ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৪ মিনিট আগে
শিরোনাম

ওরা ১১ জনও পাশ করলেন এইচএসসি

  পাবনা প্রতিনিধি

প্রকাশ : ১৭ জুলাই ২০১৯, ২৩:৫৫

ওরা ১১ জনও পাশ করলেন এইচএসসি

পাবনা মানবকল্যাণ ট্রাস্টের আশ্রয়ে থেকে এবার ১১ জন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী যুবক এইচএসসি পরীক্ষায় পাশ করেছেন। এসব দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শ্রুতি লেখকের সহায়তায় পাবনা সরকারি মহিলা কলেজ ও সেন্ট্রাল গার্লস স্কুলকেন্দ্র থেকে এবারের এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন।

দৃষ্টি প্রতিবন্ধী যুবকরা হলেন- ময়মনসিংহ জেলার সুশেল চন্দ ধরের ছেলে চন্দন কুমার ধর, পাবনার ফরিদপুর উপজেলার মোক্তার সরকারের ছেলে মো. হারুনার রশিদ, পাবনা সদর উপজেলার মহেন্দ্রপুর গ্রামের সিদ্দিক হোসেনের ছেলে মো. কাওসার হোসেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার তৌরিকুল ইসলাম এর ছেলে আব্দুল মতিন, গাজীপুর জেলার গোলজার হোসেনের ছেলে মো. মাহমুদুল হাসান

শাউন, নওগাঁ জেলার টিপু সুলতান এর ছেলে মো. মাহবুব জামান, সিরাজগঞ্জ জেলার রায়গঞ্জ উপজেলার হাবিবুর রহমান এর ছেলে মো. আরিফুল ইসলাম, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার তৈয়মুর রহমান এর ছেলে আব্দুর সবুর, গোলাম মস্তফার ছেলে আনারুর ইসলাম, কিশোরগঞ্জ জেলার বাচ্চু মিয়ার ছেলে নাদিম হোসেন, টাঙ্গাইল জেলার কালিহাতী গ্রামের শ্যামল চন্দ্রের ছেলে ভোলানাথ।

এই ১১ জন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী পাবনা শহরতলীর সিঙ্গা গ্রামের মানবকল্যাণ ট্রাস্টের আশ্রয়ে থেকে লেখাপড়া করে এইচএসসি পরীক্ষা দিয়েছিলেন। এর আগে তারা এখান থেকেই জেএসসি এবং এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছিলেন।

মানবকল্যাণ ট্রাস্টের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবুল হোসেন জানান, এরা সবাই দরিদ্র ঘরের সন্তান। তাদের ফলাফলও আশানুরুপ হয়েছে। অন্ধদের লেখাপড়ার জন্য প্রয়োজন ব্রেইল পদ্ধতি। অথচ দেশের অধিকাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এ সুযোগ নেই। চোখে না দেখার কারণে তাদের শ্রুতি লেখকের প্রয়োজন পড়ে। আর এসব শ্রুতি লেখকদের সম্মানী দিতে হয় ৮-১০ হাজার টাকা। দরিদ্র এসব অন্ধদের সম্মানী দেয়াতো দূরের কথা লেখাপড়া করাই কষ্টসাধ্য।

এসব দৃষ্টি প্রতিবন্ধী যুবকরা জানান, শিক্ষাবোর্ড থেকে শ্রুতি লেখকদের অনুমোদন, রেজিস্ট্রেশন জটিলতা এবং বিভিন্ন বোর্ডের ভিন্ন ভিন্ন নীতিমালার কারণে পদে পদে তাদের হয়রানির শিকার হতে হয়।

তারপরেও থেমে থাকছে না এসব সংগ্রামী দৃষ্টি প্রতিবন্ধীর শিক্ষাজীবন। দরিদ্র এসব দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের শারীরিক প্রতিবন্ধকতার পাশাপাশি রয়েছে নানা ধরনের আর্থসামাজিক প্রতিকূলতা। কিন্ত সব বাধা ও প্রতিকূলতাকে জয় করে তারা সোনালি ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখছেন। এই ১১ জনের মত আরও প্রায় ৮০ জন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী পাবনার মানবকল্যাণ ট্রাস্টের আশ্রয়ে থেকে ব্রেইল পদ্ধতিতে লেখাপড়া করছেন।

এছাড়াও এ প্রতিষ্ঠান থেকে ১৪ জন পথশিশুকে প্রাথমিক শিক্ষা ও ২ জন এমএসহ মোট ১৮৫ জন বিভিন্ন শ্রেণিতে তাদের শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন।

পাবনা মানবকল্যাণ ট্রাস্টের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবুল হোসেন জানান, মিডিয়ার মাধ্যমে দেশবাসীর কাছে এই প্রতিষ্ঠানের কথা ছড়িয়ে পড়ায় প্রতিবন্ধী ছাত্র ক্রমশ: বাড়তে শুরু করেছে। এ প্রতিষ্ঠানে সব ধর্মের প্রতিবন্ধী ছাত্রদের আশ্রয় দিয়ে সম্পূর্ণ বিনাখরচায় তাদের লেখাপড়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।

তিনি জানান, তার স্বপ্ন ছাত্রদের আবাসনজনিত সংকটের কারণে নির্মাণাধীন ৫ তলা ভবনের নির্মাণকাজ সম্পন্ন করা, একটি ফ্রি চিকিৎসাকেন্দ্র স্থাপন এবং অসহায় প্রবীণদের জন্য একটি বৃদ্ধাশ্রম প্রতিষ্ঠা করা।

মানবকল্যাণ ট্রাস্টের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবুল হোসেন ১৯৯৪ সাল থেকে স্ব-উদ্যোগে মেধা ও শ্রম দিয়ে প্রতিবন্ধী গোষ্ঠীর জন্য এই অলাভজনক কাজটি করে আসছেন।

বাংলাদেশ জার্নাল/ওয়াইএ

  • সর্বশেষ
  • পঠিত