ঢাকা, সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৭ মিনিট আগে
শিরোনাম

শিশু মাহিমাকে কোলে নিয়ে নার্সরাও কাঁদলো

  নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ : ১২ নভেম্বর ২০১৯, ২২:১৫

শিশু মাহিমাকে কোলে নিয়ে নার্সরাও কাঁদলো
মাহিমা। ছবি: সংগৃহীত

ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতালের পরিবেশ গুমট হয়ে আছে। চিৎকার করে কাঁদছে শিশু মাহিমা। মা মা বলে চিৎকার শুনে কেউ এগিয়ে আসছে না। তাকে কোলে নিয়ে নার্সরাও কাঁদছে। কি করবে বুঝতে পারছে না কেউ। কি করে বোঝাবে ওকে, মা আর আসবে না। অথচ মাত্র কয়েকঘণ্টা আগে ট্রেনে মায়ের কোলে ঘুমিয়ে ছিলো মাহিমা। সেখানেই চিরদিনের জন্য মাকে হারিয়ে ফেলে সে। দুর্ঘটনার পর স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতালে পাঠায়।

মাথায় আঘাত পেয়েছে মাহিমা। সকাল ৮টার দিকে তাকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতালে আনা হলে মাথায় দুটি সেলাই দিয়েছে ডাক্তাররা। এরপর থেকে তার ঠাঁই হয় নার্সদের কোলে। কোনোভাবেই যখন মাহিমার কান্না থামাতে পারছিল না নার্সরা তখন সাহায্য নিয়েছে চকলেট ও চিপসের। এগুলো পেয়ে কিছুক্ষণ কান্না থামলেও খুঁজতে শুরু করে তার মাকে। তখনও নার্সরা জানে না তার মা কোথায়, বেঁচে আছে কী মারা গেছে?

হঠাৎ করেই মঙ্গলবার দুপুর দুইটার দিকে শাহ আলম নামে এক যুবক হাসপাতালে এসে দাবি করে শিশু মাহিমা তার ভাতিজি। এ সময় শিশুটির ফুফু আয়েশা বেগমও সঙ্গে আসেন। তারা জানান মাহিমার বাবার নাম মাঈনউদ্দিন এবং মায়ের নাম কাকলী বেগম।

ট্রেন দুর্ঘটনার খবর শুনেই তারা চাঁদপুর থেকে ছুটে আসেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া হাসপাতালে। পুরো হাসপাতাল খুঁজে ভাবি কাকলী বেগমকে না পেলেও একপর্যায়ে নার্সদের কোলে পান ভাতিজি মাহিমাকে। চাচাকে দেখেই কোলে চলে যায় মাহিমা। এ সময় তাদের ভাবি কাকলী বেগমকে কোথাও না পেয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন তারা।

হাসপাতালের রেজিস্ট্রার খুঁজেও শিশুটির মায়ের খোঁজ মেলেনি বলে জানান চাচা। শিশুটির চাচা শাহ আলম বার বার বলছিলেন জীবিত বা মৃত তাকে দেখতে চাই। কি জবাব দেব তার বাবাকে।

হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মো. শওকত আলী এসময় তাকে বার বার সান্ত্বনা দেয়ার চেষ্টা করছিলেন। একই সময় শিশুটির আম্মা আম্মা চিৎকারে হাসপাতালের নার্সসহ উপস্থিত অনেকেই চোখের পানি ধরে রাখতে পারেনি। দুপুর আড়াইটা পর্যন্তও শিশুটির মায়ের খোঁজ মেলেনি। বিকেল তিনটার পর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ শিশুটিকে তার চাচা ও ফুফুর হাতে বুঝিয়ে দেন।

এ সময় ব্রাক্ষণবাড়ীয়ার জেলা প্রশাসক হায়াত উদ দৌল্লা খাঁন, সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফিরুজউর রহমান অলিউরসহ স্থানীয় সাংবাদিকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। পরে কাঁদতে কাঁদতে শিশুটিকে নিয়ে তার চাচা হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে যান। জানা যায় মাহিমার মা আর নেই। তবে ছোট্ট শিশু মাহিমা এখনও জানে না তার মমতাময়ী মা আর বেঁচে নেই। ঘাতক ট্রেন কেড়ে নিয়েছে তার মায়ের প্রাণ। তাকে কোলে নিয়ে কপালে চুমু এঁকে আর হয়তো কেউ গাইবে না ঘুমপাড়ানি গান!

মাহিমার বাবা মাঈন উদ্দিন একটি হোটেলে কাজ করেন। খবর পেয়ে স্ত্রীর মরদেহ নিতে এসে তিনি সাংবাদিকদের জানান, সিলেটের শাহজালাল (র.) মাজারে মানত ছিলো তাদের। সেই মানত পূর্ণ করতে কাকলী মেয়ে মাহিমাসহ কয়েকজন স্বজনের সঙ্গে সিলেটে যান। সেখান থেকেই উদয়ন এক্সপ্রেস ট্রেনে করে ফিরছিলেন তারা। ট্রেন দুর্ঘটনায় কাকলী মারা গেছেন। এ ঘটনায় মাহিমা আহত হয়েছে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা প্রশাসক হায়াত উদ দৌল্লা খাঁন জানান, হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আহতদের সুচিকিৎসার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। মুমূর্ষু রোগীদের ঢাকা-সিলেট পাঠানো হয়েছে। রোগীদের রক্তের ব্যবস্থাসহ নিহত ১৬ জনের অভিভাবকদের হাতে ২৫ হাজার করে টাকার চেক প্রদান করা হয়েছে। এছাড়া নিহতদের বিনা খরচে তাদের বাড়িতে পাঠানো হয়েছে বলে জানান তিনি।

প্রসঙ্গত, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলায় দুটি ট্রেনের মুখোমুখি সংঘর্ষে ১৬ জন নিহত হয়েছেন। সোমবার দিবাগত রাত পৌনে ৩টার দিকে উপজেলার ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথের মন্দভাগ রেলওয়ে স্টেশনের ক্রসিংয়ে আন্তঃনগর উদয়ন এক্সপ্রেস ও তূর্ণা নিশীথা ট্রেনের মধ্যে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

বাংলাদেশ জার্নাল/এইচকে

  • সর্বশেষ
  • পঠিত