ঢাকা, মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ২৪ মিনিট আগে
শিরোনাম

ভুয়া শিক্ষার্থী দিয়ে চলছে পিইসি পরীক্ষা!

  নড়াইল প্রতিনিধি

প্রকাশ : ১৮ নভেম্বর ২০১৯, ১৭:২০

ভুয়া শিক্ষার্থী দিয়ে চলছে পিইসি পরীক্ষা!

ভুয়া ছাত্র-ছাত্রীদের দিয়ে নড়াইলের লোহাগড়ায় প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে। অভিযোগ রয়েছে, মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সেভেন-এইটের শিক্ষার্থীরাও আনন্দ স্কুলের পরীক্ষার্থী হয়ে পরীক্ষা দিচ্ছে! আনন্দ স্কুলে শিক্ষার্থী ভর্তির সময়ে মিথ্যা তথ্য দিয়ে সেভেন-এইটের শিক্ষার্থীদেরও ভর্তি করা হয়েছে। সমাপনী পরীক্ষায় ওই সব পরীক্ষার্থীরা অংশ নিচ্ছে। আবার সঠিক পরীক্ষার্থী অনুপস্থিত থাকায় ভুয়া পরীক্ষার্থীও পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে। প্রবেশপত্রের নামের সাথে অনেক পরীক্ষার্থীর নাম-চেহারা মিলছে না। এ ঘটনা ঘটেছে আনন্দ স্কুলের ক্ষেত্রে।

লোহাগড়া উপজেলা শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, লোহাগড়া উপজেলার কাশিপুর এসি মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে চারটি আনন্দ স্কুলের শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা দিচ্ছে। স্কুলগুলো হলো ঈশানগাতী পূর্বপাড়া আনন্দ স্কুল, রামেশ্বরপুর আনন্দ স্কুল, ঈশানগাতী আনন্দ স্কুল, বসুপটি আনন্দ স্কুল। ওই চারটি স্কুলে পরীক্ষার্থী সংখ্যা ৭০ হলেও সোমবারে (১৮ নভেম্বর) বাংলা বিষয়ের পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে মাত্র ২৬ জন।

এদিকে দিঘলিয়া ইউনিয়নের কে ডি আর কে মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে তিনটি আনন্দ স্কুল। সেগুলি হলো মাটিয়াডাঙ্গা আনন্দ স্কুল, চরকোটাকোল আনন্দ স্কুল, করগাতি আনন্দ স্কুল। ওই তিন স্কুলের পরীক্ষার্থী সংখ্যা ৪৫ হলেও সোমবারে পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে ৩৩ জন। অর্থাৎ ওই দুটি পরীক্ষা কেন্দ্রে আনন্দ স্কুলের ১১৫ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ৫৯ জন পরীক্ষা দিচ্ছে। ওই ৫৯ জনের মধ্যেও রয়েছে সেভেন-এইটের শিক্ষার্থী।

অভিযোগ রয়েছে, এখনো সেভেন-এইটের শিক্ষার্থীরা আনন্দ স্কুলের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী হিসেবে পরীক্ষা দিচ্ছে। আবার আনন্দ স্কুলে ভর্তি প্রকৃত শিক্ষার্থী অনুপস্থিত থাকায় ভুয়া ছাত্র-ছাত্রী দিয়ে আনন্দ স্কুল সংশ্লিষ্টরা পরীক্ষা দেয়াচ্ছেন। আনন্দ স্কুলের কো-অর্ডিনেটর দীর্ঘদিন ধরে ভুয়া শিক্ষার্থীর আনন্দ স্কুল চালাতে শিক্ষকদের সহযোগিতা করেছেন। উপবৃত্তির টাকাসহ যেকোনো খাতের টাকা আসলে ট্রেনিং কো-অর্ডিনেটর ও শিক্ষকরা ভাগাভাগি করে নেন।

সোমবার (১৮ নভেম্বর) কে ডি আর কে মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে আনন্দ স্কুলের হয়ে পরীক্ষা দিতে আসায় অন্তত ৫ জন পরীক্ষার্থীকে বের করে দিয়েছে পরীক্ষায় দায়িত্বরতরা। ওই কেন্দ্রের হল সুপার মো. হান্নান বিশ্বাস বলেন, আনন্দ স্কুলের হয়ে পরীক্ষা দিতে আসায় সোমবার ৫ জন পরীক্ষার্থীকে হল থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে।

পরীক্ষার দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা মো. তমিজউদ্দিন বলেন, সেভেন-এইটে পড়ে অথচ আবার আনন্দ স্কুলে ভর্তি হয়ে ওই ৫ জনে পরীক্ষা দিতে এসেছিল। ওই সব পরীক্ষার্থীর প্রবেশপত্রের ছবি ও নামের সাথে নিজের কোনো মিল নেই। আমাদের সন্দেহ হওয়ায় তাদের চেক করি এবং ভুয়া প্রমাণ হওয়ায় হল থেকে বের করে দিয়েছি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গতকাল রোববার উপজেলার কাশিপুর ইউনিয়নের ঈশানগাতী পূর্বপাড়া আনন্দ স্কুল, ঈশানগাতী আনন্দ স্কুল ও রামেশ্বরপুর আনন্দ স্কুলের শিক্ষার্থী হিসেবে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা দিতে আসে সেভেন-এইটের শিক্ষার্থীরা। বিষয়টি শিক্ষকেরা ধরে ফেললে তারা দৌঁড়ে চলে যায়। ওই বিদ্যালয়ের কেন্দ্র সচিব মো. আনোয়ার হোসেন বিষয়টি স্বীকার করেছেন।

ঈশানগাতী পূর্বপাড়া আনন্দ স্কুলের প্রধান শিক্ষক মো. আরজান আলী বলেন, এসব শিক্ষার্থী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পড়ে তা আমি জানতাম না।

নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক আনন্দ স্কুলের কয়েকজন শিক্ষক বলেন, শিক্ষার্থীর উপবৃত্তির টাকাসহ উন্নয়নের কোনো টাকা এলেই ট্রেনিং কো-অর্ডিনেটর স্যার অর্ধেকের বেশি নিয়ে নেন। আগের শাহজালাল স্যার যে পরিমাণ টাকা নিতেন বর্তমান স্যার আরো বেশি নেন।

এ বিষয়ে উপজেলা শিক্ষা অফিসার মো. সাইফুজ্জামান খান বলেন, সোম ও গত রবিবারে আমরা এ ধরনের অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি গুরুত্বের সাথে দেখছি। তদন্ত চলছে। ঊর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের নিকট তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করবো। আনন্দ স্কুল দেখার জন্য ট্রেনিং কো-অর্ডিনেটর রয়েছে।

আনন্দ স্কুলের লোহাগড়া উপজেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত ট্রেনিং কো-অর্ডিনেটর মো. সোহেল টাকা ভাগাভাগি করে নেওয়ার কথা অস্বীকার করে বলেন, সেভেন-এইটের শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা দিচ্ছে এমন অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

তিনি আরো জানান, মোট ২৪টি আনন্দ স্কুলে ৪১৬ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে প্রথম দিনে পরীক্ষা দিয়েছে ৩৪৭ জন। দ্বিতীয় দিনে ৪/৫ জন বোধ হয় কমেছে।

বাংলাদেশ জার্নাল/ওয়াইএ

  • সর্বশেষ
  • পঠিত