শারমিন আক্তারের কবিতা
জার্নাল ডেস্ক
প্রকাশ : ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ০০:০৬
অতল
অতল আমার সাক্ষাৎ পেয়ে চিনতে পারো নি বলে
প্রতিদিনই
প্রিয় প্রিয় কিছু হারানোর নাম রাখি-
শ্রাবণ মেঘ।
যে মেঘ তোমার কাছে সূর্যাস্ত চেয়েছে
সত্যি তুমি জানো না তার মন?
'উষ্ণীষ' পেরিয়ে 'শূন্যতা'
শব্দ দিয়ে ভরিয়ে তোলা সাদা পাতার দাম
আকাশময় ফুরনো রোদ্দুর।
এখন শুধু সম্মোহনী নিরবতা!
হে আলেখ্য দর্পণ
এ পৃথিবীর বিষন্ন ধূলোয়
কাজল নয় বরং কবিতার দুঃখ দিয়ে
চোখে আমার বৃষ্টি ফুল ফুটুক;
সেই ফুল খোপার চারপাশে আলো হোক।
এছাড়া
স্বপক্ষে আপাতত আর কিছুই বলার নেই!আপন পিদিম জ্বালো
ক্ষুদ্র এ জীবনে রকমভেদে মানুষকে জেনেছি চিনেছি
যদিওবা বিজ্ঞজন নই?
তারপরও কী করে বেঁচে থাকা যায়
তা বোধ হয় খুব সাধারণ মানুষেরাই দেখিয়ে দিতে পারে
নিজেদের জীবন পথে চলে।
যা কিছু ভালো, যা কিছু সুন্দর তার সবটুকুই উৎসর্গ করতে জানে;
সমস্ত অপমানকে পশ্চাৎ ফেলে ক্ষমা করতে জানে
তারা বিশ্বাস করে-
ক্ষমা এক 'আশ্চার্য ফুল'।
যার সুবাস সীমাহীন;
অন্যকে পুলকিত করবার অসীম ক্ষমতা রাখে;
গাঢ় অন্ধকারেও আপন পিদিম জ্বেলে সব্বার মঙ্গল কামনা করতে জানে।
তবু
মনে প্রশ্ন জাগে?
ভীষণ চতুরতায়
এই সহজ মানুষগুলোকে যারা বারংবার আহত করে
ঈশ্বর কি তাদের ক্ষমা করবেন?
তারা কি সত্যিই ভূলে যায়-
'দীর্ঘশ্বাস' অভিশাপের চাইতেও কতটা কঠিন?বিসর্জন
আমার কতকালের চুপ করে তাকিয়ে থাকার অভ্যাস
মনের ভেতর আমার চিরকালের নির্বাসন।
সূচ সুতোয় জীবনের ফোঁড় তুলে জীবনকে বোনা
না আছে আকাশ না আছে অবকাশ
অসহায়তা শুধু সম্বল।
সকল অন্ধকার ক্ষমা করো
ভীরুতা ক্ষমা করো
অধিকারের আস্ফালন ক্ষমা করো
'বিসর্জন' আমার বারবার উচ্চারণ করতে ইচ্ছে হয়।
সহসা জীবনের এইটুকুই তো আবহমান!প্রদাহ
যেতে হয়
তবে সব যাওয়াগুলো
একরকম নয়। প্রভাব থাকে।
স্বপ্ন মাখানো ভোরগুলোতে
অবিন্যস্ত মেঘ বিষণœতার পসরা সাজিয়ে যায়
ঠিক যেমনটা হয় গাঢ় অন্ধকার।
কতটা গভীর হলে ক্ষত
অমোঘ প্রদাহে
তুলোর হৃদয় ভিজে
ভারী হয়ে আসে।
পাঁজর জুড়ে জেগে ওঠে দামাল বাতাস
যার ব্যথা সেই বুঝে।
চোখের চারপাশে শোকগাছের ছায়া ফেলে
স্পর্শের বাহিরে চলে যাওয়া
প্রিয় দুটি মুখ সহসা ন¤্র পবিত্র।
কেবল এই আধবোজা বুকের
দুর্বোধ্য লিপি করে রাখব।আজন্মের কথারা যেখানে থেকে যায়...
আষাঢ়
মেঘ করেছে সকাল থেকেই। ভারী গুমোট চারিদিক।
পাখিদের ওড়াউড়ি নেই। মাধবীলতা যেন দুলতে ভূলে গেছে আচমকা!
মেঘের ছায়া পড়েছে- উঠোনে
ওপাড় কদমের গন্ধে ডুবে আছে।
আমার বাড়িতে বর্ষা দুপুর রবীন্দ্রনাথের গান
তুমুল বৃষ্টির ছাটে মেয়েটার মুখ
মেয়েটার মন খারাপ
কাঁদছে না সে গাল বেয়ে নেমে আসা দু'এক ফোঁটা কচুরিপানার ফুল-
আসলে চোখের এক অমোঘ দীর্ঘশ্বাস!
দীর্ঘশ্বাসের নির্দিষ্ট কোন দুঃখ নেই।
নিরাময়হীন অসুখের আচ্ছন্নতায় সে প্রবেশ করেছে বহুদিন আগে
তারপর স্পর্শের ওপারে হীরের নাকফুল হয়ে ফুটে উঠেছে মেয়েটির নীলাভ পালকে।বাংলাদেশ জার্নাল/এমএম