ঢাকা, সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ২ মিনিট আগে
শিরোনাম

প্রধানমন্ত্রীর দেয়া উপহারের গাড়ির টাকা গুণছে ঢাবি!

  জোবায়ের আবদুল্লাহ

প্রকাশ : ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ২০:৩১  
আপডেট :
 ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ২১:৩১

প্রধানমন্ত্রীর দেয়া উপহারের গাড়ির টাকা গুণছে ঢাবি!
ছবি: প্রতীকী

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উপহার হিসেবে চারটি বাস দিলেও এসব বাসের জন্য গত সাত বছর ধরে বিআরটিসিকে মাসিক ভিত্তিতে টাকা দিতে হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে। বাসপ্রতি প্রতি মাসে ১ লক্ষ ৮৫ হাজার টাকা হাজার হিসাবে ৪টি বাসের জন্য বছরে ২২ লাখ ৩২ হাজার টাকা বিআরটিসিকে দেয়া হচ্ছে। এর মধ্যে দুটি বাস অকেজো হলেও বিআরটিসি কর্তৃপক্ষকে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ দিতেই হচ্ছে। এই কিস্তির মেয়াদ কবে নাগাদ শেষ হবে তারও কোন নির্দিষ্ট সময় সীমা নেই।

বিআরটিসি থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে পাঠানো একটি পত্র থেকে এসব তথ্য জানা যায়। পত্রে উল্লেখ করা হয়েছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের যাতায়াতের জন্য প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসেবে চারটি চাইনিজ সি.এন.জি একতলা বাস যথাক্রমে ঢাকা মেট্রো ব-১১-৪৯০১, ঢাকা মেট্রো ব-১১-৪৯২৩, ঢাকা মেট্রো ব-১১-৪৯২৪ ও ঢাকা মেট্রো ব-১১-৪৯৪৩ বিআরটিসি কর্তৃপক্ষ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যথাযথ কর্তৃপক্ষকে বুঝিয়ে দিয়েছে। বাস চারটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের বিভিন্ন রুটে চলাচল করছে। প্রতিটি বাস প্রতিদিনের জন্য ১ হাজার ৪০০ টাকা হিসেবে বিআরটিসি কর্তৃপক্ষকে বিল পরিশোধ করতে হবে (সিন্ডিকেট সিদ্ধান্ত নথির ক্রমিক নং-৫)।

তখন ভ্যাটের হার ৪ শতাংশ থাকলেও পরবর্তীতে ২০১২-১৩ অর্থবছরে ভ্যাট বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে এখন বাসপ্রতি প্রতিদিন ১ হাজার ৫৪৭ টাকা বিআরটিসিকে দিতে হচ্ছে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০১১ সালে অনুমোদনের পর ২০১২ সালে প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের হাতে চারটি বাস তুলে দেয়া হয়। তখন থেকে এ গাড়িগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের সেবায় বিভিন্ন রুটে চলাচল করছে। চারটি বাসের জন্য প্রতি মাসে গড়ে ১ লক্ষ ৮৬ হাজার টাকা বিআরটিসি কর্তৃপক্ষকে দিতে হচ্ছে। বছর শেষে এ অর্থ দাঁড়ায় ২২ লক্ষ ৩২ হাজার টাকায়। ২০১২ সাল থেকে এসব গাড়ি চলাচল করছে। এখন পর্যন্ত এ চারটি গাড়ির জন্য কিস্তি বাবদ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে দেড় কোটি টাকারও বেশি দিতে হয়েছে। কিন্তু কবে নাগাদ কিস্তি দেয়া শেষ হবে তারও কোনো নির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে দেয়া হয় নি।

সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হলো- চারটি গাড়ির মধ্যে একটি গাড়ি প্রায় দুই বছর অকেজো হয়ে পড়ে রয়েছে (যার নম্বর ঢাকা মেট্রো ব-১১-৪৯৪৩)। আর একটি গাড়ি কয়েক মাস ধরে নষ্ট হয়ে আছে (যার নম্বর ঢাকা মেট্রো ব-১১-৪৯০১)। তারপরও গাড়িগুলোর জন্য কিস্তি দেয়া অব্যাহতই আছে। এমনকি সাপ্তাহিক বন্ধের দিনে (শুক্র ও শনিবার) বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য গাড়ি চলাচল বন্ধ থাকলেও এসব গাড়ির কিস্তির টাকা বন্ধ থাকে না।

প্রধানমন্ত্রীর সৌজন্যে দেয়া এসব বাসের বর্তমান অবস্থাও বেশ নাজুক। বাসগুলোর সামনের ও পেছনের গ্লাস এবং বডির বেশিরভাগ অংশ ভাঙ্গা। সিটগুলোও ভালো নয়। তবুও বিশ্ববিদ্যালয়ের লোগো থাকায় এসব বাস রাস্তায় চলাচল করতে পারছে বলে জানা গেছে। বাসের নাজুক অবস্থা নিয়ে যাতায়াতকারী শিক্ষার্থীরাও ক্ষুব্দ। বিআরটিসি কর্তৃপক্ষ গাড়িগুলো সংস্কার করছে না। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষও এ ব্যাপারে উদাসীন।

এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন অফিসের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারির সঙ্গে কথা হয়। তারা বাংলাদেশ জার্নালকে জানান, চাইনিজ এসব গাড়ির যন্ত্রাংশ বাজারে পাওয়া যায় না। তাই গাড়িগুলো অকেজো হয়ে পড়ে থাকলেও মেরামত করা সম্ভব হচ্ছে না।

এসব বিষয়কে সামনে রেখে গত মাসের (আগস্ট) মাঝামাঝি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন দপ্তরের আয়োজনে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদের অফিস কক্ষে অনুষ্ঠিত এ সভায় অধ্যাপক সামাদ ছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার অধ্যাপক ড. মো. কামাল উদ্দিন, বিশ্ববিদ্যালয় পরিবহন ম্যানেজার কামরুল ইসলাম, বিআরটিসির কল্যাণপুর ডিপোর ডিজিএম (অপারেশন) মশিউর জামান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

সভায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এসব গাড়ির বিষয়ে বিআরটিসি কর্তৃপক্ষকে দুটি সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেয়। এগুলো হলো- বিআরটিসিকে উক্ত চারটি বাস মেরামত করতে হবে বা নতুন গাড়ি সংযোজন করতে হবে। আর গাড়ি মেরামত করা না হলে আগামী বছরের শুরু থেকে (জানুয়ারি) এসব বাসের কিস্তি দেয়া হবে না। তবে নতুন বাস দেয়া হলে বা পুরনো বাস সংস্কার করা হলে কিস্তি পুনরায় দিতে হবে নাকি দেয়া লাগবে না এ ব্যাপারে সভায় কোন সিদ্ধান্ত হয় নি।

জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন ম্যানেজার কামরুল ইসলাম বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, কতোদিন পর্যন্ত এসব বাসের কিস্তির টাকা পরিশোধ করতে হবে এ ব্যাপারে নির্দিষ্ট কোনো সময়সীমা নেই। সভা থেকে বিআরটিসি কর্তৃপক্ষকে এসব বিষয়ে অবহিত করা হয়েছে। তারা শীঘ্রই এ বিষয়ে আমাদেরকে সিদ্ধান্ত জানাবেন বলে জানিয়েছেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিআরটিসির কল্যাণপুর ডিপোর ডিজিএম (অপারেশন) মশিউর জামান বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে আমাকে সভায় ডেকে নিয়ে এসব বিষয়ে জানানো হলে আমি বিআরটিসির উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে তা অবহিত করেছি। এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানানোর জন্য ইতোমধ্যেই যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর পত্র দেয়া হয়েছে। তাদের পক্ষ থেকে সিদ্ধান্ত আসলে আমরা তা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে অবহিত করবো।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি হিসেবে অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক ছিলেন তৎকালীন (২০১১-১২) সিন্ডিকেটের প্রধান। এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, চট করেই তো এ বিষয়ে কিছু বলতে পারব না। তিনি এ বিষয়ে পরিবহন দপ্তরে খোঁজ নিতে বলেন।

এ বিষয়ে জানতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদের মুঠোফোনে কল দিলেও তিনি কল রিসিভ করেন নি।

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে দেয়া হলে এসব গাড়িতে বিশ্ববিদ্যালয়কে কেন টাকা দিতে হবে? আমি বিষয়টি দেখছি।

বাংলাদেশ জার্নাল/কে

  • সর্বশেষ
  • পঠিত