ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৬ মিনিট আগে
শিরোনাম

বিলুপ্তির পথে ‘ঐতিহ্যবাহী বানর’

  ধামরাই (ঢাকা) প্রতিনিধি

প্রকাশ : ০৯ নভেম্বর ২০১৯, ২০:৩১  
আপডেট :
 ০৯ নভেম্বর ২০১৯, ২০:৪১

বিলুপ্তির পথে ‘ঐতিহ্যবাহী বানর’

ধামরাইয়ে ৪ শ বছরের ঐতিহ্যবাহী বানরগুলো বিলুপ্তির পথে। খাবার সংকট, বসবাস ও বিচরণের অনুকূল পরিবেশ না থাকায় দিন দিন কমে যাচ্ছে বানরের সংখ্যা। কালের বিবর্তনে গাছপালা কেটে তৈরি করা হয়েছে পাকা স্থাপনা। এসব স্থাপনায় সংযোগ দেওয়া হয়েছে বৈদ্যুতিক তার। ফলে বিদ্যুতায়িত হয়ে ইতিমধ্যে বেশ কিছু সংখ্যক বানর মারা গেছে।

সর্বোপরি খাবার সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে। ফলে প্রায় ৪ শ বছরের ঐতিহ্য পরিবেশ বান্ধব প্রাণীকুল ও প্রকৃতির অনন্য সম্পদ বানর আজ বিলুপ্তির পথে।

এ বানর ছিলো ধামরাইয়ের ঐতিহ্য। একসময় সহস্রাধিক বানর ছিলো ধামরাইয়ে। এখন রয়েছে মাত্র ৪ শর মতো। বর্তমানে সংখ্যায় কম হলেও এদের জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্য বরাদ্দ নেই সরকারিভাবে। তবে পৌর কর্তৃপক্ষ উদ্যোগ নিয়েছে জীববৈচিত্র্য রক্ষায়।

স্থানীয়দের কাছ থেকে জানা যায়, প্রতিবছর বাচ্চা প্রসবের মাধ্যমে ৬০-৭০টি বানর বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে বছর ঘুরতে না ঘুরতেই বানরগুলো কোথায় যাচ্ছে তা স্থানীয় লোকজনের কেউই বলতে পারেন না। এখন বানর রয়েছে মাত্র ৪ শ টি।

প্রায়ই দেখা যায় ক্ষুধার্ত বানরগুলো খাবার সংগ্রহে বাসাবাড়ি, দোকানপাট ও পথচারীদের বিভিন্ন খাদ্য উপকরণ নিয়ে দৌড়ে যাচ্ছে। ক্ষুধার্ত বানরের উৎপাতে অতিষ্ঠ হয়ে উঠছে পৌরবাসী। পৌর এলাকার বিভিন্ন বাসা-বাড়ির ছাদ, টিনের চাল ও বিভিন্ন স্থাপনায় প্রায় চার শ বানর বসবাস করে। কবে নাগাদ বানরগুলো এ স্থানে আবাস গড়ে তুলেছে তা ঠিক করে কেউ বলতে না পারলেও ষোড়শ শতাব্দীতে ধামরাইয়ে বানরগুলোর আবির্ভাব ঘটে বলে দাবি অনেকের।

এক সময় ধামরাই ছিলো বানরের অভয়ারণ্য। বর্তমানে খাদ্য সংকটে বানরগুলো মানুষের বাসাবাড়িতে হানা দিচ্ছে। অনেক বানরই জীর্ণ-শীর্ণ, ক্ষত ও লোমবিহীন হয়ে গেছে। একসময় নিজস্ব অর্থায়নে বানরগুলোকে অনেকে খাবার দিতেন। কিন্তু এখন তেমন কাউকে খাবার দিতে দেখা যায় না। আবেদন থাকলেও প্রাণীকুলের ঐতিহ্য ও পরিবেশ বান্ধব ধামরাইয়ের বানর বাঁচিয়ে রাখার জন্য কোন উদ্যোগ নেই সরকারিভাবে।

তবে পৌরকর্তৃপক্ষ বানরগুলো রক্ষায় বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছে। এরই মধ্যে বানরগুলোর খাবারের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে এক লাখ টাকা। রোববার ও সোমবার সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায় উপজেলা চত্বর, হুজুরিটোলা, মোকামটোলা, কায়েতপাড়া, বরাতনগরসহ প্রায় ছয়টি স্থানে বানরগুলোকে রুটি, কলা ও বিস্কুট খেতে দেওয়া হয়েছে।

স্থানীয় বাসিন্দা লাল মিয়া, ফজল হক, আলমগীর হোসেন ও খোরশেদ আলম বাংলাদেশ জার্নালকে জানান, পৌর এলাকার বিভিন্ন বাসা-বাড়ি, খাবারের দোকান এবং বাজার করে নিয়ে যাওয়ার সময় পথচারীদের ওপর হানা দিয়ে খাদ্য সামগ্রী নিয়ে যাচ্ছে ক্ষুধার্ত বানরগুলো। গাছের বিভিন্ন ধরনের ফলও খেয়ে ফেলছে এরা। এছাড়া সুযোগ পেলেই রান্না করা খাবারও খেয়ে ফেলে বানরগুলো। কোনো দর্শনার্থীর হাতে কিছু দেখলেই খাবার মনে করে বানরগুলো দল বেধে নিচে নেমে আসে। তারা মনে করেন, খাবারের অভাবে বানরগুলো এখন বিলুপ্তির পথে। ক্ষুধার যন্ত্রণায় বানরগুলো এখন দল বেধে মানুষের বাসা বাড়িতে হানা দিচ্ছে। তাদের দাবি, জীববৈচিত্র্য বাঁচিয়ে রাখার স্বার্থে বানরের খাবারের জন্য সরকারিভাবে বরাদ্দ থাকা প্রয়োজন।

উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. সাইদুর রহমান বলেন, খাবারের অভাবে বেশীরভাগ বানর অসুস্থ হয়ে পড়ছে। অনেক সময় মারাও যাচ্ছে। তবে কোনো বানর অসুস্থ হয়েছে জানতে পারলে আমাদের কর্মকর্তারা তাৎক্ষণিক চিকিৎসার জন্য ছুটে যান।

পৌর মেয়র গোলাম কবির বলেন, বানরগুলোকে রক্ষায় পৌর কর্তৃপক্ষ বেশ কিছু উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এগুলোর খাবারের জন্য পৌরসভার পক্ষ থেকে এক লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। গত রোববার ও সোমবার দুইদিন বিভিন্ন স্পটে বানরগুলোকে খাবার দেওয়া হয়েছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবুল কালাম বলেন, সরকারিভাবে বানরের জন্য কোন বরাদ্দ নেই। তবে বিশেষ ব্যবস্থাপনায় খাবারের ব্যবস্থা করা যায় কিনা উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করা হবে।

বাংলাদেশ জার্নাল/এইচকে

  • সর্বশেষ
  • পঠিত