ঢাকা, সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ২ মিনিট আগে
শিরোনাম

শিক্ষক নিয়োগ বাণিজ্যের অডিও ফাঁস

  ইবি প্রতিনিধি

প্রকাশ : ১৫ জুলাই ২০১৮, ১৭:২৭  
আপডেট :
 ১৫ জুলাই ২০১৮, ১৭:৪৪

শিক্ষক নিয়োগ বাণিজ্যের অডিও ফাঁস

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) আবারো শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। এর সাথে জড়িত বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাবশালী ৩ শিক্ষকের নাম উঠে এসেছে ফাঁস হওয়া অডিওতে। ২০ লাখ টাকায় প্রার্থীকে চাকরি দেয়ার আশ্বাস দিলেও, চাকরি দিতে না পারায় টাকা ফেরত দেয়া হয়েছে। এ নিয়ে শিক্ষক ও প্রার্থীর কথোপকথনের অডিও ফাঁস হয়।

ফাঁস হওয়া অডিওতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের নামে এক প্রার্থীর সঙ্গে নিয়োগ বাণিজ্য হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এতে বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. জাহাঙ্গীর এর নামও উঠে এসেছে।

ওই নিয়োগ বাণিজ্যে সহযোগী হিসেবে টাকা লেনদেনের চুক্তি করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষক। তারা হলেন- বাংলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. বাকী বিল্লাহ বিকুল এবং ইংরেজি বিভাগের প্রফেসর ড. শাহাদৎ হোসেন আজাদ। প্রার্থী ফারজানা ও তার স্বামী মামুনের সঙ্গে টাকা লেনদেনের চারটি রেকর্ড ফাঁস হয়।

অডিওটি শুনে জানা যায়, নগদ ১০ লাখ টাকা প্রদান এবং বাকি ১০ লাখ টাকার চেক প্রদান করা হয়। তবে ওই প্রার্থীর নিয়োগ নিশ্চিত না করতে পারায় টাকা ফেরত দেয়া হয়েছে। ১৩ জুলাই রাতে ওই প্রার্থীর স্বামীকে ফোনে ডেকে নিয়ে টাকা ফেরত দিয়েছেন বলে অডিওতে বলা হয়।

চাকরি প্রত্যাশী প্রার্থীর স্বামী শাহরিয়ার রাজ মামুন বলেন, ‘তারা আমাকে চাকরির আশ্বাস দিয়েছিলো বলেই টাকা দিয়েছিলাম। কিন্তু শেষ মুহুর্তে এসে তারা এমন করলো। আমার স্ত্রীর আর চাকরির বয়স নেই। আমি তাদের বিচার চাই।’

এ বিষয়ে অভিযুক্ত বাংলা বিভাগের শিক্ষক ড. বাকী বিল্লাহ বিকুল বলেন, ‘এগুলো আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র। আমি ব্ল্যকমেইলিংয়ের শিকার। আমি একজনের উপকার করতে চেয়েছি। সে বিষয়টি রেকর্ড করে আমাকে ফাঁসিয়ে দিয়েছে। এ সময়, তাকে অডিও ক্লিপের বিষয়টি জানালে তিনি বলেন, ‘এটি এডিট করা হয়েছে।’

এ বিষয়ে বঙ্গবন্ধু হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. শাহাদৎ হোসেন আজাদকে ফোন দিয়েও পাওয়া যায়নি। এদিকে ড. জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, ‘আমার বিভাগে নিয়োগ সুষ্ঠু হয়েছে এবং মেধাবীদের নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এছাড়া আমার নাম দিয়ে যদি কেউ কিছু করে থাকে আমি তার সঠিক তদন্ত ও বিচার চাই।’

কথোপকথনের কিছু অংশ তুলে ধরা হলো:

ড. বাকী: এ মামুন ভাই আপনি আসতিছেন?

ফারজানা : আসসালামু আলাইকুম স্যার।

ড. বাকী: হ্যাঁ, দেখ বাবু আমি...

ফারজানা: স্যার আমি তো আপনাদের কথা শুনে অনেকখানি একদম ডিপেন্ডেবল। যে কালকে আপনারা আমাকে এত করে বললেন, জাহাঙ্গীর স্যার যখন বলল, আপনাকে, আপনার মাধ্যমে টাকাটাও ডিল-ট্রিল করবে। আপনার কথা শুনে আমি একদম ২০ লাখ টাকাও হাতে ধরায় দিলাম। তুলে দিলাম। আশা করলাম। স্যার কেন এমনটা করল? জাহাঙ্গীর হোসেন স্যার।

ড. বাকী: এখন আমি তোমার স্যারের সাথে এতক্ষণ বসে থেকে কথা বললাম।

ফারজানা: স্যার তো সিগনেচার না করলে নিয়োগ হতো না। স্যার তো আমাকে বলতে পারত। আমাকে আরও অ্যামাউন্ট দেয়া লাগত। আমি তাতেও রাজি ছিলাম।

ড. বাকী: না না, ওসব না, ওসব না। মনি, ওসব কোনো কিছুই না।

ফারজানা: তাহলে কেন আপনারা আমাকে কনফার্ম দিলেন? আমি রিটেনে ভালো করলাম। ভাইবাতেও ভালো করলাম। আমাকে সব আশ্বস্ত করে দিলেন। আর এখন শেষ মুহূর্তে এসে এমন করলেন আপনারা আমার সাথে।

ড. বাকী: এখন কুষ্টিয়া থেকে তোমাকে বলি, হয়ত অন্য কারও হয়েছে বা, যাহোক আমি তো বলতে পারব না।

ফারজানা: কুষ্টিয়ার ক্যান্ডিডেট তো আমিই ছিলাম স্যার।

ড. বাকী: হুমমম, আরে বাবা আরও ক্যান্ডিডেট আছে।

ফারজানা: নুসরাত ছিল। নুসরাতের কি হইছে? ড. বাকী: সেটা বলতে পারছি না।

ফারজানা : স্যার কাইন্ডলি, আপনারা যদি একটু দেখতেন...

ড. বাকী: আরে বাবু…

ড. বাকী: না না, আমি তো জাহাঙ্গীর স্যারের সাথে এখনই উঠে এলাম। এখন এই জিনিসটা এখনই আবার। মামুন ভাই জিনিসটা বারবারই জানতে চাচ্ছে। আমি কিন্তু তাকে জানাচ্ছিলাম না। আমি তাকে পরে জানাব। কালকে সিন্ডিকেট হবে। সিন্ডিকেটের পরে জানাব। কিন্তু আগে জানিয়েই আমি আরও বিব্রত হলাম দেখছি।

ফারজানা: জ্বি স্যার, আপনি আমাকে কনফার্ম করলেন। তোমার এইটটি পার্সেন্ট হয়ে গেছে। তোমার কোনো অসুবিধা নেই। এর জন্য আপনি যখন যে শর্ত দিয়েছেন, টাকা দেয়া বলেন, জাহাঙ্গীর স্যারের... কোনো সত্যতা যাচাই ও করতে যায়নি। আপনাকে সঙ্গে সঙ্গে টাকাটা পে করে দিয়েছি। সব করে দিয়েছি স্যার।

ড. বাকী: সেটা নিয়ে তো আর সমস্যা নাই। আমরা তো কোনো মিস ইউজ করিনি। জাহাঙ্গীর স্যার তো এটা মিস ইউস করেননি। তাই না? এখন সে না পারলে, আমি তো মাঝখানে থেকে মানুষের উপকার করে এখানে তো কোনো ইন্টারেস্ট নেই।

ফারজানা : জাহাঙ্গীর স্যার এটা করত না?

ড. বাকী বিল্লাহ : পারত কিনা সেটা আমার জানা নেই। রাতে ব্যস্ত হয়ে গেছেন। সরি বলেছেন উনি। এখন কি করব বল? কিছু করার নেই বাবু। মামুন ভাইকে, আমি তো বসে আছি। উনি আসলে আমি তো উনাকে পৌঁছে দিয়ে...

ফারজানা : আচ্ছা আপনি উনার (স্বামী) সাথে কথা বলেন। এবার তার স্বামীর সাথে কথা বলার জন্য ফোন এগিয়ে দেন তার স্ত্রী ফারজানা…

ড. বাকী: হ্যাঁ।

ফারজানার স্বামী : হ্যালো...।

ড. বাকী: হ্যাঁ, মামুন ভাই ভয় পাচ্ছেন কেন? কুষ্টিয়ার ছেলে। আপনি আসেন। আমি তো আপনাকে নিজে পৌঁছে দেব। কি মুশকিল রে ভাই...মানুষের উপকার করতে গিয়ে আমি নিজেই তো একটা বিব্রতকর অবস্থার মধ্যে পড়েছি।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. রাশিদ আসকারী বলেন, ‘আমি দুর্নীতির ব্যাপারে জিরো টলারেন্স। যদি এমন ধরনের কোনো চুক্তি তারা করে থাকে, সেটি কার্যকর হোক বা না হোক তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

তিনি বলেন, ‘এমন অসৎ এবং অশুভ চুক্তি করার জন্য অভিযোগ আকারে এলে আমরা অবশ্যই তদন্ত সাপেক্ষে বিচারের আওতায় আনব।’

আইএইচআর/জেডএইচ/

  • সর্বশেষ
  • পঠিত