ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১৯ মিনিট আগে
শিরোনাম

কুড়িগ্রামে হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন নিয়ে পুলিশের সংবাদ সম্মেলন

  কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি

প্রকাশ : ১৯ নভেম্বর ২০১৯, ১৮:০০

কুড়িগ্রামে হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন নিয়ে পুলিশের সংবাদ সম্মেলন

কুড়িগ্রামে এবছরে হত্যাকাণ্ড ঘটেছে ৩৯টি। যা বিগত বছরগুলোর চেয়ে বেশি। সম্প্রতি নিরীহ মানুষের মরদেহও উদ্ধার হচ্ছে। এতে জনমনে দেখা দিয়েছে উৎকণ্ঠা। তবে পুলিশ বলছে, অধিকাংশ হত্যাকাণ্ডে রহস্য উৎঘাটন ও আসামিদের গ্রেপ্তার করতে পারার কৃতিত্ব আছে পুলিশের। সামাজিক অনাচার, উচ্ছৃঙ্খলতা, নীতিহীনতা, ধর্মীয় অনুশাসন না মানা এসব হত্যাকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ছে মানুষ। যার পেছনে পারিবারিক কলহ, অর্থ মাদক ও নারীকে ঘিরে অপরাধ হচ্ছে বেশি।

কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার নামাজের চরে ধান ক্ষেতে পল্লী চিকিৎসক জয়নাল আবেদীনের (৩৮) ক্ষত-বিক্ষত মরদেহ ও রৌমারীতে কাঁশবনে কিশোরী মমতাজ খাতুন জিম্মিকে (১৫) গণধর্ষণ ও হত্যা মামলাল অগ্রগতি নিয়ে স্থানীয় গণমাধ্যম কর্মীদেরকে নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছেন পুলিশ সুপার।

মঙ্গলবার দুপুর ১২টায় পুলিশ সুপার কনফারেন্স কক্ষে সংবাদ সম্মেলনে এ লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মহিবুল ইসলাম খান বিপিএম।

এসময় তার সাথে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মেনহাজুল আলম, এডিশনাল এসপি (উলিপুর সার্কেল) আল মাহমুদ, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) উৎপল রায় প্রমুখ।

সংবাদ সম্মেলনে জেলার সকল প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন।

লিখিত বক্তব্যে পুলিশ সুপার জানান, চলতি বছরের ২০ অক্টোবর উলিপুর উপজেলার দক্ষিণ নামাজের চরের সোহরাব আলীর পুত্র পল্লী চিকিৎসক জয়নাল আবেদীনকে হত্যা করে তার প্রতিবেশী রোকেয়া, হাফিজুর মাতব্বর, বুদ্ধু, ফরিদ ও শমসের। তারা পরকীয়া সংশ্লিষ্টতায় তাকে হত্যা করে মরদেহ ক্ষত-বিক্ষত করে ধানক্ষেতে ফেলে রাখে। মামলা নং-২৮; ধারা-৩০২/৩৪। পুলিশ এ ঘটনায় ৪জনকে গ্রেপ্তার করেছে। ৩জন এখনও পলাতক রয়েছে। গ্রেপ্তারকৃতরা দোষ স্বীকার করে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।

অপরদিকে ১৬ অক্টোবর রৌমারীর ঘুঘুমারীর শাহ আলমের কন্যা মমতাজ খাতুন জিম্মিকে প্রেমের প্রস্তাবে ব্যর্থ হয়ে আসামি রমজান আলী তার বন্ধু নুরন্নবী, রাজ্জাক ও হামিদুল মেয়েটিকে অপহরণের পরিকল্পনা করে। মেয়েটি স্কুল শেষে কাশবনের ভিতরে দিয়ে বাড়িতে আসার সময় রমজানের নেতৃত্বে আসামিরা মেয়েটিকে অপহরণ করে দুর্গম চরে নিয়ে গণধর্ষণ করে। পরে গলাটিপে তাকে হত্যা করে।

২০ অক্টোবর রৌমারী উপজেলার শৌলমারী ইউনিয়নের ঘুঘুমারির চরের কাঁশবন থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করে। মামলা নং-১২; ধারা-৩০২/৩৪।

এ ঘটনায় সাব-ইন্সপেক্টর (এসআই) আখতার ১৭ দিন এলাকার মানুষের সাথে মিশে গিয়ে তথ্য সংগ্রহ করে। তাছাড়া উন্নত প্রযুক্ত ব্যবহার করে অভিযুক্ত ৪ আসামিকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়।

উভয় আসামিরা দোষ স্বীকার করে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করায় এই মামলার রহস্য উদ্ঘাটন করা সম্ভব হয়।

একইভাবে কুড়িগ্রাম জেলা শহরের হাটির পাড় এলাকায় নিজ ঘরে শারমিন নামে এক গৃহবধূর মরদেহ উদ্ধার, কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে পার্কিং করে রাখা একটি বাসের ভেতর থেকে শিশু হেলপারের মরদেহ উদ্ধার, নাগেশ্বরী পৌর এলাকায় নিজ বাড়িতে স্বামী-স্ত্রীর মরদেহ উদ্ধার, একই এলাকায় রাস্তার পাশে ধানক্ষেত থেকে রাজা নামে এক যুবকের মরদেহ উদ্ধারের প্রতিটি হত্যার রহস্য নিয়ে কথা বলেন পুলিশ সুপার।

তিনি জানান, ২৭ সেপ্টেম্বর নাগেশ্বরী উপজেলার পৌর এলাকার নিজ বাড়ি থেকে নজরুল ইসলাম ম্যানা ও রুমি বেগম দম্পতির মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে রমজান, মাইদুল ও সাইদুরসহ ছয় আসামিকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। সুদের টাকার লেনদেন নিয়ে সৃষ্ট শত্রুতার জেরে খুন হন ওই দম্পতি। জিজ্ঞাসাবাদে আসামিরা হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে।

২৮ সেপ্টেম্বর জেলা শহরের কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে পার্কিং করা একটি বাসের ভেতর থেকে হেলপার শিপনের লাশ উদ্ধার করা হয়।

পুলিশ জানায়, শিপনের কাছে থাকা একটি মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নিতে গিয়ে সহকর্মী সোহেল ইসলামের হাতে তার মৃত্যু হয়। পরে হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে সোহেলকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তিনি আদালতে হত্যার দায় স্বীকার করে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়।

গত ৯ অক্টোবর কুড়িগ্রাম শহরের হাটির পাড় এলাকায় নিজ ঘর থেকে গৃহবধূ শারমিন আক্তারের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় ওই গৃহবধূর মাদকাসক্ত স্বামী মাইদুল ইসলাম বাবুকে ঢাকার কমলাপুর এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

পুলিশ জানিয়েছে, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সে তার স্ত্রীকে হত্যার কথা স্বীকার করেছে।

গত ১৯ অক্টোবর নাগেশ্বরীর নাগেশ্বরী-ফুলবাড়ী সড়কের বালাটারী জোড়াব্রিজ সংলগ্ন একটি ধানক্ষেত থেকে রাজা নামে এক যুবকের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনাকে পুলিশ বলছে, সড়ক দুর্ঘটনা আর পরিবারের দাবি মাদক ব্যবসায়ীরা বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করে।

কুড়িগ্রাম পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মহিবুল ইসলাম খান বলেন, পুলিশ ইতোমধ্যে অধিকাংশ হত্যাকাণ্ডে রহস্য উদ্ঘাটনসহ আসামি গ্রেপ্তার করতে পেরেছে।

তিনি সাংবাদিকদেরও অপরাধের মূল কারণ শনাক্তসহ জনসচেতনতা সৃষ্টি করতে প্রতিবেদন করার কথা বলেন।

বাংলাদেশ জার্নাল/জেডআই

  • সর্বশেষ
  • পঠিত