ঢাকা, সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১ মিনিট আগে
শিরোনাম

রক্তের সুরুয়া ঘোড়ার জোড়া আণ্ডা

  মোস্তফা কামাল পাশা

প্রকাশ : ২৪ ডিসেম্বর ২০২০, ২০:৫৭

রক্তের সুরুয়া ঘোড়ার জোড়া আণ্ডা

সাম্প্রদায়িক উগ্রবাদের ছাতা ধরে বিএনপি-জামাত আবার ক্ষমতায় আসলে কী হবে? বিশাল বিশাল ভুয়া ধর্ম প্রেমের ঘোড়ার আণ্ডা পাড়বে। দিনে দুটো! ভোরে এক, রাতে এক! দেশে রক্তের সুনামিও বইয়ে দিতে পারে।

ধারণাটা দিলো সোশ্যাল মিডিয়া। বিদেশে বসে রাষ্ট্র ও সরকার বিরোধীদের বেশুমার মদ-রুটির যোগান পেয়ে কয়েক পলাতক শব্দ বেপারি পাগলা কুকুরের মত টানা মিথ্যা আর বিভ্রান্তির লালা ঝাড়ছে। এদের কেউ কেউ প্যারিস প্রবাসী ইরানের ইসলামি বিপ্লবের নায়ক ইমাম খোমেনি হওয়ার দুঃস্বপ্নের রোগীও। সে আজব জলাতঙ্কে আক্রান্ত হয়েছে ভয়ঙ্করভাবে।

কেউবা নিজেকে দেশ সেরা মিডিয়া এক্সপার্ট ভেবে নেশার হিক্কাও তুলছে। ওরা নাকি টানা জেহাদে আছে। এটার নাম ‌‘ইউটিউব ফেবু’ জেহাদ। সফল হলে ‘‘আমিই নায়ক, ব্যর্থ হলে ‘চেষ্টাতো ২৪ ঘণ্টা ধরে করেছি; পাবলিক ‘বোকাচোদা’ হলে আমার কী’’।

বাছাই করা বছর সেরা মিথ্যা আর মিথ বাতাসে ছেড়ে ইচ্ছামত এরা বিড়ালকে বাঘ বানাচ্ছে, আবার সিংহকে ইঁদুর। ঢাকাকে দিল্লি নিয়ে যাচ্ছে, দিল্লিকে টুপ করে তুলে আনছে ঢাকায়। ওদের শব্দমিশাইল লাঞ্চিং প্যাড ইউটিউব, ফেবু। ওয়ারহেড, ডাহা গুজব আর মিথ্যার গাঁজা। কেউ নিউইয়র্ক, কেউ লন্ডন কেউবা কানাডায় শুয়ে-বসে কারণবারিতে ভাস তেল চেকনাই বদন ঝলক দেখিয়ে গুজব মিশাইল দাগছে হুজুগে বাঙালকে টার্গেট করে।

দুর্ভাগ্য বেচারাদের! টিপাটিপি ছাড়া কেউই হুজুগের জজবা কবুল করেনি। কবুল করলে দেশ বহুত আগেই ২০০০ সালের আফগান যুগে পিছু হাঁটত। আলপথ থেকে রাজপথে টানা রক্তের বান ডাকত। জানি, ওদের দুঃস্বপ্ন অন্তত বাংলাদেশের মত রক্তমূল্যে অর্জিত প্রিয় দেশে কখনো, কোনদিন সফল হবে না।

জাতির মহান জনক বঙ্গবন্ধুর রক্তের প্রতিটি ফোঁটা মিশে আছে এ দেশের মাটিতে। তাঁর সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিকে অগ্রগতির মহাসড়কে তুলে আনার পাশাপাশি বিশ্বনেতা হিসাবেও স্বীকৃতি পেয়ে গেছেন। হ্যাঁ, লোভী, ভোগী আগাছাও বাংলার উর্বর মাটিতে প্রচুর জন্মেছে। এদের অনেকে দল ও সরকারের উন্নয়ন অগ্রযাত্রার পথে বড় প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছে। কিন্তু সময়স্রোত এই আবর্জনা ভাগাড়কে হঠিয়ে দেবেই। মিথ্যা আর গুজব মিশাইলে নয়।

তো এরা চিল্লাতেই থাক। আসি অন্য প্রসঙ্গে। নীতি ও আদর্শিক টানে প্রচুর লিখি, বলি কম। অতীত ইতিহাস ও ঘটনা টেনে সমসাময়িক বিষয় প্রিয় বিষয়। যদ্দূর জানি, নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি-বিশ্বাস, নীতি-আদর্শ এখনো কিছু মানুষের আছে।

সংখ্যায় খুবই কম- কিচ্ছু এসে যায় না। সবাই ক্ষমতার টানে- বিত্ত, প্রভাবের স্রোতে ভেসে যাবে এমন বিশ্বাস ভুল। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যারা আছে- তারা কোন না কোন পেশার, ছোট অথবা বড় যাই হোক। ছাত্র-ছাত্রী, গৃহিণীও কম নেই। প্রায় সবাই লিখতে জানে, ভুল বা শুদ্ধ। ৯০ ভাগই কোন না কোন রাজনৈতিক মতাদর্শের।

বাস্তবে নিরপেক্ষ শব্দটা অভিধানে থাকলেও এটা বায়বীয়। মানুষের কোন না কোনভাবেই পক্ষপাত থাকবেই। নির্মোহ কোন গৃহী মানুষ থাকতে পারেন না। অতি মানব বা মহামানব থাকতে পারেন। ওনারা উদাহরণ হতে পারেন না। নিজেও বিশেষ রাজনৈতিক ঘরানার। সরাসরি না হলেও লেখায় সর্বোচ্চ সক্রিয়।

কারণ সোজা। আমাদের প্রাত্যহিক জীবনের প্রতিটা অনুষঙ্গের সাথে রাজনীতি জড়িয়ে আছে। যে যাই করিনা কেন। তাই কোন সচেতন নাগরিক রাজনীতি থেকেও দূরে থাকতে পারেন না। সক্রিয় না হলেও মনের ভেতর কোন দল বা মতাদর্শ পুষে রাখেন। ভোটের সময় নিজের পছন্দকে বেছে নেয়ার চেষ্টা করেন।

নিজে রাজনীতি করেছি- তুমুলভাবে। রক্তের সাথে মিশে আছে রাজনীতি। পেশাগত জীবনে সাংবাদিকতা ও লেখালেখির টানাপড়েনে রাজনীতি বিযুক্ত হয়েছি স্বেচ্ছায়। তৃণমূল স্তর থেকে ধাপে ধাপে জেলা পর্যায়ের নেতৃত্বও ছিলাম। কাছে থেকে আদর্শিক চ্যুতি, ভাঁড়ামো এবং নীতির লেজ ছেঁটে ‘রাজকীয়’ চর্চার অশ্লীল অসুখ দেখেছি। অসুখটা অশ্লীল এবং ছোঁয়াচে! এখানে কেউ চামচা, কেউ ভাঁড়, আবার কেউবা হাতানোর রাজা এবং জবরদস্ত অভিনেতাও।

পর্যায়ক্রমে অনেকের শ্রেণি উত্তরণও ঘটেছে। বেশি বেশি হয়ে যাচ্ছে, তাই বাদ। বিশ্বাস ছিলো সাংবাদিকতা ও রাজনীতি দু’সেক্টরেই লেখাপড়া, প্রজ্ঞা এবং জ্ঞানের ব্যাপ্তি হচ্ছে সাফল্যের চাবি। সাথে আবশ্যিক পূর্বশর্ত দেশ ও গণ মানুষের কল্যাণ।

আসলে গোড়াতেই গলদ! কূপমণ্ডূকটা এবং অজ্ঞানতার জঞ্জালই আসল। আত্মস্বার্থে দক্ষ অভিনয় জ্ঞান, ভাঁড়ামো ও ভণ্ডামি হচ্ছে বাড়তি যোগ্যতা। দেশজুড়ে রাজনৈতিক চতুর অভিনেতাদের ব্যাপক দাপাদাপি! এরা আবার মাফিয়া কর্পোরেটও। সরাসরি বা আড়ালে। সাংবাদিকতা, শিল্প-সাহিত্য সংস্কৃতির মত সুকুমার প্রতিটি অঙ্গন এখন সঙ্কটকাল পার করছে। তবুও জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর পথ নক্সা আঁকড়ে আছি। লেখালেখিতেও তাই। এতে আওয়ামী লীগ দলগতভাবে লাভবান হচ্ছে। কিন্তু কোন ব্যক্তি বিশেষকে আলাদা সেবা দেয়া রুচির বাইরে।

অবশ্য ফরমায়েশি কাজে আপত্তি নেই। করি ভাড়ায়। কিন্তু নীতি-আদর্শের লেজ ছেঁটে নয়। সমস্যা এখানেই। নিজের উপস্থাপনা ব্রান্ডিং একটু আলাদা। না বললেও বন্ধুরা জানেন। অনেকের হজমে সমস্যা হয়। কিচ্ছু মনে করিনা। যুক্তি, সত্য, তথ্যই আমার অস্ত্র। পরিশুদ্ধ মিশাইলও বলা যায়। আর এতেই যত ঝামেলা।

নিজ ঘরানার প্রচুর সাইবার বন্ধু, পেশারও। পারতপক্ষে কাছে ভিড়েন না, দূরে থাকেন এবং এড়িয়ে চলেন। কারণটা নাইবা বলি।

সম্প্রতি কিছু লেখা নিয়ে বন্ধু নয় এমন দলকানা কিছু লোক উদ্ভট মন্তব্য করছে। ওরা যুক্তি নয়, ‘মূর্খ, অশিক্ষিত, চামচাসহ’ আজব সব গালাগালের সাথে হুমকিও দিচ্ছে। বন্ধুরা চিনে বলে সহজে ঘাটায় না। কিন্তু পাবলিক পোস্টের আগন্তুকরা ইচ্ছামত বমি উগলাচ্ছে! ওরা বেশির ভাগ বিএনপি-জামাত ঘরানার। এরা ধর্মকথা, গণতন্ত্রের কথা ন্যায়ের কথা জনগণের কথা বলে! কিন্তু গালাগাল ছাড়া যুক্তি বা সত্য কাকে বলে কিচ্ছু জানে না। তাহলে ওরা ক্ষমতায় গেলে কী করবে?

অতীতের কথা নাই বা বলি! যারা আমাকে টক্কর দিতে আসে নিশ্চিত বিশ্বাস, ওরা যথেষ্ট দক্ষ এবং সাহসী সাইবার যোদ্ধা। তাহলে ফলাফল কী? স্যাম্পল চরিত্রগুলো প্রচণ্ড রাগী। আড়াল নিয়ে গালাগালি আর পেশী শক্তির ভয় দেখানো ছাড়া কিচ্ছুই পারে না, জানে না। তাই এটা পরিষ্কার, বিএনপি-জামাত বা ধর্মীয় উগ্রবাদীরা চোরাপথের ছিদ্র ধরে কোনভাবে ক্ষমতার ছিকে দখল নিতে পারলে ওরা প্রতিদিন জাতিকে এক জোড়া করে ঘোড়ার আণ্ডা উপহার দেবে।

আর রোজ রক্তস্নান করাবে। পারলে পান করবে মগভর্তি টকটকে লাল রক্ত। তাই সতর্কতা খুব বেশি জরুরি। হল্লাচিল্লা বা গলাবাজির প্রতিযোগিতা নয়; জ্ঞান, বুদ্ধি মেধা, চারিত্রিক দৃঢ়তার কঠিন দেয়াল গড়ে এদের রুখতেই হবে।

লেখক: জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক, কলামিস্ট

বাংলাদেশ জার্নাল/এনএইচ

  • সর্বশেষ
  • পঠিত