ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : কিছুক্ষণ আগে
শিরোনাম

শিক্ষা প্রশাসনে আসছে বড় রদবদল

  নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ : ১৬ জানুয়ারি ২০১৯, ১৭:০৬

শিক্ষা প্রশাসনে আসছে বড় রদবদল

শিক্ষা প্রশাসনে বড় ধরনের রদবদল আসছে। রাজধানীর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ‘লোভনীয়’ পদে ৮/১০ বছর ধরে ঘুরেফিরে চাকরি করা শিক্ষকদের এবার বদলি করার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। সরকারি হাইস্কুল, কলেজ, অধিদফতর, ডিআইএ ও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের বিতর্কিত কর্মকর্তাদের তালিকা করা হচ্ছে। এরপরই বদলি ও শাস্তিমূলক পদায়ন শুরু হবে। নতুন সরকারের শুরুতেই বদলির শিকার হতে পারেন, বিএনপি-জামায়াতপন্থি এমন কর্মকর্তারা নিজেদের ‘আওয়ামী লীগ সমর্থক’ দাবি করে বদলি ঠেকাতে সরকারের নানা মহলে ধর্ণা দিচ্ছেন।

নতুন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি ও শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল নানা মাধ্যমে শিক্ষা প্রশাসনের বিএনপি-জামায়াতপন্থি ও বিতর্কিত কর্মকর্তাদের সম্পর্কে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করছেন বলে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে। তারা গত সোমবার নিজ মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দুই বিভাগ, অধিদফতর, দফতরসহ ও বিভিন্ন উইং প্রধানদের সঙ্গে বৈঠকে শিক্ষা ব্যবস্থাপনায় বড় ধরনের পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিয়েছেন বলে জানা গেছে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন স্তরে ৮/১০ জন অতিরিক্ত ও যুগ্মসচিব ৭/৮ বছর ধরে চাকরি করছেন। তাদের কয়েকজনের বিরুদ্ধে বদলি ও নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ রয়েছে। অথচ সরকারি চাকরিতে একজন কর্মকর্তাকে একই স্টেশনে তিন বছরের বেশি রাখার নিয়ম নেই। এছাড়াও মাউশি’র শীর্ষস্থানীয় পদে একজন জুনিয়র কর্মকর্তাকে পদায়ন করায় পুরো শিক্ষা ক্যাডারেই অসন্তোষ বিরাজ করছে।’

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিগত চারদলীয় জোট সরকারের আমলের এক প্রভাবশালী কর্মকর্তাকে গত বছর শিক্ষার মানোন্নয়নের একটি বড় প্রকল্পের পরিচালক (পিডি) করা হয়। অপর একটি প্রকল্পের গুরুত্বপূর্ণ পদে বসানো হয়, বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার আসামি বজলুল হুদার এক আত্মীয়কে। এ নিয়োগ নিয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরের (মাউশি) কর্মকর্তাদের মধ্যে বেশ কিছুদিন অসন্তোষ বিরাজ করে।

বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে ২০০৪ সালে জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থাপনা একাডেমিতে (নায়েম) কর্মরত থাকা অবস্থায় সেনা শাসক জিয়াউর রহমানকে স্বাধীনতার ঘোষক অভিহিত করে একটি গবেষণাপত্র লিখে ব্যাপক আলোচনায় আসা এক কর্মকর্তাকে গত বছর মাউশি’র গুরুত্বপূর্ণ পরিচালকের পদে বসানো হয়।

এই তিনটি গুরুত্বপূর্ণ নিয়োগে তদবির করেছেন আওয়ামী লীগ সমর্থক বিশিষ্ট নাগরিকরা। এসব নিয়োগ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে মাউশি’র ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব-কোন্দল লেগেই আছে। সংস্থার দাফতরিক কাজেও এর নেতিবাচক প্রভাব পরছে।

এছাড়াও মাউশি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদফতর (ডিআইএ) এবং শিক্ষার মানোন্নয়নের বিভিন্ন প্রকল্পে বিএনপি-জামায়াত সরকারের বিতর্কিত ৩০/৪০ জন কর্মকর্তা বহাল রয়েছেন। তারা ঘুরেফিরে ৮/১০ বছর ধরে শিক্ষা ভবনে চাকরি করছেন। অথচ শিক্ষা জীবনে ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন-এমন কর্মকর্তারা শিক্ষা ভবনে অনেকটাই কোনঠাসা। ঘন ঘন বিদেশ ভ্রমণের যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা ভোগ করছেন বিএনপি-জামায়াতপন্থি কর্মকর্তারা।

একই অবস্থা বিরাজ করছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি), নায়েম ও মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদফতরে। রাজধানীর সরকারি কলেজগুলোর গুরুত্বপূর্ণ অনেক পদেও বহাল আছেন বিএনপি-জামায়াত সরকারের সুবিধাভোগী কর্মকর্তারা।

শিক্ষকদের দীর্ঘদিন একই পদ ও রাজধানীতে চাকরি করার বিষয়ে জানতে চাইলে বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির সভাপতি প্রফেসর আইকে সেলিম উল্লাহ খোন্দকার বলেন, ‘সুশাসনের জন্য সরকার যা যা পদক্ষেপ নেবে আমরা এর সঙ্গে থাকব। কারণ সব স্তরে সুশাসন নিশ্চিত করা সরকারের একটি কমিটমেন্ট (অঙ্গীকার)। এটি বাস্তবায়নে পদায়নের ক্ষেত্রে সততা, দক্ষতা ও যোগ্যতা- একটি ক্রাইটেরিয়া হওয়া উচিৎ। আর যাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধেও পদক্ষেপ নেয়া উচিৎ।’

স্কুল প্রশাসনেও বিতর্কিতদের দাপট: খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিএনপি-জামায়াত আমলের খোলস পালটিয়ে এখন আওয়ামী লীগের খোলস পরে সুবিধাজনক স্কুলের প্রধান শিক্ষকের পদে আছেন বেশ কয়েকজন। রাজধানীতে থাকার জন্য তারা সঙ্ঘবদ্ধভাবে ঢাকার অন্য স্কুলে প্রধান শিক্ষক পদায়নেও কর্তৃত্ব ধরে রাখছেন।

এর মধ্যে মতিঝিল সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সৈয়দ হাফিজুল ইসলাম ২০০৪ সাল থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত ধানমন্ডি ল্যাবরেটরি হাইস্কুল এবং ২০০৭ সালের অক্টোবর থেকে প্রায় ১১ বছর প্রধান শিক্ষকের পদে বহাল রয়েছেন।

এছাড়া শেরে বাংলানগর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সৈয়দা জিন্নাতুন নুর, শেরে বাংলানগর সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সফিকুর রহমান, মোহাম্মদপুর সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নাসরিন সুলতানা নুরুন্নাহার, টিকাটুলী কামরুনেসা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ওবায়দা বানু, নবাবপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রেবেকা সুলতানা ও নারিন্দা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক ৫/৭ বছরের বেশি সময় ধরে রাজধানীতে বহাল রয়েছেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সরকারি মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি ইনছান আলী জানান, ‘বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে শিক্ষাসচিব শহীদুল আলম তার পছন্দের শিক্ষকদের নেতৃত্বে মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির কমিটি গঠন করে দেন। ওই কমিটিতে রেহানা খানমকে সভাপতি, মোস্তফা কামালকে সাধারণ সম্পাদক এবং সৈয়দ হাফিজুল ইসলামকে কোষাধ্যক্ষ করা হয়। এর মধ্যে রেহানা খানম অবসরে গেলেও বাকি দুইজন আওয়ামী লীগ সরকারের আমলেও রাজধানীর লোভনীয় পদগুলোর সুবিধা ভোগ করছেন। এজন্য শিক্ষক সমাজ ক্ষুব্ধ।’

সরকার সমর্থক এই শিক্ষক নেতা আরো বলেন, ‘গত দশ বছর আওয়ামী লীগ সরকারে থাকলেও আওয়ামী লীগ সমর্থক শিক্ষকদের হয়রানির লাঘব ঘটেনি। অথচ সব সুযোগ-সুবিধাই ভোগ করছেন বিএনপি-জামায়াত সমর্থকরা। রাজধানীর ৩৮টি সরকারি হাইস্কুলের অধিকাংশের প্রধান শিক্ষকই বিএনপি-জামায়াত সরকারের সমর্থক। তাদের সরানো জরুরি।’

২০১৭ সালের ১ নভেম্বর রাজধানীর পুরনো ২৪টি সরকারি বিদ্যালয়ের ৫২২ জন শিক্ষককে বদলি করার সুপারিশ করে দুদক। এ সম্পর্কে দুদকের প্রতিবেদনে বলা হয়, ওইসব শিক্ষক দশ বছর থেকে সর্বোচ্চ ৩৩ বছর পর্যন্ত এক বিদ্যালয়েই রয়েছেন। তারা দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষকতার পাশাপাশি কোচিং বাণিজ্যের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট থেকে সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে অর্থ উপার্জন করছেন। দুদকের ওই প্রতিবেদন অনুযায়ী গত বছর নামমাত্র ২০/৩০ জনকে বদলি করা হয়, যাদের কয়েকজন পুনরায় রাজধানীতে পদায়ন ভাগিয়ে নেয়।

  • সর্বশেষ
  • পঠিত