ঢাকা, মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১ মিনিট আগে
শিরোনাম

তেজগাঁওয়ে সুমনের মৃত্যু

পুলিশ সড়ক দুর্ঘটনা বললেও পরিবারের দাবি হত্যাকাণ্ড

  সুজন কৈরী

প্রকাশ : ১২ আগস্ট ২০২২, ২১:০২  
আপডেট :
 ১২ আগস্ট ২০২২, ২১:১২

পুলিশ সড়ক দুর্ঘটনা বললেও পরিবারের দাবি হত্যাকাণ্ড

রাজধানীর তেজগাঁও এলাকায় আরিফ মাহমুদ সুমন নামের এক যুবকের রহস্যজনক মৃত্যুর কোনো কুল কিনারা হয়নি। পুলিশ বলছে, সুমন মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা না পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ডের শিকার এখনো তা নিশ্চিত নয়।

সুমন বেসরকারি সোনারগাঁও ইউনিভার্সিটির কম্পিউটার সায়েন্স বিভাগ থেকে অনার্স সম্পন্ন করে পরিকল্পনা কমিশন মন্ত্রণালয়ের কম্পিউটার অপারেটর পদে চাকরি নেন। তার বাবা আকবর আলী মন্ত্রণালয়ের পিআইও (প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা)। তিনি তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল এলাকার ঢাকা পলিটেকনিক স্টাফ কোয়ার্টারে সপরিবারের থাকেন।

সুমন গত ৯ জুন রাত সাড়ে ৯টার দিকে বাসা থেকে মোটরসাইকেল নিয়ে বের হন। ওই দিন রাতে সুমন বাসায় না ফিরলে তার বাবা-মা চিন্তায় পড়ে যান। আত্মীয় স্বজনদের বাসায় খোঁজাখুঁজি করে সন্তানের কোনো হদিস পাননি। পরদিন সুমনের বাবা তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানায় জিডি করেন।

১১ জুন সকালে সুমনের বাবার মোবাইল ফোনে একটি অজ্ঞাত নম্বর থেকে ফোন করে জানানো হয়, সুমন ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে। ওই খবর পেয়ে সুমনের বাবা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ১০২ নম্বর ওয়ার্ডের একটি বেডে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার ছেলেকে খুঁজে পান। দেখেন, তার ছেলের পুরা মাথায় ব্যান্ডেজ দেয়া। অচেতন অবস্থায় পড়েছিল বেডে।

চিকিৎসকরা জানান, তাকে আইসিইউতে নিতে হবে। কিন্তু হাসপাতালে আইসিইউতে বেড খালি না থাকার কারণে জরুরি ভিত্তিতে তাকে ধানমন্ডির পপুলার হাসপাতালের আইসিইউতে স্থানান্তর করা হয়।

পপুলার হাসপাতালের চিকিৎসকরা জানান, ভিকটিমের মাথার উপরিভাগে ভারি আঘাতে তার ব্রেন ক্ষতিগ্রস্থ হয়। ওই হাসপাতালে চিকিৎসকরা সুমনের ব্রেন অপারেশন করেন। পরে তাকে আইসিইউতে রেখে চিকিৎসা দেয়া হয়। ৪৪ দিন আইসিইউতে চিকিৎসাধীন থাকার পর ২৫ জুলাই গভীর রাতে সুমনকে চিকিৎসকরা মৃত ঘোষণা করেন।

সুমনের মা শাহীনুর আক্তার বলেন, তার ছেলেকে কোথা থেকে উদ্ধার ও কারা হাসপাতালে নিয়েছে-তা আমরা জানি না। তার মোটরসাইকেলটিও অক্ষত অবস্থায় পাওয়া গেছে। হেলমটও ক্ষতিগ্রস্থ হয়নি। আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় এক রাতে সুমনের জ্ঞান ফিরেছিলো।

তখন সুমন তার মাকে দেখতে পেয়ে বলে, মা আমি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা ঘটাইনি, সুস্থ হই আগে, তোমাকে সব খুলে বলবো। তার সেই বলাটা আর হয়ে ওঠেনি। তার আগেই চলে যেতে হয়েছে।

এর আগে সুমনের বাবার দায়ের করা জিডির সূত্র ধরে তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানা পুলিশ দুই ছিনতাইকারীকে আটক করে। তাদের কাছ থেকে সুমনের খোয়া যাওয়া মানিব্যাগ ও মোবাইল পাওয়া যায়। মোবাইল ফোনটি ফ্লাশ দিয়ে আইএমই নম্বর পরিবর্তন ও অন্যান্য তথ্য মুছে ফেলা হয়েছে।

সুমনের বাবা বলেন, তার ছেলেকে পরিকল্পিতভাবে হত্যার উদ্দেশ্যে মাথাসহ পুরো শরীরে আঘাত করা হলেও বিষয়টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা বলে চালিয়ে দেয়ার চেষ্টা চলছে। অথচ সুমনের বাইকটিতে কোনো দুর্ঘটনার আঘাতের চিহ্ন নেই।

তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানায় দায়ের করা জিডির তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই মনির হোসেন বলেন, এটা একটি সড়ক দুর্ঘটনা। সুমন মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় আহত হয়ে পড়ে ছিলো। পরে লোকজন তাকে উদ্ধার করে ঢামেক হাসপাতালে ভর্তি করে। দুর্ঘটনার ঘটনাস্থল বেগুনবাড়ি থেকে হাতিরঝিলে প্রবেশমুখের সড়ক। ওই ঘটনাস্থলটি হাতিরঝিল থানা পুলিশের অধীন।

হাতিরঝিল থানার ওসি আব্দুর রশিদ বলেন, পুলিশের পক্ষ থেকে ময়নাতদন্ত করার কথা বলা হলেও ভিকটিমের বাবা পুলিশের কাছে বিনা ময়নাতদন্তে মরদেহ নেয়ার মুচলেকা দিয়েছেন। এ কারণে ময়নাতদন্ত ছাড়াই মরদেহ দাফন করা হয়েছে। এখন পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ করছেন যে সুমনকে হত্যা করা হয়েছে। তাদের যদি এ অভিযোগ থাকে, তাহলে থানায় মামলা দায়ের করতে হবে।

বাংলাদেশ জার্নাল/এমএম

  • সর্বশেষ
  • পঠিত