সাবরিনার নির্দেশে সাংবাদিকদের ওপর হামলা করে জেকেজির ক্যাডাররা
হৃদয় আলম
প্রকাশ : ০৯ জুলাই ২০২০, ১৯:৩৯ আপডেট : ০৯ জুলাই ২০২০, ১৯:৫৯
ফলাফল দেয়া হতো রোগীর বাহ্যিক উপসর্গ দেখে। প্রতারণা হলেও তা যতটা সম্ভব নিখুঁতভাবেই করা ছিলো জোবেদা খাতুন সার্বজনীন স্বাস্থ্যসেবার (জেকেজি হেলথ কেয়ার) উদ্দেশ্য। এছাড়া নিজেদের প্রভাব বিস্তারে সংবাদকর্মীদের ওপরও হামলা চালায় জেকেজির ক্যাডার বাহিনী।
অনুসন্ধানে জানা যায় সংবাদকর্মীদের ওপর হামলা, তিতুমীরের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের ওপর হামলা সবই চালানো হয়েছিলো আরিফুল হক চৌধুরীর স্ত্রী ডা. সাবরিনা আরিফ চৌধুরীর নির্দেশে।
গত ২ জুন দুই সংবাদকর্মীর ওপর হামলা চালায় জোবেদা খাতুন হেলথ কেয়ারের কথিত স্বাস্থ্যকর্মীরা। সে সময় নিয়মিত নানান ধরনের অনৈতিক কাজে জেকেজির ক্যাডার বাহিনীকে ইন্দন জোগাতেন ডা. সাবরিনা আরিফ চৌধুরী। জেকেজির কেলেঙ্কারিতে আরিফসহ কয়েকজন গ্রেপ্তার হলেও সাবরিনা পলাতক।
সূত্রমতে, তিতুমীর কলেজের ৪র্থ শ্রেণির কর্মচারীদের সাথে জেকেজির স্বাস্থ্যকর্মীদের সংঘর্ষের ঘটনার পরদিন সকালে তিতুমীর কলেজে সংবাদ সংগ্রহ করতে গেলে বাংলাদেশ জার্নালের এক সংবাদকর্মী ও রেডিও আমারের একজন রিপোর্টারের ওপর হামলা চালায় জেকেজির ক্যাডারবাহিনী।
হামলার শিকার সংবাদকর্মীরা সে সময় বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, প্রথমে আমরা তিতুমীর কলেজ কর্মচারীদের কাছে বিস্তারিত জেনে অধ্যক্ষ আশরাফ হোসেনে সাথে কথা বলে জোবেদা খাতুন হেলথ কেয়ারের স্বাস্থ্যকর্মীদের সাথে কথা বলতে যাই। এসময় তারা বরকত মিলনায়তে থাকেন শুনে আমরা ডাকাডাকি করে কারো সাড়া-শব্দ না পেয়ে ভেতরে ঢুকি। এসময় হঠাৎই প্রায় ৫০ জনের মতো লোক এসে আমাদের ধাক্কা এবং কিল ঘুষি দিতে থাকে। তাদেরকে সংবাদকর্মী পরিচয় দিলেও তারা বলেন, ‘তোরা কিসের সংবাদিক, তোদের আসতে বলছে কে, দেইখা নিমু। সবাইকে পিটামু।’
আরো পড়ুন: ‘ভুয়া’ স্বেচ্ছাসেবীদের প্রশিক্ষণ দিতেন ডা. সাবরিনা আরিফ
সে সময় হামলা বিষয়টি স্বীকার করেছিলেন ডা. সাবরিনা আরিফ চৌধুরী। এবং তিনি হামলার নির্দেশনা দিয়েছিলেন তার আভাসও পাওয়া যায় তার কথায়। সংবাদকর্মীদের ওপর হামলার ঘটনা কেন ঘটলো এমন প্রশ্নের জবাবে সে সময় সাবরিনা বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, ‘তারা (সংবাদকর্মীরা) আমাদের জানিয়ে যাননি। তাই তাদের ওপর হামলা করা হয়েছে। এছাড়া কেউ যদি সংবাদ সংগ্রহ করতে যান তাহলে আমাদের জানিয়ে যাবে। হঠাৎ করেই যাবে না। আমাকে বলে যদি কেউ দশবারও আসে তাতে সমস্যা নেই। না বলে আসলে আমরা বিষয়টি মেনে নিব না।’
প্রসঙ্গত, ২৩ জুন (মঙ্গলবার) জেকেজি হেলথ কেয়ারের সিইও আরিফুল হক চৌধুরীসহ পাঁচজনকে আটক করে পুলিশ। এরপর একে একে চাঞ্চল্যকর সব তথ্য বেরিয়ে আসতে শুরু করে। জানা যায়, জেকেজি হেলথ কেয়ারের কোনো ল্যাব বা পরীক্ষাগার ছিলো না। কম্পিউটারে ফলাফল লিখে ই-মেইলে তা রোগীর কাছে পাঠিয়ে দিতেন।
সূত্রমতে, জেকেজি নমুনা সংগ্রহ করে কোনো পরীক্ষা না করেই প্রতিষ্ঠানটি ১৫ হাজার ৪৬০ জনকে করোনার টেস্টের ভুয়া রিপোর্ট সরবরাহ করেছে। একটি ল্যাপটপ থেকে গুলশানে তাদের অফিসের ১৫ তলার ফ্লোর থেকে এই মনগড়া করোনা পরীক্ষার প্রতিবেদন তৈরি করে হাজার হাজার মানুষের মেইলে পাঠায় তারা। তাদের কার্যালয় থেকে জব্দ ল্যাপটপ পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর করোনা টেস্ট জালিয়াতির এমন চমকপ্রদ তথ্য মিলেছে।
জানা যায়, জেকেজির টেস্টে জনপ্রতি নেয়া হতো সর্বনিম্ন পাঁচ হাজার টাকা। বিদেশি নাগরিকদের কাছে জনপ্রতি এক শ ডলার। এ হিসাবে করোনার টেস্ট বাণিজ্য করে জেকেজি হাতিয়ে নিয়েছে সাত কোটি ৭০ লাখ টাকা। করোনা মহামারিতে মানুষের জীবন নিয়ে এমন নির্মম বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত জেকেজির চেয়ারম্যান ও জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের চিকিৎসক ডা. সাবরিনা চৌধুরী ও তার স্বামী প্রতারক আরিফ চৌধুরী।
বাংলাদেশ জার্নাল/এইচকে
আরো পড়ুন:
> সাড়ে ১৫ হাজার টেস্টে প্রায় ৮ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে
> জেকেজির প্রতারণা, তিতুমীরে চলতো নাচ গান অশ্লীলতা
> নারী পুরুষ নিয়ে জেকেজির ‘হানিমুন ট্রিপ’
> করোনায় সেবার নামে প্রভাব বিস্তার, ভুয়া পরীক্ষার সনদ