ঢাকা, বুধবার, ০১ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ২০ মিনিট আগে
শিরোনাম

রোহিঙ্গা গণহত্যা: মিয়ানমারের বিরুদ্ধে তদন্তের অনুমতি দিলো আইসিসি

মিয়ানমারের বিরুদ্ধে তদন্তের অনুমতি দিলো আইসিসি

মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে সে দেশের সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী রোহিঙ্গাদের ওপর যে ভয়াবহ নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে সেসব ঘটনা তদন্তের অনুমোদন দিয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি)। আইসিসির এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এই তদন্ত বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের পরিস্থিতি বলে গণ্য হবে।

বৃহস্পতিবার আইসিসির প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, চলতি বছর জুলাইয়ে মিয়ানমারের রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সংগঠিত অপরাধের বিষয়ে আইসিসির এখতিয়ারের মধ্যে থেকে প্রসিকিউটর তদন্ত শুরুর জন্য যে আবেদন করেছিলেন সেটিই অনুমোদন করছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের প্রি ট্রায়াল চেম্বার-৩।

চেম্বার ঘটনার শিকার অসংখ্য মানুষের পক্ষ থেকে আসা অভিযোগ সমূহের বিষয়ে মতামত পেয়েছে বলেও এতে উল্লেখ করা হয়েছে। আইসিসির রেজিস্ট্রি অনুযায়ী নির্যাতনের শিকার হওয়া বিভিন্ন ব্যক্তি সর্বসম্মতভাবে তদন্ত শুরু করার দাবি করেছেন।

আইসিসির বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এটা বিশ্বাস করার যৌক্তিক ভিত্তি রয়েছে যে, রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে ব্যাপকভাবে এবং পদ্ধতিগত সহিংস কর্মকাণ্ড ঘটানো হয়ে থাকতে পারে, যা মিয়ানমার-বাংলাদেশ সীমান্ত পাড়ির পেছনে মানবতাবিরোধী অপরাধ হিসেবে গণ্য হয়ে থাকতে পারে। চেম্বার তাই বাংলাদেশ/মিয়ানমারের পরিস্থিতি তদন্তের অনুমোদন দিয়েছে।

গত বছর সেপ্টেম্বরে রোহিঙ্গাদের বিতাড়নে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটনের জন্য মিয়ানমারের বিচারের এখতিয়ার নেদারল্যান্ডসের দ্য হেগের এ আদালতের রয়েছে বলে সিদ্ধান্ত আসার পর প্রাথমিক তদন্ত শুরু হয়।

যদিও মিয়ানমার সদস্য দেশ নয়, তবে বাংলাদেশ আইসিসি রোম সনদ ২০১০ সালে অনুস্বাক্ষর করেছে। আর প্রাপ্ত তথ্য পর্যালোচনা করে আদালত মনে করেছে যে, এটা বিশ্বাস করার কারণ আছে যে ব্যাপক ভিত্তিক বা সিস্টেমেটিক সহিংসতা হয়েছে যার কারণে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর জোরপূর্বক দেশত্যাগের মতো ঘটনা মানবতা বিরোধী অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।

চলতি বছরের জুলাইয়ে শুরু হওয়া প্রাথমিক তদন্ত শেষে পূর্ণ তদন্ত শুরুর জন্য আইসিসির কৌঁসুলি ফাতৌ বেনসুদা আবেদন করেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে বিচারকরা তদন্তের অনুমতি দিলেন। রোহিঙ্গা মুসলিমদের বিরুদ্ধে নৃশংতার অভিযোগের তদন্তে এটাই প্রথম কোনো আন্তর্জাতিক আদালতের উদ্যোগ।

আইসিসি বলেছে, পূর্ণ তদন্তের পর কৌঁসুলিরা এক বা একাধিক অভিযুক্তের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানাও জারি করতে পারে সংস্থাটি। তবে এর নিজস্ব কোনো বাহিনী না থাকায় অভিযুক্তদের আটক বা গ্রেপ্তার করতে বা দণ্ড কার্যকর করতে পারে না। এ জন্য তারা সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্র ও অন্যান্য রাষ্ট্রকে অভিযুক্তকে গ্রেপ্তারের আহ্বান জানায়। এ জন্য তারা সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্র ও অন্যান্য রাষ্ট্রকে অভিযুক্তকে গ্রেপ্তারের আহ্বান জানায়।

আইসিসিরি পরবর্তী পদক্ষেপ

কৌঁসুলির অফিস এখন নির্ভরযোগ্য সূত্র থেকে, স্বাধীন এবং নিরপেক্ষভাবে তথ্য প্রমাণ সংগ্রহের কাজ শুরু করবে। প্রয়োজনীয় আলামত সংগ্রহের জন্য এই তদন্ত দল যতদিন প্রয়োজন সময় নিতে পারবে।

আইসিসি বলছে, যদি কোন ব্যক্তির সম্পৃক্ততার পক্ষে যথেষ্ট প্রমাণাদি সংগ্রহ হয় তাহলে তদন্ত কৌসুলি প্রি-ট্রায়াল চেম্বার তিন এর বিচারকের কাছে ঐ ব্যক্তির নামে আদালতে হাজির হবার জন্য সমন জারি করা অথবা গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আবেদন করতে পারবেন। চেম্বার বিচারকের ইস্যুকৃত গ্রেপ্তারি পরোয়ানা যাবে সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রের কাছে।

চেম্বার বিচারকের ইস্যুকৃত গ্রেপ্তারি পরোয়ানা যাবে সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রের কাছে। রোম সনদের নীতিমালা অনুযায়ী ২০০২ সালে প্রতিষ্ঠিত এই আদালত বিচারের মাধ্যমে যে কোনো ব্যক্তি বা সংগঠনকে দোষী সাব্যস্ত করতে পারে। এমনকি গ্রেপ্তারি পরোয়ানাও জারি করতে পারে সংস্থাটি। তবে এর নিজস্ব কোনো বাহিনী না থাকায় অভিযুক্তদের আটক বা গ্রেপ্তার করতে বা দণ্ড কার্যকর করতে পারে না।

এ জন্য তারা সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্র ও অন্যান্য রাষ্ট্রকে অভিযুক্তকে গ্রেফতারের আহ্বান জানায়।

এর আগে ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে রোহিঙ্গা ইস্যুতে মানবতা বিরোধী অপরাধের দায়ে মিয়ানমারের বিচারের এখতিয়ার আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের আছে বলে সিদ্ধান্ত ঘোষণার পর প্রাথমিক তথ্য প্রমাণ সংগ্রহের কাজ শুরু হয়েছিলো।

এ বছরের মার্চে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের প্রধান প্রসিকিউটর ফাতো বেনসুদা, স্ব-উদ্যোগে মিয়ানমারের রাখাইনে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সংঘটিত অপরাধ যাচাইয়ের সিদ্ধান্ত নেন।

এরপর জুলাই মাসের চার তারিখে রোহিঙ্গাদের ওপর যুদ্ধাপরাধ সংঘটিত হয়েছে কিনা তা নিয়ে তদন্ত শুরু করতে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত আইসিসির অনুমতি চান প্রসিকিউটর ফাতো বেনসুদা। জুলাই মাসে তার তদন্ত দল বাংলাদেশে এসে কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের কাছ থেকে ব্যাপক তথ্য সংগ্রহ করে।

এরপর প্রাথমিক তদন্ত শেষে পূর্ণ তদন্তের জন্য আবেদন করেন ফাতো বেনসুদা যাতে সায় দিলো আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের বিচারকরা। ফলে এই প্রথমবারের মতো রোহিঙ্গা মুসলিমদের নিপীড়নের ঘটনায় কোনো আন্তর্জাতিক আদালতে তদন্ত হতে যাচ্ছে।

যদিও শুরু থেকেই অনেকে এ প্রক্রিয়ার কার্যকারিতা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। কারণ মিয়ানমার আইসিসির সদস্য রাষ্ট্র নয়। একই ভাবে আইসিসির প্রতিনিধি দলকেও রাখাইনে পরিদর্শনে যাবার অনুমতিও দেয়া হয়নি।

এদিকে, আনুষ্ঠানিক তদন্ত শুরুর অনুমোদন পাবার পর আইসিসির সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন প্রসিকিউটর বেনসুদা। এক বিৃবতিতে তিনি জানিয়েছেন, মিয়ানমারে নির্যাতনের শিকার ব্যক্তিদের কাছে আইসিসির এ সিদ্ধান্ত একটি ইতিবাচক বার্তা দেবে।

সূত্র: বিবিসি বাংলা

এমএ/

  • সর্বশেষ
  • পঠিত