ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১৬ মিনিট আগে
শিরোনাম

প্রসঙ্গ: মৌলভীবাজারের অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনা

  নজরুল ইসলাম

প্রকাশ : ২৯ জানুয়ারি ২০২০, ১৬:২৭  
আপডেট :
 ৩০ জানুয়ারি ২০২০, ১৬:৩৮

প্রসঙ্গ: মৌলভীবাজারের অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনা

গ্যাস লাইনে লিক, বয়সের ভারে নাজেহাল পুরানো ইলেক্ট্রিক মিটার, ফায়ার Exit ছাড়া অপরিকল্পিত আবাসন, আমাদের উদাসীনতা ও আগুনের সূত্রপাত। গ্যাস শহুরে জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। রান্না থেকে শুরু করে ইন্ডাস্ট্রিয়াল উন্নতির কথা গ্যাস ছাড়া চিন্তা করা যায় না। গ্যাস সরবরাহের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো পাইপ লাইন। পাইপ লাইনে লিক হলে বড় ধরনের দুঘর্টনাসহ সম্পদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি ও প্রাণহানি ঘটতে পারে। দুঃখজনক হলেও সত্য যে, প্রতিটি দুর্ঘটনা ঘটার পর আমরা মাথায় হাত দিয়ে বলি হায়-রে -বাপ রে! তাই জানমাল ও ভয়াবহ ক্ষতির হাত থেকে বাচঁতে গ্যাস পাইপ লিক ও এর জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ জেনে নেয়াটা সকলের জন্য জরুরি।

গ্যাস পাইপ লিক হলে বোঝার একমাত্র উপায় হলো গ্যাসের গন্ধ। গ্যাস পাইপের যে জায়গায় লিক হলো তার আশেপাশে গ্যাসের গন্ধ ছড়িয়ে যাবে। গন্ধ পেলে বুঝতে হবে গ্যাস পাইপ লিক হয়েছে। গ্যাস পাইপ লিক হলে প্রথমে যে জায়গাটায় লিক হয়েছে সেটা খুঁজে বের করতে হবে। খুঁজে পাওয়ার পরে সেখানে স্কচটেপ লাগিয়ে স্থানীয় গ্যাস সেবা প্রদানকারী সংস্থাকে খবর দিতে হবে। পাশাপাশি সতর্ক থাকতে হবে গ্যাস পাইপ লিক হওয়া স্থানের আশেপাশে যাতে কেউ আগুন না জ্বলে বা দাহ্য জাতীয় পদার্থ আশেপাশে না রাখে -বিশেষ করে শুকনো কাঠ, পেট্রোলিয়াম জাতীয় পদার্থ ইত্যাদি। দাহ্য জাতীয় পদার্থ আশপাশে থাকলে তা সরিয়ে ফেলতে হবে। গ্যাসলাইনে কোনো ক্রটি বা জরুরি অবস্থার জন্য গ্যাস কোম্পানীর সঙ্গে যোগাযোগ করা যেতে পারে। প্রতিটি বাড়িতে, প্রতিটি মোবাইলে গ্যাস কোম্পানীর যোগাযোগ নাম্বার সংরক্ষণ করে রাখা প্রতিটি সচেতন নাগরিকের নাগরিক দায়িত্ব।

মৌলভীবাজারের অনাকাঙিক্ষত দুর্ঘটনা আমাকে আহত করেছে। শহরের প্রাণকেন্দ্র এম সাইফুর রহমান রোডস্থ পিংকি সু ষ্টোরে ভয়াবহ আগুন; মুহূর্তেই একই পরিবারের ৩ জন এবং নিকটাত্মীয় ২জনসহ মোট ৫ জনের করুণ মৃত্যু যেন শহর জুড়ে শোকের ছায়া নেমে এসেছে! মর্মান্তিক এ দুর্ঘটনায় নিহত সকালের আত্মার মাগফিরাত ও আহত সবার দ্রুত সুস্থতা কামনা করছি এবং শোকাহত পরিবারবর্গের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি।

আগুন ও এর ভয়াবহতা নিয়ে অত্যন্ত সংক্ষিপ্ত পরিসরে আলোচনার চেষ্টা করছি যা হয়ত সামান্যতম সামাজিক সচেতনতা তৈরিতে সহায়ক হবে।

বিষয়টির সাথে গত ১৬ বছর ধরে আমি professionally পরিচিত, অর্থাৎ ঐ বিষয়টি ‘পার্ট অফ মাই জব ইন লন্ডন। প্রতি দিনই কর্তব্যরত আমাকে লন্ডন ফায়ার বিগ্রেড LFB এর অফিসারদের সাথে কাজ করতে হয় যখন কোন দুঘটনার আলামত আমার কর্ম পরিমন্ডলে সৃষ্ট হয়। আমাকে তৈরি থাকতে হয় তা মোকাবেলা করার জন্য। লন্ডনে আমি যে হাসপাতালে কাজ করি সেখানে প্রতি সপ্তাহে সৃষ্ট হয় দুই একটা ফায়ার ইনসিডেন্ট। আমাদেরকে সমান-ই act করতে হয় until its confirm by লন্ডন ফায়ার বিগ্রেড it’s ‘true অর false’ ফায়ার এলার্ট।

ফায়ার এলার্ম কি?

উদাহরণস্বরূপ বলি -আমার হাসপাতাল বিল্ডিং এ কোনো এক জায়গায় ফায়ার এলার্ম শুরু হয়েছে তা Instantly চলে যায় মেইন ফায়ার প্যানেলে আর সেখান থেকে bleeping সিস্টেমের মাধ্যমে As a ইনসিডেন্ট অফিসার হিসেবে চলে আসে আমাদের কাছে! the location of the fire incident এরিয়া। এরপর মেইন রিসেপশন ইনফর্ম করে লন্ডন ফায়ার বিগ্রেডকে। সাথে সাথেই আমাকে মেন্যুয়াল অ্যাকশন শুরু করতে হয়। ৫ থেকে ১০ মিনিটের মধ্যে লন্ডন ফায়ার বিগ্রেড চলে আসে। ফায়ার বিগ্রেড চলে আসার পূর্বেই আমাদেরকে identify করতে হয় location অফ the ফায়ার। Ensure করতে হয় রোগী ছাড়া সকল staff building থেকে বের হয়ে একটি নিরাপদ দূরত্বে অবস্থান নিয়েছে এবং তদেরকে বাইরে অবস্থান করতে হবে until its conform by fair officer, কোন ভিজিটর এই সময়ে বিল্ডিং এ প্রবেশ করতে পারবে না until লন্ডন fire বিগ্রেড অফিসার্স confirm us the বিল্ডিং ইজ safe ফর staff visitor coming ইন। প্রতি বছরই আমাকে ট্রেনিং করতে হয় ফর রিফ্রেশমেন্ট of any latest update of fire ইনসিডেন্ট!

লন্ডন ফায়ার বিগ্রেড অফিসার্স তা পরিচালনা করে its completely depend on fire officer how they operate their operation to save life and প্রপার্টি।

আমাদের দেশের প্রেক্ষাপট একটু ভিন্ন, লন্ডনের সাথে বাংলাদেশকে তুলনা করা ঠিক হবে না, কিন্তু অ্যাকশন একি হওয়াটাই বাঞ্ছনীয়! Unfortunately যা অত্যন্ত হতাশাব্যঞ্জক বাংলাদেশে। যাক একটু ফায়ার সতর্কতা নিয়ে সংক্ষিপ্ত একটু আলোচনা করতে চাই, প্রথমে জেনে নেই-

আগুন কি?

স্কুলে আমি সায়েন্সের ছাত্র ছিলাম, পড়েছি আগুন কি? আগুন হলো- সাধারণত বাতাসের অক্সিজেনের সাথে জ্বালানির কার্বন ও হাইড্রোজেনের মিলনে সৃষ্ট এক বিশেষ রাসায়নিক বিক্রিয়া। আলোর মাধ্যমে এ রাসায়নিক বিক্রিয়া শক্তিতে প্রকাশ পায়।

যতক্ষণ পর্যন্ত আগুন আমাদের নিয়ন্ত্রণে থাকে ততক্ষণ তা আমাদের বন্ধু। আবার একটু অবহেলার কারণে তা আবার শত্রু হতে বিন্দুমাত্র দেরি করে না। সতর্কতার অভাবে মুহূর্তেই অগ্নিকাণ্ড ভস্মিভূত করতে পারে আপনার প্রিয় সাজানো সংসার, বসতবাড়ি, অফিস কিংবা ব্যবসা প্রতিষ্ঠাকে।

তাই আপনাকে অবশ্যই তিনটি প্রধান বিষয় মাথায় রাখতে হবে-

প্রথমত : অগ্নিকাণ্ডের কারণ।

দ্বিতীয়ত : এ থেকে সতর্ক থাকার নিয়ম কানুন আর

তৃতীয়ত : অগ্নিকাণ্ডের পর করণীয়।

বাংলাদেশে সাধারণত দেখা যায়, গ্রীষ্মকালেই আগুন লাগার খবর বেশি পাওয়া যায়, তবে যে কোনো সময়েই ঘটতে পারে। অক্সিজেনের কোনো সময়কাল স্থান নেই। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে গ্রীষ্মকালে তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি ও শুষ্ক থাকে। বাতাসের বেগও এ সময় বেশি থাকে। তাই কোনো কিছু আগুনের সংস্পর্শে আসা মাত্রই আগুন লেগে যায়। এতে আগুন এক স্থান থেকে উড়ে অন্য স্থানে সহজেই গিয়ে লাগতে পারে। এ ছাড়া গ্রীষ্মকালে বৈদ্যুতিক তার ঢিলেঢালা হয়ে অন্য তারের সংস্পর্শে এলেও আগুন লেগে যেতে পারে। প্রচণ্ড বাতাসে আগুন সহজেই দ্রুত অন্যত্র ছড়িয়ে পড়ে। তাই এ সময় আগুনের ব্যাপারে বেশি সতর্কতা প্রয়োজন।

আমরা যদি অগ্নিকাণ্ডের সম্ভাব্য কারণগুলো খুঁজি তাহলে দেখতে পাই-

১) ভালোভাবে গ্যাসের চুলা বন্ধ না করা এবং গ্যাসের লাইন ত্রুটিপূর্ণ বা ছিদ্র থাকা।

২) চুলা জ্বালিয়ে চুলার ওপর কাপড় শুকাতে দেয়া।

৩) সিগারেটের জ্বলন্ত আগুন।

৪) উত্তপ্ত ছাই।

৫) বৈদ্যুতিক গোলযোগ ও ত্রুটিপূর্ণ বৈদ্যুতিক তার।

৬) উত্তপ্ত তেল থেকে সৃষ্ট কারণে।

৭) আতশবাজি বা পটকা থেকে।

৮) বজ্রপাত।

৯) সাধারণ বিদ্যুতের তার দিয়ে বেশি ভোল্টের বিদ্যুৎ ব্যবহার করলে।

১০) নিম্নমানের বৈদ্যুতিক তার ব্যবহার করলে।

১১) বাচ্চাদের আগুন নিয়ে খেলা করা।

যেভাবে আমরা সতর্ক থাকতে পারি

১) রান্নার সময় সহজে খুলে ফেলা যায় এমন পোশাক ব্যবহার করুন। কিন্তু ঢিলেঢালা কাপড় নয়। রান্না ঘরে আপনার (মেয়েদের) ওড়না-শাড়ি সাবধানে রাখুন।

২) চুলার কাজ শেষ হওয়ার পর তা বন্ধ করে রাখা। গ্যাসের চুলা হলে ভালোভাবে সুইচ বন্ধ করে পরীক্ষা করা−ঠিকমতো বন্ধ হয়েছে কি না। সাধারণ চুলা বা লাকড়ির চুলা হলে ব্যবহারের পর পানি দিয়ে পরিপূর্ণভাবে নেভানো। ঠাণ্ডা ছাই ঢেলে নিশ্চিত হোন আগুন নিভেছে।

৩) মাটির চুলার তিন পাশে অন্তত আড়াই ফুট দেয়াল তুলে দিন। ঢাকনা বা চিমনিযুক্ত বাতি ব্যবহার করুন। এমনকি মোমবাতি ব্যবহারের সময়ও সতর্ক থাকুন।

৪) চুলার ওপর কখনোই কাপড় শুকাতে না দেয়া।

৫) গরম তরকারি ও ফুটন্ত পানি নাড়া চাড়ার সময় সতর্ক থাকুন। শিশুদের নাগালের বাইরে রাখবেন।

৬) মশার কয়েল এমন স্থানে রাখুন, যেখান থেকে অন্য কিছুতে আগুন লাগার কোনো ঝুঁকি থাকবে না

৭) মানসম্পন্ন বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা, ত্রুটিপূর্ণ তার ব্যবহার না করা ও ত্রুটিপূর্ণ তার দ্রুত সারিয়ে নেয়া।

৮) কেউ বিদ্যুতায়িত হলে সম্ভব হলে- মেইন সুইচ বন্ধ করে তারপর তাকে ধরুন।

৯) ধূমপান শেষে বিড়ি-সিগারেটের বাদ দেয়া অংশের আগুন নিভিয়ে ফেলুন। যেখানে-সেখানে তা ফেলবেন না। মশারির ভেতর বা খাটে শুয়ে শুয়ে ধূমপান করবেন না। আমাদের দেশের বেশির ভাগ পুরুষরা বাসায় পরিবারের সকল সদস্যে/ছোট্ট বাচ্ছাদের সামনে সিগারেট খেতে পছন্দ করেন যা অন্যায়ের সামিল।

১০) বাচ্চাদের আগুন নিয়ে খেলা করতে না দেয়া।

১১) অগ্নিকাণ্ড প্রতিরোধের পর্যাপ্ত জ্ঞান এবং এর বিভিন্ন কারণ নিয়ে আলোচনা করে জানা, ইন্টারনেটে অনেক ইনফরমেশন আছে যা পড়ে জেনে আগুন সম্পর্কে সতর্ক থাকা যায়।

আগুন লাগার পর

আগুন যদি লেগেই যায় তাহলে প্রথমেই খুব দ্রুততার সঙ্গে আপনাকে কাছের ফায়ার সার্ভিস স্টেশনে খবর দিতে হবে। আপনার কাছে কি স্থানীয় লোকাল ফায়ার স্টেশনের ফোন নাম্বার আছে? না থাকলে তা সংগ্রহ করা অত্যন্ত জরুরী। আগুন নেভানোর জন্য আপনাকে প্রাকৃতিক দুর্যোগে সাহায্যের নিয়োজিত ফায়ার বিগ্রেডের সহায়তা নেওয়া জরুরী , তাদের কাছে ফায়ার নিয়ন্ত্রণের আধুনিক সরঞ্জামাদি আছে।

আমাদের একটু অবেহলা ধ্বংস করে দিতে পারে জান-মাল স্বপ্নের সাজানো সংসার। তাই প্রাকৃতিক দুর্যোগ নিয়ে আমাদের সচেতন থাকা অত্যন্ত জরুরি। এজন্য আগুনের বিষয়ে আপনাকে অন্তত এই প্রধান তিনটি বিষয় সবসময় মাথায় রাখতে হবে।

অগ্নিকাণ্ডের কারণ, সতর্ক থাকার নিয়মকানুন, অগ্নিকাণ্ডের পর করণীয়।

লেখক: ফ্রিল্যান্স জার্নালিস্ট, ইনসিডেন্ট অফিসার্স, ওয়ার্কিং ফর ন্যাশনাল হেল্থ সার্ভিস লন্ডন, মেম্বার, দি ন্যাশনাল অটিস্টিক সোসাইটি ইউনাটেড কিংডম।

বাংলাদেশ জার্নাল/এইচকে

  • সর্বশেষ
  • পঠিত