ঢাকা, সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৩ মিনিট আগে
শিরোনাম

ষাঁড়ের জন্য বিয়েই করলেন না তিনি

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ : ১৭ জানুয়ারি ২০১৮, ০৬:৩৭

ষাঁড়ের জন্য বিয়েই করলেন না তিনি

তার বয়স এখন ৪৮ বছর। চাইলেই বিয়ে করে সুখে সংসার করতে পারতেন। কিন্ত ওই পথে হাঁটলেন না তিনি। বরং দাদা এবং বাবার পেশাকেই নিজের পেশা হিসেবে বেছে নিলেন ভারতের তামিলনাড়ুর প্রত্যন্ত গ্রামের এই দিনমজুর সেলভারানি কানাগারাসু।

তার বয়স যখন খুব অল্প ছিল তখন থেকেই তিনি স্বপ্ন দেখতেন দাদা এবং বাবার মতো তিনিও একদিন তামিলনাড়ুর বিখ্যাত বুল ফাইটিং জাল্লিকাট্টুতে অংশগ্রহণ করবেন। আর সেই মতো নিজেকে প্রস্তুতও করেছিলেন তিনি। তাই প্রাপ্তবয়স্ক অবস্থায় তার কাছে বেশ কিছু বিয়ের প্রস্তাব আসলেও তিনি তা ফিরিয়ে দেন। কারণ তিনি দেখেছিলেন তার ভাই অন্যান্য কাজে ব্যস্ত হয়ে যাওয়ায় তাদের পারিবারিক এই বিখ্যাত রীতি ধীরেধীরে হারিয়ে যেতে বসেছিল।

বর্তমানে তিনি রামু নামক একটি ১৮ বছরের ষাঁড়কে নিজের পুত্রসম লালনপালন করছেন। রামুকে যখন তিনি তার কাছে নিয়ে আসেন, তখন তার বয়স ছিল মাত্র ১০ বছর। এই আট বছর ধরে রামু সাতবার জাল্লিকাট্টুতে অংশগ্রহণ করেছে এবং তার মধ্যে পাঁচবার বিজয়ী হয়েছে। আর সেই কারণেই রামু এখন তামিলনাড়ুর কিংবদন্তি। তাই সেলভারানি কানাগারাসু রামুকে নিয়ে বলেছেন, “রামু অনেকবার জাল্লিকাট্টুতে পুরস্কার জিতেছে কিন্ত সেটা বড় কথা নয়। আসল কথা হল ও আমাদের পরিবারের বহুকালের হারিয়ে যাওয়া সম্মান ফিরিয়ে দিয়েছে। তাই ওকে আমি কোনওদিন নিজের কাছ থেকে দূরে সরিয়ে দিতে পারব না। ও এখন আমার কাছে নিজের সন্তানের থেকেও অনেক বড়”।

সেলভারানি কানাগারাসু দিনমজুরি করে দিনে প্রায় ২০০ টাকা উপার্জন করেন। তার মধ্যেই কোনও মতে চলে তার ছোট্ট সংসার। কিন্ত তবু কোনওভাবেই রামুর প্রতিদিনের ডায়েটের কোনও গাফিলতি হতে দেননা সেলভা। কারণ রামুকে তিনি পরবর্তী জাল্লিকাট্টুর জন্য প্রস্তুত করছেন। তাই রামুর প্রতিদিনের খাবারে তিনি কোনওভাবেই ভাত, কলা, নারকেল, খেজুরের মতো পুষ্টিকর খাবার রাখতে ভোলেন না। এ বিষয়ে তাকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেছেন, “আমি একবেলা খেয়ে থাকি তাতে কোনও সমস্যা নেই, কিন্ত আমি সব সময় মাথায় রাখি রামু যেন ঠিক পরিমান মতো খেতে পায়”।

খাবার ছাড়াও রামুর অন্যান্য বিষয়ের উপরও সেলভারানির কড়া নজর। তাই প্রতিদিন তিনি নিয়ম করে রামুকে বাড়ির পাশের নদীতে নিয়ে যান, যাতে রামু ঠিক মতো সাঁতার কাটতে পারে এবং তার শরীর চর্চায় যাতে কোনও গাফিলতি না হয়।

সেলভারানির এক আত্মীয় ইন্দিরা সেলভারাজ জানিয়েছেন, অনেকেই রামুকে মোটা টাকা দিয়ে কিনতে চেয়েছেন, এমনকি তাদের মধ্যে কেউ কেউ রামুর জন্য এক লক্ষ্য টাকা পর্যন্ত দেবে বলেছেন। কিন্ত সেলভা রামুকে বিক্রি করতে নারাজ। তাই তিনি তার ১৮ বছরের ভাইজিকে প্রস্তুত করছেন, যাতে তার মৃত্যুর পরেও তাদের পরিবারের এই ঐতিহ্য কোনভাবেই নষ্ট না হয়ে যায়।

  • সর্বশেষ
  • পঠিত