ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৯ মিনিট আগে
শিরোনাম

রিপোর্টার থেকে সম্পাদক (পর্ব -৩০)

  শাহজাহান সরদার

প্রকাশ : ২৩ জানুয়ারি ২০২০, ০৯:০৫

রিপোর্টার থেকে সম্পাদক (পর্ব -৩০)

[দেশের জনপ্রিয় দুটি পত্রিকার (যুগান্তর, বাংলাদেশ প্রতিদিন) জন্মের পেছনের ইতিহাস, কর্তৃপক্ষের চাপিয়ে দেয়া বিব্রতকর বিভিন্ন আদেশ নির্দেশ, হস্তক্ষেপ, পত্রিকা প্রকাশের ওয়াদা দিয়ে অন্য একটি জনপ্রিয় পত্রিকা থেকে নিয়ে এসে পত্রিকা না বের করে হাতজোড়ে ক্ষমা প্রার্থনা করে বিদায় দেয়া, পত্রিকা প্রকাশের পর কোন কোন কর্তৃপক্ষ কর্তৃক কিছু দিনের মধ্যেই ছাপা সংখ্যা কমিয়ে দিয়ে লাভ খোঁজা, ইচ্ছেমত সাংবাদিক-কর্মচারি ছাঁটাই করা সহ পত্রিকার অন্দর মহলের খবরা-খবর, রাজনৈতিক মোড় ঘুড়িয়ে দেয়া কিছু রিপোর্ট, সাংবাদিক ইউনিয়ন, ঢাকা রিপোটার্স ইউনিটির কিছু ঘটনা এবং মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ নিয়ে আমার এ বই ‘রিপোর্টার থেকে সম্পাদক’। জানতে পারবেন সংবাদপত্র জগতের অনেক অজানা ঘটনা, নেপথ্যের খবর।]

(পর্ব -৩০)

তিনি বললেন, আমি একমাসের জন্য পরিবার-পরিজন নিয়ে দেশের বাইরে যাচ্ছি। ফিরেই সব ব্যবস্থা করব। আপনি চিন্তা করবেন না। আমি নিশ্চিত ছিলাম তিনি পত্রিকা করছেন না তবুও তিনি বলেছেন। কারণ হলো তার বৈশিষ্ট্য আমার বোঝা হয়ে গেছে। আর তিনি যাদের নাম আমাকে বলেছেন তাদের খপ্পর থেকে বের হয়ে আসা কঠিন। তবুও কী আর করা। বাইরে থেকে না আসা পর্যন্ত আবার অপেক্ষার পালা। পক্ষকাল পর শামীম সাহেব দেশে ফিরে আসেন। ল্যাবএইডের আমার ঘনিষ্ঠজনের মাধ্যমে জেনে যাই যে তিনি পত্রিকা করছেন না বলে ইতোমধ্যেই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। কিন্তু আমাকে সরাসরি বলতে পারছেন না। তাই সময়ক্ষেপণ করছেন। বিদেশ থেকে ফিরে আসার পর দু’দিনও তার কোন খোঁজখবর পাইনি। তৃতীয় দিন আমি নিজেই হাজির হয়ে জিজ্ঞেস করি আপনি কী করতে চান সোজাসুজি আমাকে বলুন। তিনি চুপচাপ, কথা বলছেন না। আমি বলি, আপনাকে আজ স্পষ্ট করে বলতে হবে। কাগজ করবেন কি, করবেন না। করলে কবে নাগাদ, আর না করলেও বলে দেবেন। তিনি বললেন, বিকালে জানাবেন। আমি সেদিন রাত পর্যন্ত অফিসে অপেক্ষা করি। কিন্তু জানালেন না। জানালেন পরদিন। তবে টেলিফোনে বা সামনা-সামনি নয়। তার ব্যক্তিগত কর্মকর্তা দিয়ে একটি ব্যক্তিগত চিঠি পাঠান। চিঠিতে খুব নম্র, ভদ্র ও বিনয়ী ভাষায় জানান, আর্থিক সমস্যার কারণে তার পক্ষে এখন পত্রিকা প্রকাশ সম্ভব নয়। এজন্য তিনি দুঃখিত ও লজ্জিত। তিনি সামনাসামনি কথাটি বলতে পারছেন না। তাই ব্যক্তিগত চিঠি পাঠিয়েছেন। চিঠি পাওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই এলেন সাংবাদিকতা বিভাগের সেই অধ্যাপক। যিনি আগেই শামীম সাহেব পত্রিকা করবেন কিনা এ বিষয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছিলেন। যেহেতু তিনি আগেই বলেছিলেন, আমি তাকে বিষয়টি বলি। অধ্যাপক সাহেব তখন অনেক কথা বললেন। আমি শুধু বললাম, অনেকে হয়তো অনেকভাবে প্রতারণার শিকার হয়। আমিও শিকারে পরিণত হয়েছি। এই নিয়ে বেশি উচ্চ-বাচ্য মানে নিজের সম্মান ক্ষুণœ করা। আর এ-ধরনের লোকদের সাথে যত কম মেলামেশা করা যায় ততই ভাল।

বড় চাকরি ছেড়ে নতুন কাগজ বের করতে এসে এখন কাগজই হচ্ছে না। তাই বড় হতাশা গ্রাস করে। শামীম সাহেবের মুখ দেখতে ইচ্ছে করে না। তবু আসার আগে তার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে এসেছি। এই ঘটনার পর কয়েকদিন হোটেল সোনারগাঁয়ে দেখা হয় আমার সেই স্নেহাস্পদ বিজ্ঞাপনী সংস্থার কর্ণধারের সঙ্গে। তিনি প্রথম বললেন, দেখেছেন তো। আমি তো আগেই বলেছিলাম, শামীম সাহেব কাগজ বের করবেন না। শুনলাম আরো অনেক কথা। প্রায় প্রতিদিন শামীম সাহেব কোন না কোন সাংবাদিকের সঙ্গে কথা বলতেন। সংবাদপত্র সম্পর্কে ধ্যান-ধারণা নিতেন। যা শুরু করেছিলেন দীর্ঘকাল আগে। আমার কাছ থেকে নিয়েছেন প্রায় সাত-আট বছর। এমন আরও অনেকের কাছ থেকে নিয়েছেন। আর আমাকে এনে পত্রিকা করবেন সব ঠিকঠাক করার পর তিনি আমার সাথে আলোচনা না করে বুদ্ধি নিতেন তার মতো করে তথাকথিত তরুণ সাংবাদিকদের সঙ্গে। তার কথামতো দু’একজন তরুণ সম্পাদক এবং ঊর্ধ্বতন পদধারীদের সঙ্গে তিনি একাধিকবার বৈঠক করেছেন। পত্রিকা প্রকাশ করলে কি সুবিধা-অসুবিধা, লাভ-লোকসান ইত্যাদি নিয়ে তাদের কথা হতো। এর মধ্যে একজন বুদ্ধি দিয়েছেন পত্রিকা করে লাভ কী? বিপদে-আপদে তো তারাই আছেন। আর কেউ কেউ বলেছেন, পত্রিকায় এখন বেশি বিনিয়োগ। এত বিনিয়োগ না করে অন্য খাতে বিনিয়োগ করা ভাল। কেউ কেউ বসুন্ধরার ভয়ও দেখিয়েছেন। আমাকে নিয়ে কাগজ বের করলে বসুন্ধরা কর্তৃপক্ষ অসন্তুষ্ট হতে পারে। এতে তিনি বিপদগ্রস্ত হতে পারেন। শামীম সাহেব তাদের কথায় হোক, নিজের বুদ্ধিতে হোক অথবা অর্থের অভাবে হোক দৈনিক পত্রিকা আর প্রকাশ করেননি। আমি বিদায় নিয়ে এসেছি। পরে শুনেছি যারা শামীম সাহেবকে বুদ্ধি-বিবেচনা দিয়েছেন তাদের মধ্যে অন্তত দু’জন তার অর্থে বিদেশভ্রমণ করেছেন। আকারে ইঙ্গিতে শামীম সাহেবও একবার আমাকে কথাটা বলেছিলেন। তখন বুঝিনি, পরে বুঝেছি। তিনি বলেছিলেন, ভাই ডাকাত! ডাকাত! কিছু কিছু সাংবাদিক সম্পর্কে এমন বলেন। হোটেল ওয়েস্টিনে একটি ভোজের কথাও তিনি বলেছিলেন। তখন আমি ক্ষুব্ধ হয়ে বলেছিলাম আপনি এরকম বলবেন না। সব পেশায়ই ভাল-খারাপ থাকে। তবে খারাপের সংখ্যা কম। আর আপনাদের মতো কিছু লোক তাদের দিয়ে সুবিধা আদায় করেন। আবার বদনাম করেন। আবার সময়মতো ঠিকই মেলামেশা করেন। সেদিনের তথ্যে আমি বুঝতে পারি ঘটনার পেছনে কোথাও কোন না কোন কিছু কাজ করেছে। সেটা কী তা আজও আমার কাছে রহস্যই রয়ে গেছে। তবে এরপর শামীম সাহেবের সঙ্গে দু’একবার দেখা হয়েছে। আমি তার কাছে জানতে চেয়েছি কেন কাগজ বের করলেন না? তিনি জবাব দেননি। বারবার এড়িয়ে যান। কেন আমার এত বড় ক্ষতি করলেন? তার জবাবও দেননি। তবে এটা সত্য, আমাকে দেখলে তার মধ্যে একধরনের অপরাধবোধ কাজ করে। এ অবস্থায় ল্যাবএইড গ্র“পের নামে ডিক্লারেশন নেয়া দৈনিক পত্রিকা ‘বাংলা দৈনিক’ এর সম্পাদকের পদ থেকে ২০১২ সালের ১১ জুলাই আমি পদত্যাগ করি।

ল্যাবএইডে থাকার সময়ই আশিয়ানগ্র“পের পক্ষ থেকে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। বিভিন্ন মাধ্যমে প্রস্তাব আসে। তারা একটি কাগজ করছে। অফিস নিয়েছে। লোকবল নিয়োগ করে সাংবাদিকদের প্রশিক্ষণও দেয়া হচ্ছে। যখন এমন প্রস্তাব এসেছিল তখনও শামীম সাহেব পত্রিকা করবেন না এমনটি জানা যায়নি। তাই আশিয়ান গ্র“পের পক্ষ থেকে আসা প্রস্তাবে আমি সায় দিইনি। আর বসুন্ধরা ও আশিয়ান গ্র“পের মধ্যে একধরনের দ্বন্দ্ব আছে। আশিয়ান গ্র“পের পত্রিকায় যোগ দিলে বসুন্ধরা কর্তৃপক্ষ হয়তো সহজভাবে নেবে না। মনে করতে পারে আমি মনে হয় এ জন্যই বাংলাদেশ প্রতিদিন ছেড়েছি। আমিও আর চাই না গ্র“পে গ্র“পে দ্বন্দ্ব এমন কোন গ্র“পের কাগজে আবার কাজ করি। আগে বিভিন্ন গ্র“পের কাগজে কাজ করে তো এমন দেখেছি। এ-ধরনের কাগজে কাজ করা মানসিকভাবে একধরনের যন্ত্রণা। কিন্তু মানুষের সব চাওয়া তো পূরণ হবার নয়। সব ইচ্ছাই বাস্তবায়ন হয় না। আমার বেলাও তাই হয়েছে। শামীম সাহেব যেদিন ব্যক্তিগত চিঠি দিয়ে জানালেন, পত্রিকা প্রকাশ করবেন না, সেদিনই কাকতালীয়ভাবে আবার আশিয়ান গ্র“পের পক্ষ থেকে তৃতীয় এক ব্যক্তি যোগাযোগ করেন।

আমি তাকে জানাই ঠিক আছে মালিক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বসতে হবে। আমার কিছু বক্তব্য আছে। যদি রাজি হন তাহলে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নেয়া যেতে পারে। তবে কয়েকদিন পর। তখনও ল্যাবএইড থেকে আমি বিদায় নেইনি। একই দিন আমি নিজেই যোগাযোগ করি বসুন্ধরা গ্র“পের এম ডি সায়েম সোবহানের (আনভীর) সঙ্গে। কেননা আমি প্রতিদিন থেকে আসার সময় তিনি বলেছিলেন, কোনোদিন কোনো সমস্যা হলে যোগাযোগ করবেন। সে কথা মনে করেই ফোনে জানালাম, দেখা করতে চাই। পরদিনই সময় দিলেন। গেলাম। দেখা হলো। বেশ আন্তরিকতার সঙ্গে কথাবার্তা। তাকে জানালাম শামীম সাহেব কাগজ বের করছেন না। তিনি বললেন, কেন? আমি বললাম বিষয়টি ঠিক আমারও বোধগম্য নয়। আর কিছু আলাপ-আলোচনার মধ্যে তিনি বসুন্ধরা গ্র“পের নিয়ন্ত্রণাধীন আরেকটি কাগজে আমাকে সম্পাদক হিসাবে যোগদানের জন্য বললেন। আমি বললাম, না তা ঠিক হবে না। সঠিকভাবে এ কাগজ চালানো আমার পক্ষে সম্ভব নাও হতে পারে। ফিরে আসার সময় তিনি আগের মতই বললেন। যেখানেই থাকেন যোগাযোগ রাখবেন।

চলবে...

বইটি পড়তে হলে সপ্তাহের রবি, মঙ্গল, বৃহস্পতিবার চোখ রাখুন ‘বাংলাদেশ জার্নাল’ অনলাইনে।

বইটি প্রকাশ করেছে উৎস প্রকাশন

আজিজ সুপার মার্কেট (তৃতীয় তলা), ঢাকা।

বইটি সংগ্রহ করতে চাইলে ক্লিক করুন

আরএ

  • সর্বশেষ
  • পঠিত