ঢাকা, সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ২৭ মিনিট আগে
শিরোনাম

ফেডারেল তদন্তের মুখোমুখি নিউরালিংক

  আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশ : ০৬ ডিসেম্বর ২০২২, ১১:৫২

ফেডারেল তদন্তের মুখোমুখি নিউরালিংক
নিউরালিংকের বানর পেইজা। ছবি: সংগৃহীত

ইলন মাস্কের ব্রেইন কম্পিউটার ইন্টারফেস প্রতিষ্ঠান নিউরালিংক ফেডারেল তদন্তের মুখোমুখি হতে যাচ্ছে। যদিও এই নিয়ে বেশ কয়েকদিন ধরে চলমান বিতর্কের কারণে নিউরালিংক তার ইউটিউব চ্যানেলে প্রতিষ্ঠানটির অ্যানিমেল ফ্যাসিলিটিজের ভিডিও প্রকাশ করেছে।

রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নিউরালিংকের বিরুদ্ধে প্রাণী-কল্যাণ আইন লংঘনের অভিযোগে এ তদন্ত করা হবে। মানবদেহে ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের জন্য এক নতুন সময়সীমা ঘোষণা করার কয়েকদিন পরই এমন দুঃসংবাদ পেল প্রতিষ্ঠানটি।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রাণী কল্যাণ আইনে গবেষণা ও বাণিজ্যিক পণ্য পরীক্ষায় প্রাণীদের অপ্রয়োজনীয় কষ্ট ও মৃত্যুর কারণ হয়, এমন কোনো কিছু করা নিষিদ্ধ।

দেশটির ফেডারেল প্রসিকিউটররা আগেই বলেছিল নিউরালিংক প্রাণী কল্যাণ আইন লংঘন করে থাকতে পারে। সে সময় ইউএস ডিপার্টমেন্ট অফ এগ্রিকালচারের ইন্সপেক্টর জেনারেল তদন্ত শুরু করেছিলেন।

২০ জনেরও বেশি বর্তমান ও সাবেক নিউরালিংক কর্মী, পাশাপাশি কোম্পানির বেশকিছু নথি অনুসারে, প্রতিষ্ঠানটির গবেষকদের দ্রুত কাজ এগিয়ে নিতে চাপ দিয়েছিলেন। ফলে প্রাণীদের ওপর বেশ কিছু 'অনিচ্ছাকৃত পরীক্ষা' করতে হয়েছিল গবেষকদের।

প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, কিছু ব্যর্থ পরীক্ষার পুনরাবৃত্তি করতে হয়েছে, ফলে পরীক্ষা করা এবং মারা যাওয়া প্রাণীদের সংখ্যাও বৃদ্ধি পেয়েছে। গবেষণার গতি বাড়াতে মাস্কের দাবির মুখেই প্রাণীদের মৃত্যুর সংখ্যা প্রয়োজনের থেকে বেশি।

এদিকে নিউরালিংক গত ৩০ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হয়ে যাওয়া ‘শো অ্যান্ড টেল’ ইভেন্টে জানিয়েছে, আগামী ছয় মাসের মধ্যে মানব মস্তিষ্কে তাদের ডিভাইস স্থাপন করতে যাচ্ছে।

কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা বিশ্বের শীর্ষধনী ইলন মাস্ক জানিয়েছেন, নিউরালিংক প্রথম মানবদেহে ডিভাইস বসাতে নিজেদের প্রস্তুত করতে কঠোর পরিশ্রম করছে। এরই মধ্যে মানুষের দেহে পরীক্ষা নিরীক্ষার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসনের (এফডিএ) কাছে বেশিরভাগ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিয়েছে।

নিউরালিংক আপাতত দুইটি অ্যাপ্লিকেশনের ওপর বিশেষভাবে গুরুত্ব দিচ্ছে। একটি অ্যাপের মাধ্যমে যারা দেখতে পায় না, এমনকি জীবনে কোনোদিনই যারা দেখতে পাননি অর্থ্যাৎ জন্মান্ধ। তাদেরও দৃষ্টিশক্তি পুনরুদ্ধার করবে অ্যাপ্লিকেশনটি।

আরেকটি অ্যাপ্লিকেশন, যারা প্যারালাইসিসের কারণে নিজের পেশীও নড়াতে পারে না। তারাও অ্যাপ্লিকেশনের মাধ্যমে কম্পিউটার, মোবাইলের মতো স্মার্ট ডিভাইস ব্যবহার করতে পারবে।

ইলন মাস্ক বলেছেন, আপাতত এটি মস্তিষ্কের কিছু অংশ দিয়ে কাজ শুরু করলেও নিউরালিংকের দীর্ঘমেয়াদী লক্ষ্য হলো এমন সিস্টেম তৈরি করা যা পুরো মস্তিষ্ক থেকে তথ্য নিয়ে তা কাজে রুপান্তরিত করতে পারবে।

মাস্ক বলেন, এটি হয়তো অলৌকিক শোনাতে পারে, আমরা নিশ্চিত যে মেরুদণ্ডের কর্ড বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে এমন ব্যক্তির সম্পূর্ণ শরীরের কার্যকারিতা পুনরুদ্ধার করা সম্ভব। শো অ্যান্ড টেল ইভেন্টে একটি ডেমো মানবদেহের ওপর নিউরালিংকের রোবট ডিভাইস স্থাপন করে দেখায়।

এ ছাড়া আগেই ইমপ্ল্যান্ট হওয়া বানর পেইজা এখন নিউরালিংক ডিভাইসের মাধ্যমে লিখতেও পারে। এমন ভিডিও ফুটেজও দেখানো হয়েছে। এই ইভেন্টটি হওয়ার কথা ছিল ৩১ অক্টোবরে, হ্যালোউইনের দিনে। পরে ইলন মাস্ক তা পিছিয়ে দিয়ে নতুন তারিখ ঘোষণা করেন ৩০ নভেম্বর।

কিন্তু গত ২৪ নভেম্বর তারিখ নিউরালিংক তার অফিসিয়াল টুইটার পেজে ১৪ সেকেন্ডের ছোট্ট একটি ভিডিও শেয়ার করে। যেই ভিডিওর ক্যাপশনে ইভেন্টের সময় দেয়া হয় এবং ভিডিওর মধ্যে দেখা যায়, কালো একটি স্ক্রিনে একটি বার্তা ফুটে উঠছে, যেখানে দেয়া হচ্ছে, নিউরালিংকের ইভেন্টে যোগদানের আহ্বান।

এরপরেই মূলত নিউরালিংকপ্রেমী নেটিজেনদের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। অনেকেই ভেবেছিলেন, মানব মস্তিষ্কে হয়তো প্রথম ডিভাইস বসানোর কাজ এরই মধ্যে হয়ে গেছে।

এর আগে ২০২২-এর শুরুতেই ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের জন্য পরিচালক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দেয় ইলন মাস্কের প্রতিষ্ঠান নিউরালিংক। যুক্তরাষ্ট্রের বড় প্রতিষ্ঠানগুলো সাধারণত নতুন ডিভাইস ট্রায়ালের আগে ট্রায়াল ডিরেক্টর নিয়োগ করে থাকে।

ডিরেক্টরের দায়িত্ব সম্পর্কে সে সময় বলা হয়েছিল, নিয়োগ পাওয়া ব্যক্তিকে খুবই আন্তরিকতার সঙ্গে সৃজনশীল একদল ডাক্তার ও উচ্চমানের ইঞ্জিনিয়ারদের সঙ্গে কাজ করতে হবে।

এর আগে গত বছরের ডিসেম্বরে ওয়ালস্ট্রিট জার্নালকে ইলন মাস্ক জানিয়েছিলেন, ২০২২ সালের কোনো এক সময়ে নিউরালিংক মানবদেহে চিপ স্থাপন করবে।

২০২০-এর ইভেন্টে প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে এর মালিক ইলন মাস্ক জানান, ভবিষ্যতে স্মৃতিশক্তি হারিয়ে ফেলা, ব্রেন ড্যামেজ, হতাশা, উদ্বেগ ও আসক্তি, এমনকি নিউরো সংক্রান্ত বহু সমস্যার সমাধান করবে নিউরালিংক।

একই সঙ্গে তিনি দাবি করেন, ভবিষ্যতে নতুন কোনো ভাষা শেখার ক্ষেত্রে কিংবা কোনো দক্ষতা অর্জনের ক্ষেত্রে নিউরালিংক ডিভাইস মুহূর্তে তা মস্তিষ্কে আপলোড করে দেবে। এমনকি ব্রেনকে কপি করা সম্ভব হবে বলেও আশাবাদী মাস্ক।

বাংলাদেশ জার্নাল/জিকে

  • সর্বশেষ
  • পঠিত