ঢাকা, সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৯ মিনিট আগে
শিরোনাম

ইটভাটার ধোঁয়ায় নষ্ট বোরো ধান, দিশেহারা কৃষক

  মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি

প্রকাশ : ১৯ মে ২০১৯, ১১:৪৮

ইটভাটার ধোঁয়ায় নষ্ট বোরো ধান, দিশেহারা কৃষক

মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার গোকুলনগর গ্রামের কৃষক আলী আকবর। তিন বিঘা জমিতে বোরো ধানের আবাদ করেছিলেন তিনি। এই জমির উৎপাদিত ধানেই তার সংসারে সারা বছরের ভাতের চাহিদা মিটে।

কিন্তু পাশ্ববর্তী ইটভাটার বিষাক্ত ধোঁয়ায় এবার তার ক্ষেতের ধান নষ্ট হয়ে গেছে। তাই দশ সদস্যের পরিবারের সারা বছরের খাবার কিভাবে জুটবে তাই ভেবে দিশেহারা তিনি। চোঁখের পানি মুছতে মুছতে আলী আকবর তার প্রতিক্রিয়ায় বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, এখন আর মরা ছাড়া কোন উপায় নেই।

আলী আকবরের মতো একই অবস্থা মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার পুটাইল, বেতিলা-মিতরা এবং সিংগাইর উপজেলার জার্মিতা ইউনিয়নের প্রায় তিন শতাধিক কৃষকের। এসব এলাকার অন্তত্ব ১০টি ইটভাটা এর জন্য দায়ী।

ইটভাটার ধোঁয়ায় ধানক্ষেত যেন নয়, মৃত্যু হয়েছে কৃষকদের সোনালী স্বপ্নের। উঠতি বোরো ধান ক্ষতির মুখে পড়ায় এখন দিশেহারা তারা।

সরেজমিনে সদর উপজেলার গোকুল নগর গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, ধান ক্ষেতের পাশেই গড়ে ওঠেছে একাধিক ইটভাটা। কৃষকদের অভিযোগ, এসব ইটভাটার রাসায়নিক তাপ ও ধোঁয়ার কারণেরই তাদের ক্ষেতের ধান নষ্ট হয়েছে। বিশেষ করে ইট পোড়ানো মৌসুম শেষ হওয়ায় কিছুদিন আগে মের্সাস ডায়না বিক্স এর চিমনির আগুন নেভানো হয়।

এসময় বাতাসে ছড়িয়ে পড়া তাপে আশপাশের সব ক্ষেতের ধান পুড়ে বির্বণ হয়ে যায়। ক্ষেতের মরা ধান তুলে তাই দেখাচ্ছিলেন কয়েকজন কৃষক। সার, কীটনাশক দিয়ে পরিচর্যা করে যে ফসল কয়েকদিন পর ঘরে তুলতেন, সেই ফসল নষ্ট হয়ে যাওয়ায় কান্না ধরে রাখতে পারেননি অনেকে।

গোকুল নগরের মতো সলন্ডি, বাইতরা, আইরমারা, মিতরা এবং সিংগাইরের জার্মিতা ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে আলাদা ইটভাটায় ক্ষেত্রের ধান নষ্ট হয়ে গেছে। অনেক কৃষকেরই ধানটুকুই শেষ সম্বল ছিলো। তা ঘরে তুলতে না পারায় দুশ্চিন্তায় পড়েছেন।

কৃষকরা অভিযোগ করে বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, আইন অনুযায়ী ফসলি জমির ওপর ইটভাটা স্থাপন অবৈধ। অথচ এই আইনকে তোয়াক্কা না করে তিন ফসলি জমিতে গড়ে ওঠেছে একের পর এক ইটভাটা। আর এর কারণেই কৃষকরা ক্ষতির মুখে পড়েছেন।

এজন্য সরকারের কাছে উপযুক্ত ক্ষতিপুরণের দাবি জানিয়েছেন তারা। পাশাপাশি ভবিষতে এমন ক্ষতির হাত থেকে বাঁচতে কৃষি জমির পাশ থেকে অবৈধ ইটভাটা অপসারণের দাবি জানান ভুক্তভোগীরা। সম্প্রতি তারা মানিকগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কাছে এই দাবিতে স্মারকলিপি প্রদান এবং মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছেন।

মানিকগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক হবিবুর রহমান চৌধূরী বাংলাদেশ জার্নালকে জানান, খবর পেয়ে তিনি সংশ্লিষ্ট উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাদের সরেজিমনে পাঠিয়েছিলেন। তারা ইটভাটার ধোঁয়ায় ধান ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সত্যতা পেয়েছেন। তার মতে,সিংগাইরে ৭ এবং সদর উপজেলায় ৫ হেক্টর জমির ধান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

তিনি বাংলাদেশ জার্নালকে আরো জানান, ইটভাটার কারণে ধান নষ্ট হওয়ায় জেলায় সামগ্রীক উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনও ব্যাহত হবে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সাথে সমন্বয় করে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের ক্ষতিপূরণ আদায়ে চেষ্টা চলছে বলে জানান তিনি।

মানিকগঞ্জ জেলা প্রশাসক এস.এম ফেরদৌস জানান, ইটভাটার ধোঁয়ায় ধান নষ্ট হওয়ার খবর জানার পর সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে সরেজমিনে পাঠানো হয়। কৃষি কর্মকর্তাদের সাথে সমন্বয় করে জমির পরিমাণ এবং ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকাসহ প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। প্রতিবেদন পেলেই এ বিষয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে।

বাংলাদেশ জার্নাল/টিপিবি

  • সর্বশেষ
  • পঠিত