলে তদন্তে বেরিয়ে এসেছে।

তিনি আরো বলেন, দগ্ধের ঘটনাটিকে ফাষ্টট্রেক হিসেবে গুরুত্ব দেয় জেলা পুলিশ সুপার মিরাজ উদ্দিন (বিপিএস) স্যার। ওনার নির্দেশনা নিয়েই তদন্তে নামি। এবং ঘটনার ৯ দিনের মধ্য এর নেপথ্যের রহস্য উদঘাটন করা হয়।

বাংলাদেশ জার্নাল/জেডআই

  • সর্বশেষ
  • পঠিত