ঢাকা, বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১২ মিনিট আগে
শিরোনাম

গিজার পিরামিড এক ‘অচেনা রহস্য’

  ফিচার ডেস্ক

প্রকাশ : ২১ সেপ্টেম্বর ২০২০, ০১:২৬  
আপডেট :
 ২১ সেপ্টেম্বর ২০২০, ১৭:০৮

গিজার পিরামিড এক ‘অচেনা রহস্য’

সমসাময়িক পৃথিবীর আশ্চর্যজনক মনুষ্য নির্মিত স্থাপনাগুলো সপ্তাশ্চর্যের তালিকায় স্থান পায়। প্রাচীনকালে হেলেনীয় সভ্যতার পর্যটকরা প্রথম এ ধরনের তালিকা প্রকাশ করে। সপ্তাশ্চর্যের সর্বশেষ তালিকায় প্রকাশিত হয়েছে ২০০৭ সালের ৭ জুলাই। এ তালিকায় প্রথমেই স্থান পেয়েছে গিজার পিরামিড। এটি মিসরের সবচেয়ে বড়, পুরনো ও আকর্ষণীয় পিরামিড। যা খুফুর পিরামিড হিসেবেও পরিচিত। ধারণা করা হয় খ্রিস্টপূর্ব প্রায় ৫ হাজার বছর আগে এটি তৈরি করা হয়েছিল। এর উচ্চতা প্রায় ৪৮১ ফুট এবং এটি প্রায় ৭৫৫ বর্গফুট জমির ওপরে স্থাপিত। পিরামিডটি যে সময় নির্মাণ করা হয় সে সময় মিসরের মানুষের বিশ্বাস ছিল মৃত্যুর পরবর্তী জীবনই হলো অনন্ত জীবন। তাদের মতে-মৃত্যুর পর দেহ যদি অক্ষত অবস্থায় সংরক্ষণ করা হয়, তাহলে তারা পরলোকে অনন্ত শান্তির জীবন পাবে। আর এ ভাবনা থেকেই তারা সম্রাটদের (ফারাও) দেহকে ভালোভাবে সংরক্ষণ ও কবর দেয়ার জন্য চুনাপাথরের ইট দিয়ে তৈরি করে পিরামিড।

পিরামিড নিয়ে মিসরে প্রচলিত একটি প্রবাদ হল- ‘Man fears time, but time fears the Pyramids.’

খুফুর পিরামিড তৈরি করতে সময় লেগেছিল প্রায় ২০ বছর এবং শ্রমিক খেটেছিল আনুমানিক ১ লাখ। পিরামিডটি তৈরি করা হয়েছিল বিশাল বিশাল পাথর খণ্ড দিয়ে। পাথর খণ্ডের এক একটির ওজন ছিল প্রায় ৬০ টন, আর দৈর্ঘ্য ছিল ৩০ থেকে ৪০ ফুটের মতো। এ পাথরগুলো আবার আনা হতো দূরের পাহাড় থেকে। জানা যায়, মিসরের প্রথম পিরামিডের স্থপতি ইমোটেপ ছিলেন প্রচুর প্রতিভাসম্পন্ন। তিনি একাধারে ছিলেন স্থপতি, মহাযাজক, গণিতবিদ সে সঙ্গে মিশরীয় চ্যান্সেলর ছিলেন। তিনি বেঁচে থাকতে তার প্রতিভার তেমন সমাদর পাননি। তবে ইমোটেপের মৃত্যুর তিন হাজার বছর পর থেকে তার সুনাম ও প্রতিভা ছড়িয়ে পড়ে চারদিকে।

অনেক দিন ধরেই মানুষের মধ্যে একটা ধারণা ছিল পিরামিড বানানোর কাজে ফারাওরা দাসদের ব্যবহার করতেন। আবার অনেকের মতে পিরামিড তৈরির জন্য সমগ্র মিসর থেকেই দক্ষ শ্রমিকরা আসতেন। আর কাজ করতে গিয়ে কারো মৃত্যু হলে সম্মান দেখিয়ে তাকে ফারাওয়ের পাশেই কবর দেয়া হতো। তবে, এ নিয়ে রয়েছে বিতর্ক। বলা হয়ে থাকে প্রাচীন মিসরীয়রা স্বাভাবিক মানুষদের চেয়ে আলাদা ছিল। আর এ কারণেই তারা এ বিশাল বিশাল পিরামিড বানাতে পেরেছিল। অনেকের আবার ধারণা এর পেছনে হয়তো কোনো অদৃশ্য শক্তি ছিল।

প্রসঙ্গত, যারা মিসরীয়দের নিয়ে বিস্তর পড়াশোনা করেনি তারাও মিসরকে চিনবে পিরামিডের জন্য। প্রাচীন এই স্থাপত্য মিসরকে যেমন দিয়েছে পরিচিতি, তেমনি এর রহস্য মানুষকে কাছে টেনেছে বারবার। এ পিরামিডগুলোর সামনে দাঁড়ালে যে কারও মনে প্রথমেই প্রশ্ন জাগবে যিশুখ্রিস্টের জন্মেরও ৩১৫০ বছর আগে, শ্যামলা গাত্রবর্ণের রহস্যময় মানুষের মধ্যে কী এমন ছিল— যা এত বিশাল জ্যামিতিক সূক্ষ্ম নির্ভুল মাপের পিরামিডগুলো বানাতে সক্ষম হয়েছিল? পাথরগুলোই বা কাটা হলো কীভাবে! আবার ভেতরেই বা কেন এত অভিশাপে মোড়ানো প্রতিটি ফারাও রাজার শয়নকক্ষ? প্রশ্নগুলোর উত্তর পাবেন অনেক, কিন্তু গোলকধাঁধা থেকে বের হওয়ার কোনো উপায় নেই! ছোটবড় মিলিয়ে মিশরে প্রায় ৭৫টি পিরামিড রয়েছে। মিসরে সাধারণত এপ্রিল-মে মাসের দিকে পর্যটকরা সবচেয়ে বেশি ভিড় জমায়। বহুকাল ধরে এ পিরামিডগুলো এক অচেনা রহস্য! তবে, করোনার কারণে এখন পর্যটকের ভাটা পড়েছে মিসরজুড়ে। কর্তৃপক্ষ আশা করছেন, করোনার পরবর্তী সময়ে আবার আগের মতো পর্যটকসমাগম হবে ঐতিহ্যবাহী এ স্থানে।

বাংলাদেশ জার্নাল/আর

  • সর্বশেষ
  • পঠিত