ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : কিছুক্ষণ আগে
শিরোনাম

এটিএম বুথে ব্যবসায়ী হত্যা: তিন বন্ধুকে খুঁজছে পুলিশ

  সুজন কৈরী

প্রকাশ : ১০ সেপ্টেম্বর ২০২২, ২২:২৫

এটিএম বুথে ব্যবসায়ী হত্যা: তিন বন্ধুকে খুঁজছে পুলিশ
ফাইল ফটো

রাজধানীর উত্তরায় এটিএম বুথে ছুরিকাঘাতে ব্যবসায়ী শরিফ উল্লাহ (৪৪) নিহতের ঘটনায় সন্দেহভাজন তিন বন্ধু আত্মগোপনে রয়েছেন। তাদেরকে খুঁজে পাচ্ছে না পুলিশ। তাদের মোবাইল ফোনও বন্ধ। এমনকি এটিএম বুথে যাওয়ার জন্য ব্যবহৃত প্রাইভেট কারটিও খুঁজে পাচ্ছে না পুলিশ।

প্রাথমিকভাবে পুলিশ ছিনতাইকারীর হাতে ব্যবসায়ী শরিফ উল্লাহ (৪৪) নিহত হওয়ার কথা বললেও নিহতের স্বজনদের দাবি ভিন্ন। তারা বলছেন এটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড।

নিহতের বড় ভাই আনোয়ার হোসেনের দাবি, শুধু ছিনতাই নয়। এর পেছনে অন্য কারণ রয়েছে। হত্যার আগে তার ভাই তিন বন্ধুর সঙ্গে প্রাইভেট কারে করে এটিএম বুথে গিয়েছিলেন। বুথের ভেতর তার ভাই হত্যাকাণ্ডের শিকার হলেও ওই তিন বন্ধু গাড়ি থেকে নেমে ফুটপাতে দাঁড়িয়ে ছিলেন। একটু পর তারা প্রাইভেট কারে করে চলে যান। এ কারণে ওই তিন বন্ধুর ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। ওই তিন বন্ধু হলেন মুস্তাফিজুর রহমান জুয়েল, মেহেদী হাসান ও শফিক।

ঘটনার পর থেকে তারা মোবাইল ফোন বন্ধ করে পলাতক রয়েছেন।

গত ১১ আগস্ট দিনগত রাত পৌনে ১টার দিকে রাজধানীর উত্তরা-১১ নম্বর সেক্টরের সোনারগাঁও জনপথ রোডের ডাচ-বাংলা ব্যাংকের এটিএম বুথে টাকা উত্তোলনের সময় আব্দুস সামাদ নামে এক ব্যক্তির ছুরি হামলায় উত্তরার টাইলস ব্যবসায়ী শরিফ উল্লাহ নিহত হন। ওই ঘটনায় নিহতের বড় ভাই আনোয়ার হোসেন বাদী হয়ে আব্দুস সামাদকে আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেন।

ডিএমপির উত্তরা বিভাগের ডিসি মোর্শেদ আলম বলেন, শরিফ উল্লাহর হত্যাকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাকে রিমাণ্ডে জিজ্ঞাসাবাদের পর হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন। এখন পরিবার বলছে, এটি পরিকল্পিত হত্যা। তাদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে মামলাটি চুলচেরা বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। এরসঙ্গে আরও কেউ জড়িত থাকলে তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।

হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় নিহতের তিন বন্ধুকে সন্দেহ করা হচ্ছে কিনা- জানতে চাইলে ডিসি মোর্শেদ আলম বলেন, ঘটনার পরই তাদের ডাকা হয়েছিলো। কিন্তু তারা না এসে মোবাইল ফোন বন্ধ করে দিয়েছেন। তাদেরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। তারা আত্মগোপনে থাকায় জিজ্ঞাসাবাদ করা যাচ্ছে না।

গত ১১ আগস্ট রাতের বেশ কয়েকটি সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ওই দিন রাত ১০টা ৪০মিনিটে ব্যবসায়ী শরিফ তার তিন বন্ধু জুয়েল, মেহেদি ও শফিকের সঙ্গে উত্তরার ১১ নম্বর সেক্টরের ৪০, সোনারগাঁও জনপথ রোডের সাত তলায় নেস্ট নামে একটি বারে যান। ওই দিন রাত ১২টা ১৫ মিনিট পর্যন্ত তারা বারে অবস্থান করেন। বার থেকে বের হওয়ার সময় লিফট বন্ধ থাকায় তারা সিঁড়ি দিয়ে নামেন। সেখান থেকে সাদা রঙের একটি প্রাইভেট কারে ওঠেন তারা। রাত ১২টা ৪৩ মিনিটে উত্তরার জনপদ মোড়ের ডাচ-বাংলা ব্যাংকের একটি বুথের সামনে প্রাইভেট কারটি থামে। গাড়ি থেকে শরিফ নেমে বুথে প্রবেশ করেন। এসময় প্রাইভেট কারে অবস্থান করছিলেন জুয়েল, শফিক ও মেহেদী। টাকা ওঠানোর সময় একজন বুথের ভেতরে ঢুকে শরিফকে ছুরিকাঘাত করে। ছুরিকাঘাত করা ব্যক্তি পালিয়ে যাওয়ার সময় আশপাশের লোকজন তাকে ধরে ফেলে।

সিসি ক্যামেরায় দেখা যায়, শরিফ গাড়ি থেকে নামার মিনিটখানেক পর জুয়েল গাড়ি থেকে নেমে আশপাশে উঁকিঝুঁকি দিচ্ছিলেন। জুয়েল গাড়ি থেকে নামার মিনিটখানেক পর অপর দুই বন্ধু মেহেদী ও শফিক গাড়ি থেকে নেমে পায়চারি করছিলেন। ততক্ষণে রাত ১২টা ৪৮ মিনিটে বুথের ভেতর শরিফ লুটিয়ে পড়েন। আশেপাশের লোকজন ধাওয়া করে হামলাকারী আব্দুস সামাদকে আটক করে। এসময় বন্ধু হয়েও ওই তিনজন শরিফকে সাহায্য করা বা চিকিৎসার জন্য আশপাশের হাসপাতালে না নিয়েই প্রাইভেটকার করে ঘটনাস্থল দ্রুত ত্যাগ করেন। পরে মামলার তদন্তের জন্য তাদের থানায় আসতে বলে পুলিশ। এরপর থেকেই তাদের মোবাইল ফোন বন্ধ।

নিহত শরিফ উল্লাহর ভাই জাকির হোসেন জানান, আমার ভাইকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। যে খুনিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে সে ভাড়াটে খুনি। কিন্তু পুলিশ ‘রহস্যজনক’ কারণে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যাওয়া তিন বন্ধুকে একবারও জিজ্ঞাসাবাদ করেনি।

মামলার বাদী নিহতের বড় ভাই আনোয়ার হোসেন বলেন, বন্ধুরা সবাই স্কুল জীবন থেকেই ওঠাবসা। সবাই ৯৩ এসএসসি ব্যাচের। ছোট বেলার বন্ধু রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকবে, আর তারা পালিয়ে যাবে এটা বিশ্বাসযোগ্য নয়। হয়তো কারও সঙ্গে শরিফের আর্থিক লেনদেন থাকতে পারে। এদের মধ্যে জুয়েল সুতা ব্যবসায়ী। ব্যবসা করতে গিয়ে অনেক ঋণগ্রস্ত হন। তার বিরুদ্ধে চেক প্রতারণার মামলাও আছে। শরিফের সঙ্গে তার গোপন আর্থিক লেনদেন থাকতে পারে। শরিফকে যখন হত্যা করা হয়, তখন জুয়েলই এটিএম বুথের সামনে গিয়ে শরিফের রক্তমাখা শরীর দেখেন। তখন খুনিকে আটক না করে অথবা শরিফকে উদ্ধার না করে তারা ঘটনাস্থল থেকে সটকে পড়েন।

এ বিষয়ে উত্তরা পশ্চিম থানার ওসি মোহাম্মদ মহসীন বলেন, হত্যার পর হাতেনাতে ধরা পড়া আব্দুস সামাদ আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। তবে নিহতের তিন বন্ধুকে আমরা খুঁজছি। তারা মোবাইল ফোন বন্ধ করে আত্মগোপনে গেছেন।

বাংলাদেশ জার্নাল/আরকে

  • সর্বশেষ
  • পঠিত