তিতুমীরে সেই হামলার নির্দেশনা দিয়েছিলেন ডা. সাবরিনা
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১২ জুলাই ২০২০, ২০:৩৭ আপডেট : ১২ জুলাই ২০২০, ২০:৫১
ফলাফল দেয়া হতো রোগীর বাহ্যিক উপসর্গ দেখে। প্রতারণা হলেও তা যতটা সম্ভব নিখুঁতভাবেই করা ছিলো জোবেদা খাতুন সার্বজনীন স্বাস্থ্য সেবা’র (জেকেজি হেলথ কেয়ার) উদ্দেশ্য। এছাড়া নিজেদের প্রভাব বিস্তারে সংবাদকর্মীদের ওপরও হামলা চালায় জেকেজির ক্যাডার বাহিনী। হামলা হয় তিতুমীর কলেজের ৪র্থ শ্রেণির কর্মচারীদের ওপর।
অনুসন্ধানে জানা যায় সংবাদকর্মীদের ওপর হামলা, তিতুমীরের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের ওপর হামলা সবই চালানো হয়েছিলো আরিফুল হক চৌধুরীর স্ত্রী ডা. সাবরিনা আরিফ চৌধুরীর নির্দেশে।
গত ৩ জুন দুই সংবাদকর্মীর ওপর হামলা চালায় জোবেদা খাতুন হেলথ কেয়ারের কথিত স্বাস্থ্যকর্মীরা। সে সময় নিয়মিত নানান ধরনের অনৈতিক কাজে জেকেজির ক্যাডার বাহিনীকে ইন্দন জোগাতেন ডা. সাবরিনা আরিফ চৌধুরী।
আরো পড়ুন: সাবরিনা আরিফ জেলে, ক্যাডার বাহিনীর কী হবে?
সাংবাদিকদের ওপর হামলার আগের দিন ২ জুন গভীর রাতে সাবরিনার নির্দেশে হামলা করা হয় তিতুমীর কলেজের ৪র্থ শ্রেণির কর্মচারীদের ওপর। হামলার পর রাত দুইটার দিকে রাস্তা অবরোধ করে স্লোগান দেয় জেকেজির কথিত স্বাস্থ্যকর্মীরা। সে সময় সামনে থেকে গণমাধ্যমে বক্তব্যও দিয়েছিলেন সাবরিনা চৌধুরি।
অভিযোগে তিতুমীর কলেজের কর্মচারীরা জানায়, তাদের ওপর তিনবার হামলা চালানো হয়েছে। রাত ১০টায়, ১২টায় ও রাত ২টায়।
ঘটনার সূত্রপাত কীভাবে জানতে চাইলে তারা সে সময় বাংলাদেশ জার্নালকে জানান, রোববার ছেলেদের থাকার জায়গায় একজন মেয়েকে ঘোরাঘুরি করতে দেখা যায়। ভেতরে প্রবেশ করতেই করোনা বুথের দু’জন ছেলে ও একজন মেয়েকে অসৌজন্যমূলকভাবে থাকতে দেখে তিতুমীর কলেজের আমরা প্রতিবাদ করি। এরপর তারা বিভিন্নভাবে হুমকি-ধমকি দিতে থাকে। সর্বশেষ সোমবার রাতে ১০টার দিকে আমাদের দুইজন কর্মীকে তারা কলেজ গেইটে মারধর করে। এক পর্যায়ে চড়াও হয় জোবেদা খাতুন হেলথ কেয়ারের স্বাস্থ্যকর্মীরা। তারা তিতুমীর কলেজের কর্মীদের ধাওয়া দিয়ে ক্যাম্পাসের মূল ফটকের বাইরে বের করে দেয়া হয় বলে অভিযোগ করেন।
সে সময় ঘটনার নিন্দা জানিয়ে তিতুমীর কলেজের অধ্যক্ষ মো. আশরাফ হোসেন বলেছিলেন, যতটুকু শুনেছি আমাদের স্টাফদের অনেক পেটানো হয়েছে। শিক্ষক কর্মচারীদের সাথে আলোচনা করে আমরা করণীয় ঠিক করবো। তাছাড়া সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনা অতি নিন্দনীয়। আমরা সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করার প্রস্তুতি নিচ্ছি।
আরো পড়ুন: ‘ভুয়া’ স্বেচ্ছাসেবীদের প্রশিক্ষণ দিতেন ডা. সাবরিনা আরিফ
তিতুমীর কলেজের কর্মকর্তাদের ওপর হামলার ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছিলো তিতুমীর কলেজ সাংবাদিক সমিতি, তিতুমীর কলেজ ছাত্রলীগ, তিতুমীর কলেজ নাট্যদল, শুদ্ধস্বরসহ অন্যান্য সংগঠনগুলো।
সংবাদকর্মীদের ওপর হামলার বিষয়টি স্বীকার করেছিলেন ডা. সাবরিনা আরিফ চৌধুরী। এবং তিনি হামলার নির্দেশনা দিয়েছিলেন তার আভাসও পাওয়া যায় তার কথায়। সংবাদকর্মীদের ওপর হামলার ঘটনা কেন ঘটলো এমন প্রশ্নের জবাবে সে সময় সাবরিনা বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, ‘তারা (সংবাদকর্মীরা) আমাদের জানিয়ে যাননি। তাই তাদের ওপর হামলা করা হয়েছে। এছাড়া কেউ যদি সংবাদ সংগ্রহ করতে যান তাহলে আমাদের জানিয়ে যাবে। হঠাৎ করেই যাবে না। আমাকে বলে যদি কেউ দশবারও আসে তাতে সমস্যা নেই। না বলে আসলে আমরা বিষয়টি মেনে নিব না।’
প্রসঙ্গত, ২৩ জুন (মঙ্গলবার) জেকেজি হেলথ কেয়ারের সিইও আরিফুল হক চৌধুরীসহ পাঁচজনকে আটক করে পুলিশ। এরপর একে একে চাঞ্চল্যকর সব তথ্য বেরিয়ে আসতে শুরু করে। জানা যায়, জেকেজি হেলথ কেয়ারের কোনো ল্যাব বা পরীক্ষাগার ছিলো না। কম্পিউটারে ফলাফল লিখে ই-মেইলে তা রোগীর কাছে পাঠিয়ে দিতেন।
আরো পড়ুন: সাবরিনার নির্দেশে সাংবাদিকদের ওপর হামলা করে জেকেজির ক্যাডাররা
সূত্রমতে, জেকেজি নমুনা সংগ্রহ করে কোনো পরীক্ষা না করেই প্রতিষ্ঠানটি ১৫ হাজার ৪৬০ জনকে করোনার টেস্টের ভুয়া রিপোর্ট সরবরাহ করেছে। একটি ল্যাপটপ থেকে গুলশানে তাদের অফিসের ১৫ তলার ফ্লোর থেকে এই মনগড়া করোনা পরীক্ষার প্রতিবেদন তৈরি করে হাজার হাজার মানুষের মেইলে পাঠায় তারা। তাদের কার্যালয় থেকে জব্দ ল্যাপটপ পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর করোনা টেস্ট জালিয়াতির এমন চমকপ্রদ তথ্য মিলেছে।
জানা যায়, জেকেজির টেস্টে জনপ্রতি নেয়া হতো সর্বনিম্ন পাঁচ হাজার টাকা। বিদেশি নাগরিকদের কাছে জনপ্রতি এক শ ডলার। এ হিসাবে করোনার টেস্ট বাণিজ্য করে জেকেজি হাতিয়ে নিয়েছে সাত কোটি ৭০ লাখ টাকা। করোনা মহামারিতে মানুষের জীবন নিয়ে এমন নির্মম বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত জেকেজির চেয়ারম্যান ও জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের চিকিৎসক ডা. সাবরিনা চৌধুরী ও তার স্বামী প্রতারক আরিফ চৌধুরী।
বাংলাদেশ জার্নাল/এইচকে
আরো পড়ুন:
> নায়িকা হতে চেয়েছিলেন প্রতারক ডা. সাবরিনা
> সাবরিনাকে রিমান্ডে চায় পুলিশ
> জেকেজির চেয়ারম্যান ডা. সাবরিনা গ্রেপ্তার
> পদ থেকে সাময়িক বরখাস্ত ডা. সাবরিনা
> সাড়ে ১৫ হাজার টেস্টে প্রায় ৮ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে
> জেকেজির প্রতারণা, তিতুমীরে চলতো নাচ গান অশ্লীলতা
> নারী পুরুষ নিয়ে জেকেজির ‘হানিমুন ট্রিপ’
> করোনায় সেবার নামে প্রভাব বিস্তার, ভুয়া পরীক্ষার সনদ
