ঢাকা, সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৪ মিনিট আগে
শিরোনাম

মুক্ত যশোরে প্রথম জনসভা হয়েছিল আজ

  যশোর প্রতিনিধি

প্রকাশ : ১১ ডিসেম্বর ২০১৯, ১৩:২১

মুক্ত যশোরে প্রথম জনসভা হয়েছিল আজ

আজ ঐতিহাসিক ১১ ডিসেম্বর। গৌরবের এক অবিস্মরণীয় দিন। এই দিনে স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী সরকারের প্রথম জনসভা অনুষ্ঠিত হয় যশোরে। শুধু যশোরের মানুষদের জন্য এ গৌরব নয়, এ গৌরব গোটা জাতির। এই দিনটি আমাদের জাতীয় জীবনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও গৌরবময়। এই দিনে যশোর টাউন হল ময়দানে অনুষ্ঠিত হয় অস্থায়ী সরকারের প্রথম ঐতিহাসিক জনসভা। স্বাধীনতার রক্তিম সূর্যালোকে উদ্ভাসিত হয়ে ওঠে জনসভাস্থল। এ সময় বিজয়ের আনন্দ উল্লাসে মুখর হয়ে ওঠে জনপদ।

মুক্তিযোদ্ধাদের রক্তক্ষয়ী মরণপণ লড়াই ও আত্মত্যাগে যশোর প্রথম হানাদারমুক্ত হয়। উত্তোলিত হয় লাল সবুজের পতাকা। বাংলাদেশের প্রথম মুক্তাঞ্চল যশোর হওয়ায় অস্থায়ী সরকার যশোরে জনসভা করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। এই জনসভা অনুষ্ঠিত হয় ১১ ডিসেম্বর। জনসভাটি পরিণত হয়ে ওঠে মুক্তিযুদ্ধে নানাভাবে অংশ নেওয়া মানুষদের মিলন মেলায়।

বৃহত্তর যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সোহরাব হোসেনের সভাপতিত্বে এই সভায় উপস্থিত ছিলেন প্রবাসী সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ। আরো হাজির ছিলেন অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম, ফণীভূষণ মজুমদার, রওশন আলী, ভাষাসৈনিক হামিদুজ্জামান (এহিয়া), ব্যারিস্টার আমিরুল ইসলাম, মোশাররফ হোসেন, তবিবর রহমান সরদার, এমআর আকতার মুকুল, চলচ্চিত্রকার জহির রায়হান প্রমুখ।

প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ তার ভাষণে সর্বস্তরের মানুষকে স্বাধীনতাযুদ্ধের চেতনায় দেশ পুনর্গঠনে আত্মনিয়োগ করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘আর ধ্বংস নয়, যুদ্ধ নয়। এ মুহূর্তে কাজ হলো যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশকে গড়ে তোলা।’

মুক্তবাংলার প্রথম প্রধানমন্ত্রী যশোরের তৎকালীন জেলা প্রশাসক ওয়ালিউল ইসলাম এবং কোতয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কাঞ্চন ঘোষালকে নির্দেশ দেন, আইন-শৃঙ্খলার যেন অবনতি না ঘটে। একই সঙ্গে তিনি সকলকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘আপনারা আইন নিজের হাতে তুলে নেবেন না। অপরাধী যেই হোক, তাকে আইনের হাতে সোপর্দ করবেন।’

তাজউদ্দীন আহমদ বলেছিলেন, ‘স্বাধীন দেশে ধর্ম নিয়ে আর রাজনীতি চলবে না। আর তাই জামায়াত, মুসলিম লীগ ও নেজামে ইসলামকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হলো।’

তিনি জনতার উদ্দেশে বলেছিলেন, ‘এই মুহূর্তে আমাদের কাজ হলো, যুদ্ধ বিধ্বস্ত বাংলাদেশকে গড়ে তোলা।’ স্বাধীনতা যুদ্ধের চেতনায় দেশ পুনর্গঠনে আত্মনিয়োগে দেশবাসীকে আহ্বান জানান মুক্তিযুদ্ধের শীর্ষ এই সংগঠক।

এ জনসভা যখন হয়, তখন যশোরের আশপাশে যুদ্ধ চলছিল। বিশেষত খুলনায় তখনও পাকিস্তানি সেনারা শেষ চেষ্টা হিসেবে যুদ্ধ করছিল। খুলনা পাকিস্তানি হানাদারমুক্ত হয় ১৭ ডিসেম্বর। এর আগের দিন ১৬ ডিসেম্বর ঢাকায় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর প্রায় এক লাখ সেনা আত্মসমর্পণ করে। প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ পেট্রাপোল-বেনাপোল সীমান্ত দিয়ে যশোর শহরে আসেন। আর জনসভা শেষে যশোর রোড ধরে কলকাতা ফিরে যান।

মুক্ত দেশের মাটিতে অনুষ্ঠিত প্রথম এ জনসভার খবর সংগ্রহে উপস্থিত ছিলেন লন্ডনের ডেইলি টেলিগ্রাফ পত্রিকার সাংবাদিক পিটার গিল, নিউ ইয়র্ক টাইমস পত্রিকার সিডনি এস এইচ সানবার্গ, বালটিমোর সান পত্রিকার প্রতিনিধি, ওয়াশিংটন পোস্টের প্রতিনিধিসহ বহু বিদেশি সাংবাদিক।

বাংলাদেশ জার্নাল/এসবি

  • সর্বশেষ
  • পঠিত