ঢাকা, সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৬ মিনিট আগে
শিরোনাম

শ্রীপুরে ৭০ গাছে ১ হাজার ৪০০ কেজি কমলার ফলন

  গাজীপুর প্রতিনিধি

প্রকাশ : ২৫ ডিসেম্বর ২০২৩, ১৩:২৭  
আপডেট :
 ২৫ ডিসেম্বর ২০২৩, ১৫:০১

শ্রীপুরে ৭০ গাছে ১ হাজার ৪০০ কেজি কমলার ফলন
গাজীপুরে কমলা। ছবি: সংগৃহীত

গাজীপুরের শ্রীপুরে রোপণের তিন বছরের মাথায় কমপক্ষে ১ হাজার ৪০০ কেজি কমলা উৎপাদন হয়েছে। দার্জিলিং জাতের ১০০ কমলা গাছে দ্বিতীয় বারের উৎপাদনে ভবিষ্যতে আরও বেশি ফলনের আশা করছেন চাষীরা। চারজন উদ্যোক্তা একত্রে দার্জিলিং জাতের ১০০ কমলা গাছ রোপণ করেছিলেন। সুমিষ্ট কমলার ফলনে খুশি চাষীরা। এছাড়াও ৫০টি চায়না মেন্ডারিং জাতের কমলা গাছের সব কটিতে কমপক্ষে ১০ কেজি করে উৎপাদন হয়েছে।

শ্রীপুর উপজেলার বরমী ইউনিয়নের পশ্চিম সাতখামাইর গ্রামে কমলা বাগানের প্রবেশমুখে দাঁড়ালেই চোখে পড়ে থোকায় থোকায় ঝুলে থাকা হলুদ ও সবুজ বর্ণের কমলা। প্রতি থোকায় কমপক্ষে ১০টি করে কমলা ঝুলে রয়েছে। দার্জিলিং জাতের কমলা আকারে বড়। মৌসুমের শেষদিকে হওয়ায় প্রায় প্রতিটি গাছে বিচ্ছিন্নভাবে শোভা পাচ্ছে দার্জিলিং জাতের কমলা। চায়না জাতের হলুদ সবুজ বর্ণের মেন্ডারিং কমলা থোকায় থোকায় ঝুলে গাছের ডালপালা নুইয়ে দিয়েছে। সারিবদ্ধভাবে দর্শণার্থীরা বাগানে প্রবেশ করে গাছ থেকে কমলা ছিঁড়ে খাচ্ছেন। নিজ দেশে নিজ হাতে কমলা ছিঁড়ে খাওয়া স্বপ্নের মতো বলে জানিয়েছেন অনেক দর্শণার্থী।

বাগানের উদ্যোক্তা চারজন হলেন ওয়ালিউল্লাহ বায়েজীদ, ফারুক আহমেদ, আবদুল মতিন ও আইনুল হক। শ্রীপুর উপজেলা সদর থেকে অথবা মাওনা চৌরাস্তা ওয়াপদা মোড় থেকে টেংরা গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের সামান্য পূর্ব পাশে কমলা বাগানটি চোখে পড়ে। কমলা ছাড়াও বাগানে পাওয়া যায় বিভিন্ন জাতের আম, বলসুন্দরী বরই, সফেদা, জাম্বুরা ও ড্রাগন ফল।

উদ্যোক্তা ওয়ালী উল্লাহ বায়েজীদ জানান, কমলা এবং আম হচ্ছে প্রধান চাষ। দার্জিলিং এবং মেন্ডারিং কমলা ইন্ডিয়া এবং সিলেটের লাল মাটিতে কমলা উৎপাদন হয়। ২০০০ সালে ঝিনাইদহে কমলার উৎপাদন দেখেছি এবং তা থেকেই কমলা চাষে উদ্যোগী হই। বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে ফিরে দেখি গাজীপুরের লাল মাটিতে কমলা উৎপাদন সম্ভব। এখানে রোাপনের পর উৎপাদনের প্রথম বছরেই কখনো ২টা আবার কখনও ৩টা কমলা ১ কেজি পরিমাণ ওজন হয়েছে। ২০২৩ সনে দার্জিলিং ও চায়না মেন্ডারিং দুটোই ভালো উৎপাদন হয়েছে। গাজীপুরের ফাঁকা লাল মাটির জমি ফেলে না রেখে কৃষি অফিসের সহায়তা নিলে ওইসব জায়গায় কমলা উৎপাদন করা সম্ভব। পরিচর্যা ঠিকমতো রাখতে পারলে দেশের বাইরে থেকে আনা কমলার যে গুণগত মান তা থেকে আমাদের দেশের কমলার গুণগত মান সেরা হবে। কমলার ফুল আসা থেকে শুরু করে হার্ভেস্ট করা পর্যন্ত কোনো মেডিসিন প্রয়োগ করতে হয়ন না। ফুল আসার আগে গাছের সুস্থতার জন্য কীটনাশক প্রয়োগ করতে হয়। দেশের মাটিতে যে কমলা হয়, সুমিষ্ট হয়, স্বাদ হয়, রস ঠিক থাকে। এক সময় দেশের বাইরে থেকে কমলা আমদানি করতে হবে না। সকলকে কমলা চাষে উৎসাহী হওয়ার আহবান জানাই।

উদ্যোক্তা সবুজ মিয়া জানান, চার বন্ধু মিলে বাগান করার পরিকল্পনা করা হয়। এখানে শুরুতে আকাশমনির বাগান ছিল। চারজন বন্ধু উদ্যোগের পর নাটোরের কৃষিবিদি গোলাম মাওলাসহ অভিজ্ঞ কয়েকজনের কাছ থেকে চারা ও পরামর্শ নিয়ে এখানে বাগান শুরু করি। আমরা আশা করছি আগামীতে এর চেয়ে তিন গুণ বেশি ফলন হবে। গত বছর কিছু ফলন হয়েছিল। আকার, আকৃতি ও স্বাদ যাচাইয়ের জন্য ফলনের কিছু অংশ সংরক্ষণ করা হয়েছিল।

এখানে প্রায় দেড় একর জায়গার মধ্যে দেড়’শ কমলার চারা রোপন করা হয়েছে। ১০০ দার্জিলিং এবং ৫০টি চায়না মেন্ডারিং জাতের। এ পর্যন্ত দার্জিলিং জাতের ৭০টি গাছে ফলন এসেছে। প্রতিটি গাছে কমপক্ষে ২০ কেজি পরিমাণ কমলা এসেছে। ২০০ টাকা কেজি দরে দার্জিলিং কমলা বিক্রি করেছি।

দর্শণার্থী আনিসুর রহমান শামীম জানান, গাজীপুরের মাটিতে বিশেষ করে লাল মাটিতে কমলা হয় এটা অবাক করার মেতো। অন্যান্য চাষী বা যারা কমলা চাষ করতে চান তারা গাজীপুরের মাটিতে কমলা চাষ করতে পারেন।

শ্রীপুর মুক্তিযোদ্ধা রহমত আলী সরকারি কলেজের শিক্ষক সহকারী অধ্যাপক আবু বকর সিদ্দিক আকন্দ বলেন, বাজার থেকে যেসব কমলা পাওয়া যায় বেশিরভাগ দেশের বাইরে থেকে আসে। সিলেট অঞ্চলে কমলা উৎপাদন হতো। কৃষি বিজ্ঞানীদের অবদানের কারণে কমলা এখন প্রায় বিভিন্ন জেলায় উৎপাদন হচ্ছে। এখন দেশের ভেতরেই বিভিন্ন বাগানে কমলা ঝুলে থাকার দৃশ্য দেখতে পাওয়া যায়। কমলা ঝুলে থাকার দৃশ্য আমাকে বিমোহিত করেছে। একসম আমাদের দেশের উৎপাদিত কমলা দিয়ে কমলা চাহিদা পূরণ করা সম্ভব। বিষ বা কীটনাশকমুক্ত কমলা চাষ স্বাস্থ্য সুরক্ষায়ও সহায়ক হবে।

শ্রীপুর পৌরসভার লোহাগাছ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শাহজাহান বলেন, বাপ দাদার পেশা কৃষি। তাই কৃষির প্রতি দুর্বলতা বেশি। সরকারের কৃষি প্রণোদনা প্যাকেজে আমার একটা মাল্টার বাগান রয়েছে। আমি কমলা বাগান পরিদর্শন করতে এসেছি। সুস্থ থাকতে হলে সকলকেই ফল চাষ করতে হবে। এখানকার মাটিতে এতো ফলন হয়, না দেখলে বুঝা যাবে না। এ বাগান পরির্দশন করে সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমিও আমার বাড়ীতে কমলার চাষ করব।

শ্রীপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ সুমাইয়া সুলতানা বলেন, কর্মকর্তা আমদানী নির্ভরতা কমানোর জন্য অনেক চাষীকে আমরা কমলা চাষে উৎসাহিত করছি। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উদ্যোগে চাষীদেরকে দার্জিলিং জাতের কমলার চারা সরবরাহ করছি। আমরা আমাদের কৃষি প্রদর্শনী থেকে অনেক চাষীকে দার্জিলিং জাতের কমলার চারা বিতরণ করেছি। সব দিক থেকে বলা যায় শ্রীপুর উপজেলা কমলা চাষে একটা উজ্জল সম্ভবনাময় জায়গা।

বাংলাদেশ জার্নাল/এএ

  • সর্বশেষ
  • পঠিত