ঢাকা, সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৪ মিনিট আগে
শিরোনাম

মসজিদ ভাঙাকে কেন্দ্র করে অস্থিতিশীল চীন

  জার্নাল ডেস্ক

প্রকাশ : ১৫ আগস্ট ২০১৮, ২২:১৫

মসজিদ ভাঙাকে কেন্দ্র করে অস্থিতিশীল চীন
ছবি: বিবিসি

কয়েকদিন আগে চীনের একটি শহরে পরিকল্পিতভাবে একটি মসজিদ ভাঙার চেষ্টা করার পর ঐ অঞ্চলের মুসলিম বাসিন্দারা এর বিরোধিতা করলে কিছুটা বিপদেই পড়ে কর্তৃপক্ষ।

বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক লেখক ও গবেষক ডেভিড স্ট্রাওপ মনে করেন, মানুষের ধর্মীয় রীতি অনুশীলনের ওপর নিয়ন্ত্রণ আনার চেষ্টা করছে চীন।

চীনের স্বশাসিত নিংজিয়া অঞ্চলের ছোট্ট মুসলিমপ্রধান শহর ওয়েইজু'তে নিজের পূর্ব অভিজ্ঞতার সাথে বর্তমান অবস্থার তুলনা করেন স্ট্রাওপ।

তিনি লিখেছেন, দু'বছর আগে যেই শহরটির মানুষজন আইন মেনে সচেতন নাগরিক হিসেবে জীবনযাপন করতো, কিন্তু মসজিদ ভাঙার চেষ্টার প্রতিবাদে এখন তারাই সরকারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ প্রদর্শন করছে।

মসজিদ ভাঙার কারণ হিসেবে স্থানীয় সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয় যে এই মসজিদ নির্মাণের জন্য প্রয়োজনীয় পরিকল্পনা এবং নির্মাণের অনুমোদন দেয়া হয়নি।

এর জবাবে ওয়েইজু'র হুই মুসলিম সম্প্রদায়ের নাগরিকরা মসজিদ ভাঙার কাজ বন্ধ করতে সেখানে অবস্থান নেন। মানুষের বিক্ষোভের মুখে সরকার মসজিদটি পুরোপুরি না ভাঙার সিদ্ধান্ত নিলেও মসজিদ ভবনের আরবীয় নকশায় পরিবর্তন আনার চিন্তা করছে।

তবে তা করতে গেলেও ওয়েইজু'র ঐতিহ্যের গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ হারিয়ে যেতে পারে এবং চীনের অর্থনীতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি সম্প্রদায়ের ধর্মীয় বোধ এতে আঘাতপ্রাপ্ত হতে পারে বলে মনে করেন স্ট্রাওপ।

ওয়েইজু শহরের জনসংখ্যার ৯০ ভাগই হুই জাতিগোষ্ঠীর সদস্য।

গণমাধ্যমে তাদেরকে অনেকসময় চীনা মুসলিম বলে চিহ্নিত করা হয়। তবে চীনে হুই মুসলিমদের পূর্বপুরুষরা অষ্টম শতাব্দীতে ট্যাঙ রাজবংশোদ্ভূত বলে ধারণা করেন স্ট্রাওপ।

চীনের মানুষের সাথে কয়েক শতাব্দীব্যাপী মিশ্রণের পর বর্তমানে চীনের সংখ্যাগুরু হান সম্প্রদায়ের সাথে তাদের বাহ্যিক বৈশিষ্ট্যে খুব একটা পার্থক্য চোখে পড়ে না।

ঐ শহরে থাকার সময় নিজের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করতে গিয়ে স্ট্রাওপ উল্লেখ করেন যে, শহরের অধিকাংশ নারীই হিজাব পরেন এবং অধিকাংশ পুরুষই মুসলিমদের প্রার্থনার সময় সাদা টুপি পরে থাকেন।

স্ট্রাওপ লিখেছেন, শহরের প্রায় প্রত্যেকেই প্রতিদিনের প্রার্থনার জন্য মসজিদে যেতো। শহরের খাবার দোকানগুলোতেও শুধুমাত্র হালাল খাবার বেচাকেনা হতো। তার মতে, শহরের কোনো দোকানে মদ জাতীয় পানীয় বিক্রি হতো না।

ধর্মীয় আচারের বিরুদ্ধে অভিযান

রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে কোনো প্রকার হুমকির সম্ভাবনা রোধ করতে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং'এর নির্দেশনায় বিভিন্ন ধর্মীয় মতাদর্শের বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হয়।

নিরাপত্তার অজুহাতে এধরনের অভিযান চালায় সরকার। তারা দাবি করে ধর্মীয় জঙ্গীবাদের উত্থান ঠেকাতে এই ধরণের কার্যক্রম পরিচালনা গুরুত্বপূর্ণ।

চীনের কমিউনিস্ট পার্টির (সিসিপি) ১৯তম কংগ্রেসে প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ঘোষণা করেন দলকে অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে যে চীনের সব ধর্ম যেন চীনের প্রাতিষ্ঠানিক মূলধারার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয় এবং ধর্মগুলো যেন সমাজতান্ত্রিক ধারার সাথে খাপ খাইয়ে নিতে পারে।

এই বক্তব্যের পর চীনের বিভিন্ন এলাকার স্থানীয় সরকার ধর্মীয় রীতি পালনে নানাভাবে বাধা দিয়ে আসছেন। এই অভিযানের ফলে সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে চীনের মুসলিম সম্প্রদায়।

সবচেয়ে বড় উদাহরণ, চীনের উত্তর-পশ্চিমের জিনজিয়াং এ উইঘুর মুসলিমদের বিরুদ্ধে অভিযান।

হিজাব পরা বা সামাজিক মাধ্যমে কোরানের বাণী প্রচার করার কারণে তাদের বিরুদ্ধে ধর্মীয় জঙ্গীবাদ ছড়ানোর অভিযোগ আনে ঐ অঞ্চলের স্থানীয় সরকার। সম্প্রতি জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, উইঘুর জাতির প্রায় ১০ লাখ মুসলিমকে ধর্মীয় জঙ্গিবাদ ছড়ানোর অভিযোগে আটক করে রাখা হয়েছে।

এসএস

  • সর্বশেষ
  • পঠিত