ঢাকা, সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৪ মিনিট আগে
শিরোনাম

সীমা ছাড়াচ্ছে সংবাদমাধ্যম?‌

  জার্নাল ডেস্ক

প্রকাশ : ১৬ মার্চ ২০১৮, ১৮:৪৩

সীমা ছাড়াচ্ছে সংবাদমাধ্যম?‌

সংবাদমাধ্যমের আরও দায়িত্বশীল হওয়া প্রয়োজন। বৃহস্পতিবার এক পর্যবেক্ষণে এ কথাই জানায় ভারতের সুপ্রিম কোর্ট। কী প্রতিক্রিয়া সংবাদমাধ্যমের?‌

সাংবাদিকরা চাইলেই যা ইচ্ছে তাই লিখতে, বা বলতে পারেন না। তাদের বক্তব্যের আরও বিশ্বাসযোগ্যতা থাকা জরুরি। সামগ্রিকভাবে সংবাদমাধ্যমকেই আরও দায়িত্বশীল হতে হবে। এক মানহানির মামলার শুনানিতে এই পর্যবেক্ষণের কথা জানায় ভারতের সর্বোচ্চ আদালত।

দেশটির ক্ষমতাসীন দল বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি এবং কার্যত প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর পরেই দলে দ্বিতীয় ক্ষমতাবান নেতা অমিত শাহ’র পুত্র জয় শাহ’র ব্যবসায়ে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছিল একটি নিউজ পোর্টাল। সেই ওয়েবসাইটের বিরুদ্ধে মানহানির মামলা দায়ের করেছেন জয় শাহ। তারই শুনানিতে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্র বললেন, এটা ঘটনা, যে সংবাদমাধ্যমের একাংশ ভিত্তিহীন খবর পরিবেশন করে। অনেক সময়ই তা চরিত্রহননের সামিল হয়ে যায়। এমনকি আদালত অবমাননার পর্যায়ে চলে যায় কোনো কোনো খবর। এভাবে চলতে পারে না। তাই ভারতীয় সংবাদমাধ্যমকে আরও দায়িত্বশীল হতে হবে।

দীর্ঘদিন ধরে টেলিভিশন চ্যানেলে সংবাদকর্মী হিসেবে কাজ করছেন নির্মাল্য বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি মনে করছেন, আদালতের এই পর্যবেক্ষণ প্রকারান্তরে সংবাদমাধ্যমের ক্ষমতাকে খর্ব করছে। সাংবাদিকদের হাত-পা বেঁধে দিয়ে বলছে, এবার তুমি স্বাধীনভাবে কাজ করো। এটা বাঞ্ছনীয় নয়। সাংবাদিকের পূর্ণ পেশাগত স্বাধীনতা থাকা উচিত বলে নির্মাল্য মনে করেন।

যদিও ডয়চে ভেলের সঙ্গে কথা বলার সময় তিনি মানলেন, যে কখনও কখনও সংবাদমাধ্যম বাড়াবাড়ি করে ফেলে, যেটার নিয়ন্ত্রণ জরুরি। সাংবাদিকরা চাইলেই যা খুশি বলতে পারেন না। কিন্তু দায়িত্ববোধ দেখানোর প্রশ্নে যদি পরোক্ষে বিধি-নিষেধ আরোপিত হয়, তা হলে সেটা সমর্থনযোগ্য নয়।

নির্মাল্যর বক্তব্য, সাংবাদিকতা পেশা হিসেবে আলাদা, কারণ এর যেমন ক্ষমতা আছে, তেমনই দায়িত্বও আছে। সেই ক্ষমতা যদি নিয়ন্ত্রিত হয়, তা হলে দায়িত্ব পালনেও বাধা আসতে বাধ্য।

বিচারপতি মিশ্রর যদিও তার পর্যবেক্ষণ জানাতে গিয়ে পরিষ্কার বলেছেন, সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপের প্রশ্ন উঠছে না। বাকস্বাধীনতা, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা কোনোভাবেই খর্ব করা হবে না। কিন্তু সংবাদমাধ্যমকেই আরও দায়িত্বশীল হতে হবে।

কলকাতার আজকাল পত্রিকার ডেপুটি এডিটর রাজীব ঘোষও কিন্তু সুপ্রিম কোর্টের এই বক্তব্যের সঙ্গে সম্পূর্ণ একমত। ডয়চে ভেলেকে তিনি বললেন, প্রথমত প্রধান বিচারপতি সব সংবাদমাধ্যমের উদ্দেশে এ কথা বলেননি। বরং নির্দিষ্ট কিছু টিভি চ্যানেলের কথা বলেছেন, যাদের খবর করার, নিজেরা খবরে থাকার আতিশয্য বাড়াবাড়ির পর্যায়ে পৌঁছে যায়। এর পাশাপাশি শুরু হয়েছে মিডিয়া ট্রায়াল। সংবাদমাধ্যমই যেখানে নিয়ে নিচ্ছে বিচারকের ভূমিকা। কারও বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ ওঠার পর তাকে দোষী প্রমাণ করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ছে। অভিযুক্তের বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তুলতে সক্রিয় হয়ে উঠছে।

অভিজ্ঞ সাংবাদিক হিসেবে রাজীব ঘোষের মূল্যায়ন, গণতন্ত্রের চারটি স্তম্ভের মধ্যে সংবাদ মাধ্যমও একটি স্তম্ভ, এটা যেমন ঠিক, তেমনই বিচারবিভাগও আরেকটি স্বাধীন স্তম্ভ। সেখানে সংবাদমাধ্যমই যদি বিচারক হয়ে উঠতে চায়, তা হলে তা গণতন্ত্রের জন্যেও বিপজ্জনক। কাজেই কোথাও একটা স্বনিয়ন্ত্রণ থাকা দরকার। একটা লক্ষণ-রেখা থাকা দরকার, যা অতিক্রম করবেন না সাংবাদিকরা।

সূত্র: ডয়চে ভেলে বাংলা

ডিপি/

  • সর্বশেষ
  • পঠিত