ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ২০ মিনিট আগে
শিরোনাম

সত্যিই সেলুকাস, কি বিচিত্র এই দেশ!

  রাজীব কুমার দাশ

প্রকাশ : ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২১, ২১:৫৩

সত্যিই সেলুকাস, কি বিচিত্র এই দেশ!
রাজিব কুমার দাস

ধরে নিন, আমি কবি: কবিতা লিখি। কিন্তু মনে যা আসে; সবটুকু কি লিখতে পারি? যা বলতে চাই: তা কি সব বলতে পারি?

এই যে,পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বলা লেখার ‘না’ বোধক আণবিক ‘ফিশন ও ফিউশন’ বিক্রিয়া ভয় কেউ কি উপেক্ষা করতে পেরেছে?

‘না’ বোধক শব্দটি মধ্যযুগ সংস্কৃতির ধারক বাহক হয়ে আধুনিক যুগে এসে ঘূর্ণিঝড় আইলা সংকেত পেয়ে দ্বিগুণ শক্তি সঞ্চয় করছে।

একবিংশ শতাব্দীর চোরকে চোর, ডাকাতকে ডাকাত, ঘুষখোরের ঘুষ, দেশদ্রোহী, বদমাইশ, শিশ্নবাজ বেঈমান, মীরজাফর, খন্দকার মোশতাকদের কিছু বলতে না পারাটাই হচ্ছে; মধ্যযুগ সংস্কৃতির মিশেল আধুনিক।

আপডেট ভার্সন ‘বেঈমান জগাখিচুড়ি সংস্কৃতি।’

কারণ: ধনে-জনে কৌশলে এ বদমাইশ জিগালো গুপ্তঘাতক সিন্ডিকেট রাষ্ট্রযন্ত্র পেরিয়ে এখন পাড়া মহল্লা হয়ে ঘরে ঘরে উঁকি দিচ্ছে।

‘রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠানে শ্রেণি, সিন্ডিকেট ব্যাচ, কৌলিন্য, কৌশলি প্রথা’ এখন সবখানেই জেঁকে বসেছে। ধাপে-ধাপে বুর্জোয়া সামন্ত প্রভুদের লুকানো কালো হাতগুলো আপডেট হয়ে প্রকাশ্যে তর্জনি উঁচিয়ে তর্জন-গর্জন করছে।

দ্বিজেন্দ্রনাথ রায়ের ‘চন্দ্রগুপ্ত’ (নাটকে) আলেকজান্ডার ভারতে প্রবেশের সময়ে এ উপমহাদেশের মানুষের চিত্র-বিচিত্র চরিত্র দেখে সেনাপতি সেলুকাসকে উদ্দেশ্য করে বলেছিলেন, ‘সত্যিই সেলুকাস, কি বিচিত্র এই দেশ!’

ব-দ্বীপের একবিংশ শতাব্দীর রাষ্ট্রযন্ত্র ও সমাজের কৌলিন্য কৌশলী ননীর পুতুল সম্প্রদায়ভুক্ত প্রজাতি এখনও আমরা চিনতে পারিনি; তাই সপরিবারে আমরা জাতির জনককে হারিয়েছি। কিন্তু মহামতি আলেকজান্ডার ঠিকই চিনতে পেরেছিলেন; তাই অনায়াসে বিজয় লাভ করতে পেরেছেন।

প্রযুক্তিতে সোনার, হৃদয়ের এ্যানিজিওগ্রাফির ছবি আমরা এখনও ভালো বুঝতে পারিনা বলে কৌলিন্য শ্রেণি কৌশলী সামন্ত চালে সদা শিহরিত পুলকিত আমোদিত ও বিনোদিত। কখনও শুনতে হয়; ননী পুতুলের রাত বিরাতের শত স্বপ্ন, কখনো কারোর বউ পালানো গল্প। জানতে হয়; শ্যালক-শ্যালিকার নাটকের সিডিউল অডিশন, সুন্দরী স্ত্রী’র শত শত হার না মানা এভারেষ্ট পরিমাণ অভিমান জয়ের স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি অভিযানের হাড়হিম করা গল্প।

মানতে হয়: শ্রেণি বিভাজন,গাইতে হয় ফোকলো বন্দনাগীত,শুনতে হয়; ছাত্র জীবনের রাবণ বেশে নারীর রগরগে শ্লীলতাহানি অপহরণ গল্প,কর্মজীবনে মানুষখেকো বাঘের মতো; অসহায় শেণির চাকরিখেকো হয়ে ওঠা নখদন্তহীন রয়েল বেঙ্গল টাইগার বনে যাবার গল্প।

সুন্দরবনে নিরন্ন অসহায় মৌয়াল ও মাছ ধরা জেলেদের উপর নখদন্তহীন অকেজো বাঘগুলো যে ভাবে গোপনে সুযোগ বুঝে ঝাঁপিয়ে পড়ে; সেভাবে রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠানে ঘাপটি মেরে থাকা বেঈমান মানব নখদন্তহীন বাঘগুলো এক সময়-সুযোগ বুঝে রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠানে থাকা স্বাধীনতার চেতনায় জাগ্রত বিশ্বস্ত পাহারাদারদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে মটকে খেয়ে ফেলছে।

রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠানে ননীর পুতুল; বেশি লাভ কম ক্ষতি তত্ত্বে বিশ্বাসী চৌধুরী সাহেবের কেরামতি’ বিচিত্র প্রাণীটি বাসমতী চালে দেশি মুরগি কালো ভুনা,দেশি মাগুরের ঝোল, সুন্দরী নারীর কোলের টানে অভ্যস্ত চালাক প্রাণীর জীবন প্রণালী বোঝা দুস্কর বটে।

গ্রামের নতুন বউ যেমন; চালাক স্বামীর মতিগতি ঠাহর করতে করতে বারোটা বেজে যায়; তেমনি দেশের সরকারি-বে-সরকারি ননী পুতুলের দিনমান বুঝতে রাষ্ট্রের বারোটা বেজে যায়।

বেঈমান ননীর পুতুল চিনতে দেশের সব প্রতিষ্ঠানে দরকার: সদাজাগ্রত আলেকজান্ডার। নইলে..একদিন রাষ্ট্রের সকল প্রতিষ্ঠানে ননী পুতুলের দল মাকড়সা জাল বিছিয়ে ব-দ্বীপের ঘরে ঘরে তৈরি করবে; পলাশীর অসংখ্য বেঈমান মীরজাফর। নতুন করে মহামতি আলেকজান্ডার এসে বলবে: ‘সত্যিই সেলুকাস, কী বিচিত্র এই দেশ!’

লেখক, প্রাবন্ধিক ও কবি

পুলিশ পরিদর্শক, বাংলাদেশ পুলিশ

  • সর্বশেষ
  • পঠিত