ঢাকা, শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৩২ মিনিট আগে
শিরোনাম

রিপোর্টার থেকে সম্পাদক (পর্ব -১১)

  শাহজাহান সরদার

প্রকাশ : ০৩ ডিসেম্বর ২০১৯, ১২:১৫

রিপোর্টার থেকে সম্পাদক (পর্ব -১১)

[দেশের জনপ্রিয় দুটি পত্রিকার (যুগান্তর, বাংলাদেশ প্রতিদিন) জন্মের পেছনের ইতিহাস, কর্তৃপক্ষের চাপিয়ে দেয়া বিব্রতকর বিভিন্ন আদেশ নির্দেশ, হস্তক্ষেপ, পত্রিকা প্রকাশের ওয়াদা দিয়ে অন্য একটি জনপ্রিয় পত্রিকা থেকে নিয়ে এসে পত্রিকা না বের করে হাতজোড়ে ক্ষমা প্রার্থনা করে বিদায় দেয়া, পত্রিকা প্রকাশের পর কোন কোন কর্তৃপক্ষ কর্তৃক কিছু দিনের মধ্যেই ছাপা সংখ্যা কমিয়ে দিয়ে লাভ খোঁজা, ইচ্ছেমত সাংবাদিক-কর্মচারি ছাঁটাই করা সহ পত্রিকার অন্দর মহলের খবরা-খবর, রাজনৈতিক মোড় ঘুড়িয়ে দেয়া কিছু রিপোর্ট, সাংবাদিক ইউনিয়ন, ঢাকা রিপোটার্স ইউনিটির কিছু ঘটনা এবং মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ নিয়ে আমার এ বই ‘রিপোর্টার থেকে সম্পাদক’। জানতে পারবেন সংবাদপত্র জগতের অনেক অজানা ঘটনা, নেপথ্যের খবর।]

(পর্ব -১১)

শাহরিয়ার ফিচার বিভাগে একঝাঁক তরুণ নিয়ে আসেন। এখানে একটি কথা বলে রাখি আবু হাসান শাহরিয়ারকে আনতে আমার বেশ বেগ পেতে হয়েছে। তাকে আনার মূল উদ্যোক্তা ছিলেন আমার স্নেহস্পদ সাংবাদিক পীর হাবিবুর রহমান। তিনিই আমাকে তার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু শাহরিয়ারের ব্যাপারে আমি বাধাগ্রস্ত হই। তার সম্পর্কে আমার ধারণা ছিল না। অফিসের পুরানো এক ঊর্ধ্বতন সাংবাদিক বললেন, তাকে সামলানো কঠিন। কিন্তু কারো কোনো কথা না শুনে আমি তাকে আনার জন্য দৃঢ় ছিলাম। তাই তার এবং ফিচার বিভাগের নতুন কয়েকজনের নিয়োগের জন্য পত্রিকার এম ডি শামীম সাহেবের সহযোগিতা নিতে হয়েছিল। মেধাবী এবং আবেগী দুই মিলে শাহরিয়ার। আমি থাকাকালেই একবার সে পদত্যাগ করে, আবার আসে এবং আবার পদত্যাগে বাধ্য হয়। তার আসা-যাওয়ার পিছনে অন্যরা কালকাঠি নাড়লেও তার এক বইয়ে আমাকে নিয়ে কিছু কথা লেখা হয়। যা পুরোপুরি অসত্য। আর যুগান্তরে চাকরিকালীন শাহরিয়ার তার একটি বই উৎসর্গ করে আমার নামে। তার এ লেখাকে আমি গুরুত্ব দিইনি। এ কারণে বিভিন্ন সংবাদপত্রে তিনি চাকরি করেছেন। বারবার চাকরি ছেড়েছেন অথবা ছাড়তে হয়েছে। আর প্রতিবার তার কোনো না কোনো বইয়ে সে পত্রিকা বা প্রতিষ্ঠানের প্রধানের বিরুদ্ধে লেখালেখি নিয়মে পরিণত হয়েছিল। সম্পাদক গোলাম সারওয়ার, আবেদ খান, নাঈমুল ইসলাম খান তারা কেউই তার লেখনীর হাত থেকে মুক্তি পাননি।

ফিচার বিভাগ, রিপোর্টিং, ডেস্ক ছাড়াও বিভিন্ন বিভাগে প্রতিশ্র“তিশীল তরুণদের নিয়ে আসি। তারা সবাই এখন যুগান্তরে বা অন্য কোথাও ভাল অবস্থানে আছেন। এভাবে বিজ্ঞাপন, সার্কুলেশনসহ সব বিভাগেই আমরা লোক নিয়োগ করে ফেলি। ফলে সংকট কেটে যায়। পত্রিকা প্রকাশে কোনো সমস্যা থাকে না। আমরা এরই মধ্যে চট্টগ্রাম ও সিলেট সফর করি। সুধী-সমাবেশ এজেন্ট হকারদের সঙ্গে বৈঠক হয়। অসুস্থ শরীরেও মূসা সাহেব সফরে বের হন। ঢাকার পরই চট্টগ্রাম ও সিলেটে পত্রিকার প্রচার সংখ্যা বেশি। তাই প্রাথমিকভাবে দুস্থানেই মূসা সাহেব যান। বাকি যেসব স্থানে সুধী-সমাবেশ হয় সেগুলোতে আমি অংশ নিই। রাজধানীর পূর্বানী হোটেলে ঢাকার হকার্স সমিতি নেতৃবৃন্দ ও সুপারভাইজারদের মধ্যাহ্নভোজসহ সমাবেশ করি। যুগান্তরের মালিক বাবুল সাহেব আমাদের শুধু একটি কথাই বলেছেন পত্রিকার প্রচার যাতে না কমে। আর শূন্য স্থান যেন শূন্য না থাকে। ভাল অভিজ্ঞ লোকবল নিয়ে আসেন। এজন্য যা যা করা দরকার তা তিনি দেবেন। তিনি কথা রেখেছিলেন, আমরাও সফল হই। যে কারণে যুগান্তর টিকে গেছে। ভালভাবে টিকে গেছে। সময়মত সব পদক্ষেপ না নিতে পারলে, শূন্য স্থান পূরণ করতে না পারলে আর মালিক কর্তৃপক্ষ যথাযথভাবে উদ্যোগী না হলে যুগান্তরের ইতিহাস হয়তো আজ অন্যভাবে লেখা হতো। যুগান্তরের অগ্রযাত্রাকে সহায়তা করেছে আরেকটি বিষয়ও। তা হলো সারওয়ার সাহেবের নতুন পত্রিকা প্রকাশে বিলম্ব। ছয় মাসের মধ্যে তিনি নতুন পত্রিকা প্রকাশ করতে পারলে সমস্যা হলেও হতে পারতো। কিন্তু না, তার সমকাল বের করতে বেশ সময় চলে গেল। ততদিনে যুগান্তর আবার স্থায়ী ভিত গড়ে নিল। সমকাল বের হলেও তেমন কোনো সমস্যা হয়নি। মূসা সাহেবের নেতৃত্বে মান-অভিমানের মধ্যে যুগান্তর ভালভাবেই চলছে। মান অভিমান বললাম এ কারণে যে, ছয় মাসের মধ্যেই মূসা সাহেব অন্তত দু’বার পদত্যাগপত্র দাখিল করেণ।

আবার আমাদের অনুরোধে প্রত্যাহার করেন। আমাদের সবার শ্রদ্ধেয় মূসা ভাই। তিনি কিছু বললে আমাদের না-সূচক জবাব দেয়ার সুযোগ ছিল না। আর তিনিও আমাদের কথা ফেলতেন না। তাই পদত্যাগপত্র দিলেও আবার প্রত্যাহার করে নেন। প্রথম দফা পদত্যাগের সময় বাবুল সাহেব অফিসে এসে অনুরোধ করেন। তার মধ্যে একধরনের শিশুসুলভ সরলতাও ছিল। সাংবাদিক কর্মচারীদের অধিকার মর্যাদা রক্ষার বিষয়েও ছিলেন আপোসহীন। সব বিষয়ে আপোস করেননি। প্রতিবাদ জানান। আবার প্রতিষ্ঠানের স্বার্থ রক্ষার ব্যাপারেও ছিলেন দারুণ সচেতন। তার এ-ধরনের প্রতিবাদের কারণে সাংবাদিক কর্মচারীদের অনেক সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত হয়েছিল। অথচ এগুলো ন্যায্য ছিল, আগে বাস্তবায়ন হয়নি। মূসা সাহেব সম্পাদক থাকাকালে সে-রকম কিছু সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করেছিলেন। এর মধ্যে বেতন বোর্ড রোয়েদাদ (ওয়েজ বোর্ড) অন্যতম। সে সময়কার নতুন ওয়েজবোর্ড সারওয়ার ভাই বাস্তবায়ন করে যেতে পারেননি। হিসাব-নিকাশ চূড়ান্ত ছিল। কিন্তু বাস্তবায়িত হয়নি। জানা-জানি হয়ে গিয়েছিল অনেকে চলে যাবেন। তাই হয়তো ওয়েজ বোর্ড বাস্তবায়নে বিলম্ব ছিল। আমরা যোগদানের পর সাংবাদিক-কর্মচারীদের স্বার্থে প্রথম চ্যালেঞ্জ ওয়েজবোর্ড বাস্তবায়ন। আমার হাতে হিসাব-নিকাশের কাগজ এলো। পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে মূসা সাহেবের সঙ্গে আলাপ করি। তিনি বললেন, বাবুল সাহেবকে বিষয়টি জানাতে। যদি ওয়েজবোর্ড বাস্তবায়ন না করা যায় তাহলে মূসা ভাইয়ের সম্মান থাকে না। সাংবাদিক-কর্মচারীরাও আস্থা হারাবে। বাবুল সাহেবকে বললাম, তিনি সায় দিলেন। বাস্তবায়ন হলো ওয়েজবোর্ড। কিছুদিন পরই ঈদ। ঈদের আগে বোনাস। তৈরি হলো বোনাস শিট। আগে যুগান্তরে মফস্বল অর্থাৎ জেলা ও উপজেলা সংবাদদাতারা বোনাস পেতেন না। মূসা সাহেব তাদের বোনাসের অর্ন্তভুক্ত করেন। এতে কর্তৃপক্ষের আপত্তি এলো।

মূসা সাহেব বললেন, ঢাকার সাংবাদিক কর্মচারীরা পেলে জেলা-উপজেলার তারা পাবে না কেন? দিতে হবে। কর্তৃপক্ষের স্বাক্ষরের বিলম্ব হলে সাফ জানিয়ে দেন, তাদের বোনাস দেয়া না হলে তার বেতন থেকে হলেও বোনাস দিবেন। তিনি বেতন নেবেন না। মূসা ভাইয়ের বেতন যা ছিল সেই বোনাসের অংকের পরিমাণ ছিল এর চাইতে কম। পরে যুগান্তর কর্তৃপক্ষ জেলা-উপজেলা সংবাদদাতাদের বোনাস দিতে রাজি হন। এই হলেন মূসা সাহেব। কিন্তু তিনিও বেশিদিন থাকলেন না। তৃতীয় দফা পদত্যাগপত্র দেয়ার পর কর্তৃপক্ষ তা গ্রহণ করেন। বাবুল সাহেবের কথা হলো, সম্পাদক যদি ৯ মাসে তিন বার পদত্যাগপত্র দাখিল করেন তাহলে কাজ হবে কীভাবে? পদত্যাগপত্র গ্রহণের আগে আমাকে তার অফিসে নিয়ে কথা বলেন। এরপর মূসা সাহেবকে আমি নিয়ে যাই। আমার উপস্থিতিতে দু’জনের মধ্যে অনেক আলোচনা হলো।

চলবে...

বইটি পড়তে হলে সপ্তাহের রবি, মঙ্গল, বৃহস্পতিবার চোখ রাখুন ‘বাংলাদেশ জার্নাল’ অনলাইনে।

বইটি প্রকাশ করেছে উৎস প্রকাশন

আজিজ সুপার মার্কেট (তৃতীয় তলা), ঢাকা।

বইটি সংগ্রহ করতে চাইলে ক্লিক করুন

  • সর্বশেষ
  • পঠিত