ঢাকা, মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৮ মিনিট আগে
শিরোনাম

সৌদি আরবে নারীকর্মী না পাঠানোর দাবি সংসদে

সৌদি আরবে নারীকর্মী না পাঠানোর দাবি সংসদে
ফাইল ছবি

এ বছর জানুয়ারি থেকে অগাস্ট পর্যন্ত আট মাসে ৮৫০ জন নারী দেশে ফিরে আসার পর তাদের মুখে সেখানে যৌন নিপীড়নসহ নানা ধরনের নির্যাতনের খবর গণমাধ্যমে আসার পর রক্ষণশীল ওই দেশটিতে আর নারী শ্রমিক না পাঠানোর দাবি উঠেছে সংসদে।

জাতীয় পার্টির নেতা মুজিবুল হব চুন্নু প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রীর কাছে এক সম্পূরক প্রশ্নে বলেন, সৌদি আরবে গৃহকর্মীদের উপর নানা ধরনের অত্যাচার ও যৌন নির্যাতন করা হয়। এটা একটা স্বীকৃত বিষয় যে- অনেক নারী কর্মী নির্যাতনের কারণে পালিয়ে যায়। তারা জেলে যাচ্ছে, বাংলাদেশে ফেরত আসছে। বহির্বিশ্বে নারী কর্মী পাঠানো নিয়ে নানা প্রশ্ন আসছে।

নারী কর্মীদের যৌন নির্যাতন বন্ধ করে চাকরিসহ বেতন নিশ্চিত করতে সরকারের পদক্ষেপ জানতে চান তিনি।

জবাবে প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী ইমরান বলেন, গৃহকর্মীর বিষয়ে আপনারা যতটা চিন্তিত তার থেকে বেশি সরকার চিন্তিত। এ ব্যাপারে অনেক পদক্ষেপ ইতিমধ্যে নেওয়া হয়েছে।

কয়েকদিন আগে ঢাকাস্থ সৌদি আরব দূতাবাসের শার্জ দ্যা অ্যাফেয়ার্সকে তলবের তথ্য তুলে ধরে তিনি বলেন, সেখানে এই বিষয়গুলি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আমাদের সৌদি আরবে যে রাষ্ট্রদূত রয়েছে তাকেও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে ওই দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এগুলো তোলার জন্য।

মন্ত্রী জানান, আগামী ২৬-২৭ নভেম্বর জয়েন্ট টেকনিক্যাল গ্রুপের একটি বৈঠক সৌদি আরবে অনুষ্ঠিত হবে। সেখানেও এই প্রশ্নগুলো তোলা হবে।

এরপর সংসদে বিষয়টি নিয়ে একের পর এক প্রশ্নে পড়েন প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী; এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আক্রমণাত্মক ছিলেন জাতীয় পার্টির কাজী ফিরোজ রশীদ।

তিনি বলেন, বলা হচ্ছে রিক্রুটিং এজেন্সি বিদেশে কর্মী পাঠায়। তাহলে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বটা কী? মা-বোনদের আমরা পাঠিয়ে দিচ্ছি। ওই খান থেকে যৌন নির্যাতনসহ নানা রকম অন্যায় অত্যাচারের শিকার হয়ে অবশেষে লাশ হয়ে ফিরে আসে। এদের সকলেই পোস্টমর্টেমে লেখা থাকে ‘স্বাভাবিক মৃত্যু’। সকলেরই একই রকম রিপোর্ট। এটা তারা (সৌদি আরব) করে। ওখানে পোস্টমর্টেম যে হয়, সেটাও বাংলাদেশ দূতাবাস দেখে না। মন্ত্রণালয় কোনো পদক্ষেপ নেয় না।

জাতীয় পার্টির এই নেতা বলেন, এভাবে আমাদের মা-বোনদের নিয়ে কি ব্যবসা করতে পারি? স্বাধীন দেশ হিসেবে আমাদের সম্মান আছে, ইজ্জত আছে। মাত্র কয়েকটি টাকার জন্য কেন তাদের পাঠাতে হবে? অবিলম্বে এটা বন্ধ করতে হবে।

মন্ত্রীর উদ্দেশে ফিরোজ রশীদ বলেন, একেকজন মহিলা ফেরত আসে, আপনি (মন্ত্রী) দেখেন না, তাদের উপর কী অন্যায় অত্যাচার করা হয়? আমাদের ঘরে বা বোন নেই? কেন কয়েকটি টাকার জন্য তাদের পাঠাব?

সৌদি আরবে নারীদের পাঠানো বন্ধের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, পাঠিয়েছে দালালরা, আর উনি (মন্ত্রী) খালাস! দালালরা নিয়ে তাদের হাতে ছেড়ে দিচ্ছে। বেচাকেনা হচ্ছে রীতিমতো। মেয়েদের হাট বসে, কে কত দাম দিয়ে কিনে নিয়ে যাবে! আমরা কেন এটার খবর রাখি না? স্পষ্টভাবে জানতে চাই, এটা অবিলম্বে বন্ধ হবে কি না? মা-বোনদের পাঠিয়ে দেশ বিক্রির টাকা আমাদের দরকার নেই। বন্ধ করবেন কি না?

তার প্রশ্নের জবাব দিয়ে দাঁড়িয়ে মন্ত্রী ইমরান আহমদ বলেন, এটা মাঠের বক্তৃতার মতো। এই হাউজকে জানাতে চাই- যেসব নারী লাশ হয়ে বা নির্যাতিত হয়ে আসছে... গত কয়েক মাসে ১৬০টি ট্রাভেল এসেন্সির লাইসেন্স স্থগিত করে রেখেছি। তিনটি লাইসেন্স বাতিল করেছি। দোষীদের জরিমানাও করেছি। আমরা জিরো টলারেন্সে আছি।

তিনি আরও বলেন, আমরা আইন করে দিচ্ছি। যারা বিদেশ পাঠাবে সৌদি আরবে ওদের কাউন্টার পার্ট রিক্রুটিং এজেন্সির সম্পূর্ণ ডিটেইলস আমাদের দিতে হবে। যাতে সৌদি আরবকেও আমরা তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে বলতে পারি।

বাংলাদেশ জার্নাল/এইচকে

  • সর্বশেষ
  • পঠিত